শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


আদর্শ সমাজ গঠনে রাসুল সা. প্রতিষ্ঠিত হিলফুল ফুজুলের তাৎপর্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুর রশীদ।।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. ছিলেন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। যিনি মানুষের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সর্বদা কাজ করেছেন৷ তিনি যেমনি ছিলেন দয়ালু ও অতিব কোমল হৃদয়ের অধিকারী, তেমনি ছিলেন জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধী৷ তিনি ছিলেন মানবজাতির পথপ্রদর্শক এবং তাঁর জীবন জুড়ে রয়েছে মানবজাতির জন্য অনুপম আদর্শ৷ একমাত্র তাঁর আদর্শে একটি জাতি সভ্য ও সফল হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম৷

রাসূল সা. এর জীবনের এমন একটি কাজ রয়েছে যা আজও মানবজাতিকে শান্তির পথ দেখিয়ে আসছে৷ যার নাম 'হিলফুল ফুজুল' বা শান্তিসংঘ৷ মাত্র ২৫ বছর বয়সে, নবুয়তপ্রাপ্তির ১৫ বছর পূর্বে তিনি এ কাজটি করেছিলেন৷ রাসূল সা. আরব সমাজের অনৈতিকতা, শোষণ ও নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে তাঁর সমবয়সী কিছু যুবককে নিয়ে এই 'হিলফুল ফুজুল' বা শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ এ সংঘের প্রতিটি কর্মসূচি প্রতিটি যুবসমাজের জন্য শিক্ষনীয়৷ একটি আদর্শ সমাজ গঠনে বর্তমান 'হিলফুল ফুজুল'-এর নীতিমালা প্রয়োগ খুবই জরুরী ৷

'হিলফুল ফুজুল'-এর নীতিমালা বর্তমান সমাজে প্রয়োগের মাধ্যমে যেভাবে আদর্শ সমাজ গঠন করা যায়—

মজলুম ও অসহায়দের সাহায্য করা: সমাজে নানা প্রকৃতির মানুষের বসবাস একটি প্রাকৃতিক বিষয়৷ ধনী-গরিব, বড়-ছোট ও সাধা-কালো বিভিন্ন স্বভাবের মানুষ একটি সমাজে জীবন কালাতিপাত করে৷ তাই মাঝে মাঝে গরিবরা ধনীদের কর্তৃক শোষিত হয়, ছোটরা বড়দের কর্তৃক শাসিত হয় এবং কালো মানুষ সাধা মানুষ কর্তৃক হেয় প্রতিপন্নতার পাত্র হয়৷ অসহায় মানুষের অবস্থান চরম অসহায়ত্বে নিমজ্জিত হয় এবং সমাজে জালেমদের কর্তৃক সাধারণ মানুষ জুলুমের শিকার হয়৷ সুতরাং, সমাজের এই অপনীতি রোধ করতে হলে জালেমদের জুলুম রুকতে এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে একটি 'হিলফুল ফুজুল'-এর মত যুবকদের নিয়ে শক্তিশালী ন্যায়নীতি সংঘ প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷

যারা সমাজের সর্বপ্রকার অন্যায় বন্ধে নিজেদের উৎসর্গ করবে৷ অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে এবং সামাজিক শৃঙ্খলতার কাজে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজনীয়তা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়৷ তাই এর জন্য অর্থনৈতিক 'কর্জে হাসানা' ফান্ড প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য৷

সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা: সমাজে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় সমস্যা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক ৷ তবে সমস্যা সমাধানের বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা থাকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ সমাজে কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যারা সমস্যাকে আরো জটিলতার রূপ দিতে পছন্দ করে; ফলে সমস্যা আরো ভয়ঙ্কর রূপ নেই ৷ এনটা কোনো ধরনের কাম্য নয় ৷ যার বা যাদের সামনে উচ্চশৃঙ্খলতা দেখা দিবে, সাথে সাথে তাদের উচিত শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমস্যা নিরসনে এগিয়ে আসা ৷ সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সমাজের গণ্যমান্য মানুষ, মেম্বার ও চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হওয়া উচিত ৷ এর বাইরেও যদি এমন একটি শান্তি সংঘ প্রতিষ্ঠা করা যায়, যা সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম ৷ তবেই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব ৷

বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে মৈত্রী ও প্রীতির সম্পর্ক স্থাপন করা: একটি সমাজের পাশাপাশি আরো অন্যান্য সমাজের বসবাস থাকে এবং এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকার মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি৷ যদি মৈত্রী ও সম্প্রীতি গড়ে তোলা যায়, তাহলে যে কোনো প্রকার উদ্যোগ নেওয়া, কর্মসূচি গ্রহণ করা ও প্রয়োজনীয় কোনো অভিযানে বের হওয়া অনেকটাই সহজ হবে ৷ ফলে একটি সফল শক্তিতে পরিণত হবে। এ মৈত্রী ও সম্প্রীতি গড়ে তোলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে— এর মধ্যে বিবাহ বন্ধন একটি অন্যতম সফল মাধ্যম৷

পথিক ও মুসাফিরের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বিভিন্ন সমাজ বা এলাকা অতিক্রম করে যার যার নির্দিষ্ট গন্তব্য পানে ছুটে চলে৷ পথিমধ্যে তাদের বিভিন্ন স্থানে বিরতি গ্রহণ করতে হয় ৷ মুসাফির ব্যক্তিগণ মাঝখানে নামায ও খাবারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে বিরতি গ্রহণ করে৷ তাই তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উক্ত নির্দিষ্ট স্থানের বাসিন্দাদের উপর কর্তব্য৷ এছাড়াও পথহারা পথিকের সঠিক স্থান দেখিয়ে দেওয়াও অত্যন্ত অপরিহার্য৷ সুতরাং, এমন একটি সমাজ গঠনে 'হিলফুল ফুজুল'-এর মতো একটি শান্তিসংঘের দাবিদার৷

কোনো জালেমকে মক্কায় প্রবেশ করতে না দেয়া এবং দুষ্কৃতকারীদের অন্যায় আগ্রাসন প্রতিরোধ করা: সাধারণত এই পয়েন্টে মক্কার কথা আসলেও প্রতিটি স্থানে এর ব্যবহার গুরুত্বের দাবিদার৷ যেমন- প্রতিটি মসজিদ ও মাদ্রাসায় কোনো জালেমকে প্রবেশ করতে না দেওয়া।

অর্থাৎ- ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো অসৎ ও জালেম ব্যক্তিকে পরিচালনার দায়িত্বে ক্ষমতার আসনে সমাসীন না করা৷ দূর্ভাগ্যবশত বর্তমান পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখায় যায় যে, প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অসৎ ও জালেমদের পদচারণা অত্যধিক৷ অপরদিকে বিভিন্ন দুষ্কৃতকারীদের বসবাস থাকে প্রতিটি সমাজে৷ তাই তাদের সর্বপ্রকার অহেতুক আচরণের দাঁত ভাঙ্গা জবাবের ব্যবস্থা করা আবশ্যক ৷ এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে একটি শক্তিশালী শান্তিসংঘ অপরিহার্য৷

সর্বোপরি একটি শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারি— প্রথমত, সমাজের একটিভ যুবকদের বাঁচায় করা ৷ দ্বিতীয়ত, সব যুবকদের একটিভ রাখতে সাংগঠনিক কার্যকরী ভূমিকা পালন করা ৷ তৃতীয়ত, সব যুবকদের নিয়ে একটি সোশাল সাইট থাকা এবং সেখানে সমাজের নানা বিষয় তুলে ধরা ও সমস্যা নিরসনে সকলে মিলে সরাসরি তার পদক্ষেপ গ্রহণ করা ৷ চতুর্থত, উক্ত সংঘের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক 'কর্জে হাসানা' ফান্ড থাকা চাই ৷ উক্ত শান্তিসংঘের মাধ্যমে সামাজ কল্যাণমূখী বিভিন্ন উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করা ইত্যাদি ৷

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন মানুষের বিচরণ মহাকাশে৷ কিন্তু আজও মানুষের জীবনে শান্তি নেই৷ দূর্নীতি, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, খুন, ছিনতায় ও নারী নির্যাতন ইত্যাদি মানুষের জীবনকে অস্থির করে তুলছে ৷ জবরদখল, জালিয়াতি, শ্রমিকের পাওনা অনাদায়, আত্মসাৎ ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড এখন নিত্যদিনের খবর৷ পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতীর সয়লাবে ভেসে যাচ্ছে বর্তমান যুব সমাজ৷ যাদের হাতেই ধ্বংস হত সমাজের অন্যায়; আজ তাদের হাতেই ধ্বংস হচ্ছে প্রতিটি সমাজ৷ তাই রাসূল সা.-এর আদর্শের প্রতি যুবকদের ফিরে আসতে হবে৷ তাঁর প্রতিষ্ঠিত 'হিলফুল ফুজুল'-এর আলোকে আদর্শ সমাজ গঠনে প্রতিটি যুবককে আত্মনিয়োগ করতে হবে ৷ আল্লাহ তা'য়ালা রাসূল সা.-এর সফল শান্তিসংঘের কর্মসূচি প্রতিটি সমাজে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজের অন্যায়-অনাচার দূর করার পাশাপাশি শান্তি প্রতিষ্ঠা করার তৌফিক দান করুক ৷ আমিন !

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ