বিশেষ প্রতিনিধি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ইতোমধ্যে ঘোষণা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুতে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে পিছপা হবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে রাজনীতি এখন দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক শিবিরের নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপি এবং আরেক শিবিরের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী। দীর্ঘ সময় একসঙ্গে পথ চললেও বিএনপি ও জামায়াত এখন পুরোপুরি দুই মেরুতে অবস্থান করছে। দুই দলই নিজেদের পক্ষে অন্যদের টানতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।
শুরু থেকেই ইসলামি দলগুলোর কদর দুই শিবিরেই রয়েছে। বিএনপি প্রায় সব দলকেই নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করেছে। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ে জামায়াতে ইসলামী বেশি সফল হয়েছে। বেশির ভাগ ইসলামি দল এখন জামায়াতের সঙ্গে সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছে। ইসলামি দলগুলোর বড় একটি অংশ এখন জামায়াতের সঙ্গে অভিন্ন সুরে কথা বলছে।
এতদিন ইসলামি দলগুলোর অবস্থান দোদুল্যমান থাকলেও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং জুলাই সনদ ইস্যুতে ইসলামি দলগুলো জামায়াতের সঙ্গে অভিন্ন সুরে কথা বলছে। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বিএনপি জোটের সঙ্গে তাদের অবস্থানের কথা পরিষ্কার করলেও ইদানীং শোনা যাচ্ছে ভিন্ন সুর। শেষ পর্যন্ত জমিয়তও অন্যান্য ইসলামি দলের সঙ্গে জামায়াত জোটে আসতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়।
চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শুরু থেকেই জামায়াতে ইসলামীসহ বৃহৎ জোট বা সমঝোতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত মজলিসের অবস্থান এতদিন অনেকটা মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত দুই খেলাফতই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পর জমিয়ত ছাড়া প্রায় সবার বক্তব্যের টোনই জামায়াতের সঙ্গে মিলে গেছে। তবে জুলাই সনদের আলোকে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে জোরালো অবস্থান থাকলেও পিআর ইস্যুতে দুই খেলাফতের অবস্থান ততটা জোরালো না। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভাষ্য অভিন্ন। দীর্ঘদিনের বৈরিতা ভুলে দল দুটি এখন প্রায় সব ক্ষেত্রেই অভিন্ন সুরে কথা বলছে।
সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি জুলাই সনদ বিষয়ে মতভিন্নতা কমিয়ে আনতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে বৈঠক থেকে কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি। অনানুষ্ঠানিক ওই বৈঠকের আগে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, এবি পার্টি এবং খেলাফত মজলিস একটি বৈঠক করে। তাতে জুলাই সনদ ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না– এমন মনোভাব তুলে ধরে দলগুলো। প্রয়োজনে সনদের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের কথাও বলা হয় বৈঠকে।
সাত দলের ওই বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ। ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, গণঅধিকারের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের এবং এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াত নেতা ডা. আব্দুল মুহাম্মদ তাহের সরাসরি ওই বৈঠকের কথা স্বীকার না করলেও গণমাধ্যমকে বলেছেন, পিআর এবং জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন চায় এমন দলগুলোর সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ এবং আলোচনা চলছে।
সাত দলের বৈঠকে আলোচনা হয়, মতপার্থক্য থাকলেও সনদের আইনি ভিত্তি, সনদের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সবাই একমত। বৈঠকে বলা হয়, আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে নির্বাচনে আপত্তি নেই তাদের। বিএনপি যেন তাদের নির্বাচনবিরোধী তকমা দিতে না পারে সেজন্য দলগুলো প্রকাশ্যে নির্বাচনের বিরোধিতা করবে না বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। বরং তারা জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের বাকি আরও কয়েক মাস। অন্তত ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণার আগে কে কোন জোট বা বলয়ে যাচ্ছেন সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। বাহ্যিকভাবে একসঙ্গে বসাবসি হলেও শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে নির্বাচনে যাবে এমনটার সম্ভাবনা কম। তবে সব প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে ইসলামি ও সমমনা দলগুলো এক জোট হতে পারলে ভোটের মাঠে বিএনপির শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা আবির্ভূত হতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
এমএইচ/