রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


পাঠাগারের কিতাবের যত্নে যেসব বিষয় গুরুত্ব দিতেন আকারিবগণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।। আবু সাঈদ।।

পাবলিক লাইব্রেরির কিতাব সংরক্ষণের প্রতি উলামায়ে কেরাম অনেক জোর দিয়েছেন। কিতাব নিয়ে ফেরত না দেওয়াকে তারা চুরি জ্ঞান করতেন। অনেক ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে এসেছে, কিতাব চুরি করা হারাম।

এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, অনেকে এমন কিছু বিষয়কে সাধারণ মনে করে, যা আদৌ সাধারণ নয়। বরং এই বিষয়ে শিথিলতা করা বড় অন্যায়। যেমন ছাত্ররা কিতাব ধার নিয়ে ফেরত না দেওয়া…! এসব বিষয় হালকা মনে হলেও মোটেই বৈধ নয়।

যারা কিতাব ওয়াকফ করতেন, কিতাব সংরক্ষণের স্বার্থে কিছু নিয়মনীতিও তারা বেঁধে দিতেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম তাজ উদ্দিন সুবকী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘মুঈদুন নিয়াম’ গ্রন্থে বলেন, সাধারণত ওয়াকফকারীগ‌ণ কিতাবাদি সংরক্ষণের স্বার্থে ব্যবহারের কিছু নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করে দেন। যেমন, কিতাব নেওয়ার জন্য সমমূল্যের কোন বস্তু বন্ধক রাখতে হবে। এরূপ শর্তারোপ করা বৈধ। এক্ষেত্রে পরিচালক কাউকে বন্ধক ছাড়া বই দিতে পারবে না। তবে বন্ধকি জিনিস থেকে লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ‌ও কোন ধরনের ফায়দা গ্রহণ করতে পারবে না। কাউকে ফায়দা গ্রহণের সুযোগ‌ও দিতে পারবে না।

ইমাম ইবনে জামাআহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তার অমর গ্রন্থ তাজকিরাতুস সামী’ ওয়াল মুতাকাল্লিম-এ বলেন, কারো কিতাব কেনার সামর্থ্য থাকলে অনুলিপি করার অনুমতি নেই। যদি কিতাব কেনার সামর্থ্য না থাকে, তবে অনুলিপিকারদের মাধ্যমে অনুলিপি করিয়ে নেবে। তাও সম্ভব না হলে নিজে অনুলিপি করার অবকাশ রয়েছে।

ইবনে জামাআহ রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, যখন পাঠাগারের কোন কিতাব অনুলিপি করতে চাইবে, কিতাবটি জমিনের উপর খুলে বসবে না। বরং দুইদিকে দুইটি জিনিস দিয়ে নিবে। অথবা কিতাবটি রেহেলে রাখবে। অত্যন্ত যত্নের সাথে পৃষ্ঠা উল্টাবে। যেন কিতাবের পাতা নষ্ট না হয়। বাঁধাইও যেন দুর্বল না হয়।

তিনি আরো বলেন, কারো থেকে কিতাব নিলে কিতাবদাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। কিতাব যত্নের সাথে রাখবে। এতে কোন পাদটীকা কাটবে না। কোন ভুল নজরে পড়লে সম্পাদনাও করবে না। প্রয়োজন শেষ হলে দ্রুত ফিরিয়ে দিবে। কর্তৃপক্ষের ফেরত চাওয়ার অপেক্ষা করবে না। কিতাবকে খাতায় পরিণত করবে না। বানাবে না বিশ্রামের বালিশ। গরমের সময় হাতপাখা রূপেও ব্যবহার করবে না। ক্লান্তি ঘোঁচাতে দিবে না হেলান‌ও।

মাকতাবার কিতাব-হলে বসে যেমন অধ্যয়নের অবকাশ আছে, বাড়ি নিয়েও পড়ার অনুমতি রয়েছে। তবে অবশ্যই মাকতাবার নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। যিনি মাকতাবার পরিচালক হবেন, তাকে অবশ্যই কিতাবাদির তালিকা তৈরি করে রাখতে হবে। সুশৃংখলভাবে সুদৃশ্য আলমারিতে সাজিয়ে রাখতে হবে। কীট-সমস্যার সমাধানে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। পাঠকদের অধ্যয়নের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। মাকতাবার বাইরে কাউকে কিতাব দিতে হলে নির্দিষ্ট নিয়ম মান্য করতে হবে। এভাবে পাঠক-পরিচালক সবাই মিলে যথাযথভাবে আমানতের হেফাজত করতে হবে। তবেই মাকতাবা ব্যবস্থা টিকে থাকবে যুগযুগান্তর ধরে।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ