সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৪ কার্তিক ১৪৩২ ।। ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
আবারও ‍খুলে দেওয়া হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত স্বাধীন দেশে থেকেও আমরা ছিলাম পরাধীন: ফয়জুল করীম নোয়াখালীতে কোরআন তালিমে হামলার প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল ইসরায়েলকে কঠিন পরিণতির হুঁশিয়ারি ইয়েমেনের  সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানী/ভাতা পুনঃনির্ধারণ: অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন এবার এক টাকা কেজি গরুর গোশত বিক্রির ঘোষণা এমপি প্রার্থীর! ‘দায়সারা গোছের তামাশার নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না’ নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজন করার উদ্যোগ নিন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল শায়খ আহমাদুল্লাহর আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও তরুণ প্রজন্মের দিকভ্রান্তি

সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও তরুণ প্রজন্মের দিকভ্রান্তি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

||হামযাহ আল মাহদী||

আজকের সমাজে আমরা এমন এক সময় অতিক্রম করছি, যখন নৈতিকতা যেন বিলুপ্তির পথে। চরিত্র, আদর্শ ও মানবিকতার জায়গায় জায়গায় দখল নিয়েছে স্বার্থ, ভোগবাদ ও বিকৃত সংস্কৃতি। তরুণ প্রজন্মযারা জাতির ভবিষ্যৎ, তারাই আজ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এই নৈতিক অবক্ষয়ের মহামারিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অশালীন কনটেন্ট, বিনোদনের নামে অনৈতিক সংস্কৃতি, মাদক, পর্নোগ্রাফি, অবাধ মেলামেশা, এবং ধর্মীয় শিক্ষার অভাব তরুণদের চিন্তা-চেতনায় গভীর প্রভাব ফেলছে।

এই অবস্থার কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যায়, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—তিনটি স্তরেই নৈতিক শিক্ষার চর্চা দুর্বল হয়ে পড়েছে। পিতা-মাতা সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা ও আদর্শ জীবনবোধে বড় করার চেষ্টার পরিবর্তে শুধুই দুনিয়াবি সাফল্যের প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিচ্ছেন। সমাজে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে তারকা, গায়ক-অভিনেতা, ইউটিউবারযাদের জীবনে মূল্যবোধের কোনো স্থান নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নৈতিকতা ও চরিত্র গঠনের পাঠ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ, আমাদের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আজ হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধ অনুকরণ ও আত্মবিস্মৃতির অন্ধকারে।

কিন্তু ইসলাম এই সংকটের স্পষ্ট সমাধান দিয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন—

“قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا”

অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি নিজের আত্মাকে পবিত্র করেছে, সে সফল হয়েছে; আর যে একে কলুষিত করেছে, সে ব্যর্থ হয়েছে।” (সূরা আশ-শামস, ৯-১০)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

“إنما بعثت لأتمم مكارم الأخلاق”

অর্থাৎ, “আমি প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দান করার জন্য।” (বুখারী)

ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, নৈতিকতা শুধু ব্যক্তিগত আচরণের বিষয় নয়—এটি সমাজ নির্মাণের ভিত্তি। যদি নৈতিকতা হারিয়ে যায়, তবে সমাজে আইন, শাস্তি বা প্রতিষ্ঠান দিয়েও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই ইসলাম নৈতিকতাকে ঈমানের অঙ্গ হিসেবে গণ্য করেছে। রাসূল ﷺ আরও বলেন—

“أكمل المؤمنين إيماناً أحسنهم خلقاً”

অর্থাৎ, “ঈমানদারদের মধ্যে তারাই শ্রেষ্ঠ, যাদের চরিত্র সর্বোত্তম।” (তিরমিজি)

এই নৈতিক অবক্ষয় রোধে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পরিবার ও সমাজের। পিতা-মাতা যদি নিজেদের আদর্শ দিয়ে সন্তানদের গড়ে তোলেন, ঘরে যদি আল্লাহভীতি ও নবীপ্রেমের বাতাবরণ তৈরি হয়, তবে বাইরের অশুভ প্রভাব অনেকাংশে প্রশমিত হবে। তরুণদের প্রতি ইসলাম যে সম্মান ও দায়িত্ব দিয়েছে তা অসীম। আল্লাহ তাআলা কুরআনে তরুণ আশহাবে কাহফের কথা উল্লেখ করে বলেছেন,

“إِنَّهُمْ فِتْيَةٌ آمَنُوا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى”

অর্থাৎ, “তারা ছিল কিছু তরুণ, যারা তাদের প্রভুর প্রতি ঈমান এনেছিল, আর আমি তাদেরকে পথনির্দেশে দৃঢ় করেছিলাম।” (সূরা কাহফ, ১৩)

তরুণ বয়স হলো আদর্শ গঠনের সময়। যদি এই বয়সেই নৈতিকতা ও আল্লাহভীতির ভিত্তি স্থাপন করা যায়, তবে পুরো জীবনটা হবে আলোয় ভরপুর। এজন্য ইসলামী দৃষ্টিতে শিক্ষা শুধু জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম নয়, বরং চরিত্র গঠনের প্রশিক্ষণও। রাসূল ﷺ বলেছেন,

“من سلك طريقاً يلتمس فيه علماً سهل الله له طريقاً إلى الجنة”

অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের পথে চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” (মুসলিম)

এই জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত আছে নৈতিক জ্ঞান, আত্মসংযম ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য।

আমাদের সমাজে আজ নৈতিকতা শেখানোর পরিবর্তে আত্মপ্রদর্শন, প্রতিযোগিতা ও ভোগের সংস্কৃতি শেখানো হচ্ছে। ইসলাম এই ভোগবাদী মানসিকতার সরাসরি বিরোধিতা করে। রাসূল ﷺ বলেছেন,

“ازهد في الدنيا يحبك الله، وازهد فيما عند الناس يحبك الناس”

অর্থাৎ, “দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত থাকো, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন; মানুষের হাতে যা আছে তাতে অনাসক্ত থাকো, মানুষও তোমাকে ভালোবাসবে।” (ইবনু মাজাহ)

তোহফাতুল ইসলাম ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বিশ্বাস করে—নৈতিকতা পুনর্জাগরণ ছাড়া প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের ফাউন্ডেশন শিক্ষা, দাওয়াহ, ও সমাজ সংস্কারমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নৈতিক চেতনা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। ইসলামভিত্তিক শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের চর্চা বাড়াতে হবে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত।

আমাদের প্রত্যেকের উচিত—নিজ নিজ জায়গা থেকে নৈতিক পুনর্জাগরণের অগ্রদূত হওয়া। কারণ একটি সৎ মানুষ গড়ে তুলতে পারলে একটি সমাজ বদলে যেতে পারে।

আসুন, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করি, নবী করিম ﷺ-এর চরিত্রকে জীবনের আদর্শ বানাই এবং তরুণ সমাজকে সত্য, নৈতিকতা ও আল্লাহভীতির পথে আহ্বান করি। তবেই সমাজে ফিরে আসবে ন্যায়, শান্তি ও কল্যাণের সুবাতাস।

লেখক : ভাইস চেয়ারম্যান, তোহফাতুল ইসলাম ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

এলএইস/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ