শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


মাওলানা শাহাদত হোসাইন নদভী চলে গেলেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী।।

এক.

ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। কী সত্য এই মুত্যু। কখন কোথায় কে মৃত্যুবরণ করবেন—কেউ বলতে পারেন না। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো বয়সের যে কারো মৃত্যু হতে পারে। আগাম কোনো আভাস ছাড়া। পূর্ব কোনো নোটিশ ছাড়া। আমি এবং শাহাদত ভাই একসঙ্গে দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় পড়েছি। তিনি পড়েছেন আদব বিভাগে আর আমি শরীআ বিভাগে। কিন্তু ওখানে আমাদের চলাফেরা, উঠাবসা একসঙ্গেই হতো। মাদরাসা ছুটি হলে প্রবাসের বিরহকালও আমরা একসঙ্গেই কাটাতাম। হযরত মাওলানার বিরল সান্নিধ্যে সময় কাটাতে পারার মহাসৌভাগ্যের অনুভূতিও একসঙ্গেই আমরা আলোচনা করতাম।

তিনি সীমাহীন বিনয়ী। হিংসা ও লৌকিকতা তার কাছে কখনও ভিড়তে পারে নি। সারাক্ষণ প্রাণোচ্ছল থাকতেন। আর ভবিষ্যত-কেন্দ্রিক সজীব সজীব স্বপ্ন দেখতেন। অন্যকে সহযোগিতা করার প্রবণতা ছিলো হৃদয় জয় করার মতো। কদিন আগেও তিনি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন আমি যেনো পিএইচডিটা করে ফেলি!
আহ, শাহাদত ভাই! আপনি চলে গেলেন! আর আপনার কণ্ঠ শুনতে পারবো না!

দুই.

কদিন আগে একসঙ্গে আমরা প্রোগ্রাম করেছি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম কুমিরা ক্যাম্পাসে। যাওয়ার কথা ছিলো একসঙ্গেই। জল্পনা কল্পনা চলছিলো বাসে না মাইক্রোতে। তিনি ছিলেন ট্রেনের পক্ষে। আমরা ভাবছিলাম তার সঙ্গ মিস করা ঠিক হবে না। ট্রেনেই যাবো। পরে তাও আর হয়ে ওঠেনি। তিনি একদিন আগেই চলে গেলেন! বললেন, হাটহাজারী যাবো! শাইখাইনের কবর যিয়ারত করবো! আরও কিছু প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে যাবো! তাই আমি একটু আগেই চলে যাই, আপনারা আসুন! দেখা হবে সেমিনার হলে!

তিন.

আহ! চট্টগ্রাম আগে চলে গেছেন কেনো, এখন বুঝেছি! আপনি আকাশের সবুজ ডাক পেয়েছিলেন মনে হয়! নইলে কেনো এমন ব্যাকুল হয়ে একদিন আগেই ছুটে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামে, প্রিয়সাক্ষাতে অস্থিরচিত্ত হয়ে?!

চার.

আপনার ছেলের সাথে চট্টগ্রামে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ছেলেটার হাস্যোজ্জ্বল মুখ আমার চোখের সামনে ভাসছে। ও কি জানতো, ওর ওই হাসিমুখ অল্প কদিন পর পিতৃ-বিরহে অশ্রুমেঘে আঁধারে ছেয়ে যাবে?!
জীবন আসলে এমনই!

পাঁচ.

আপনি চিরতরুণ ছিলেন। সব সময় ছাত্র থাকতে পছন্দ করতেন। কতো জায়গায় পড়িয়েছেন। কতো মসজিদ আবাদ করেছেন। কতো মানুষের আঁধারে আলো ফুটিয়েছেন। আপনাকে খুব মনে পড়ছে। আপনাকে আর দেখবো না ভাবলেই—চোখ আঁধার হয়ে আসে।

ছয়.
আপনি পিএইচডি সনদ হাতে নিতে পারেন নি, তো কী হয়েছে? এখন কবরে শুয়ে শুয়ে আরাম করুন! খোলা প্রশস্ত খিড়কি দিয়ে জান্নাতের নায-নেয়ামত দেখে চলুন! কাউসারের পাড়ে আবে কাউসারের পেয়ালাটা যখন তুলে দেবেন খোদ আল্লাহর রাসূল আপনার হাতে, তখন শতো পিএইডির ঠুনকো সনদ ম্লান হয়ে যাবে!

সাত.

আল্লাহ আপনার কবরকে নূরে রহমতে পূর্ণ করে দিন! আপনার চিন্তা-দর্শনের ধারক ও বাহক বানান আপনার সন্তানকে! আপনার বিরহব্যথায় যারা জর্জরিত, তাদের বুকে বয়ে যাক প্রশান্তির হাওয়া!

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ