শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


প্রিয় শিক্ষক মাদানি রহ.-এর ওপর ফিদা ছিলেন তিনি: মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

‘কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ. ওস্তাদ মাদানী রহ.-এর ওপর ফানা ছিলেন। তিনি দরসে মাদানি রহ.-এর মতোই তাকরির  তুলে ধরতেন। বলা হয় তিনি মাদানী পাগল ছিলেন, তার উপর মাদানীয়াত গালেব ছিল’।

শায়খুল হাদিস আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহ. বর্ণাঢ্য জীবন চর্চা ও গবেষণা সপ্তাহ- ২০২১ উপলক্ষ্যে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলাম ২৪. কম আয়োজিত বিশেষ লাইভ অনুষ্ঠান ‘আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহ.; দেওবন্দিয়াত ও আল্লামা মাদানী রহ. এর চিন্তাধারা’য় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন।

অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন আওয়ার ইসলাম সম্পাদক মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব।

অনুষ্ঠানে মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন বলেন, ‘মাদানিয়াত ও থানবিয়াত বললে অনেকে এর মাঝে ফেরকাবাজি খোঁজে। আসলে আশরাফ আলী থানবি রহ. ও হুসাইন অঅহমদ মাদানি রহ. এর মাঝে চিন্তা-চেতনাগত কোন পার্থক্য ছিল না । কর্মগত কিছু পার্থক্য ছিল। মাদানী রহ. সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, থানভী রহ.সরাসরি যুক্ত ছিলেন না’।

তিনি বলেন, থানভী রহ. মনে করতেন রাজনীতি জরুরি; কিন্তু ওলামায়ে কেরাম তাদেরকে এভাবে গড়ে তুলবেন। সরকারি কর্মচারি যারা রাজনীতি করেন তারা ওলামায়ে কেরামের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন, পরামর্শ নেবেন। তিনি রাজনীতিকে কখনো অস্বীকার করতে না।

থানভী রহ. ও মাদানী রহ.-এর মাঝে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। এমনও ঘটনা রয়েছে, কেউ হয়তোবা মাদানী রহ.-এর কাছে বায়াত গ্রহণ করতে গিয়েছেন, তিনি তাকে থানভী রহ.-এর কাছে বায়াতের জন্য পাঠিয়েছেন; আবার কেউ থানভী রহ.- এর কাছে বায়াত গ্রহণ করেছেন তিনি তাকে মাদানি রহ.-এর কাছে পাঠিয়েছেন। এরপর দু’জনে মিলে সমন্বয় করেছেন, একজন বলেছেন আপনি বায়াত করুন, আমি আমল দিব। কত সুন্দর সমন্বয়।

বর্তমানে আমাদের দেশে দেখা যায় যারা থানভী হালকার তারাও রাজনীতি করছে না আবার যারা মাদানী হালকার তারাও রাজনীতি করছেন। আমল গতভাবে আমাদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।

মাদানী রহ. -এর যে বিষয়টি কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ.- এর সাথে সম্পৃক্ত তা হলো তিনি মাদানী রহ.-এর পাগল ছিলেন। মাদানি, থানভী এসবের পার্থক্য তার মাঝে ছিল না। তবে তিনি তার ওস্তাদের ফানা ফিশশায়েখ সাগরেদ ছিলেন।

দুনিয়াতে বড়দের এরকম অনেক সাগরেদ আছেন যারা ফানা ফিশশায়েখ। যেমন আল্লামা রুমি রহ. তার ওস্তাদ শামসে তিবরিজ-এর ব্যাপারে ফানা ফিশশায়েখ ছিলেন, ইবনে কাইয়ুম রহ. ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর জন্য ফানা ছিলেন। কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রাহ. ওস্তাদ মাদানী রহ.-এর ওপর ফানা ছিলেন। তিনি দরসে মাদানি রহ.-এর মতোই তাকরির  তুলে ধরতেন। বলা হয় যে তিনি মাদানী পাগল তার উপর মাদানীয়াত গালেব।

আসলে মাদানিয়া বলতে কোন ফেরকাবাজি নয় এটা বুঝতে হবে। আকাবিরে দেওবন্দের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাধাসিধে জীন্দেগী আমরা দেখেছি কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ. মাঝে। তার আলোচনা ও কাজে-কর্মে আমরা দেখেছি পূর্ণ ভারসাম্য।

বাতিলের ব্যাপারে কোন আপোষ না করা, ওলামায়ে কেরামের পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান, কোন হিংসা-বিদ্বেষ না ছড়ানো এসবই আমরা দেখেছি তার মাঝে। কাজেই মাদানীয়াতের নামে তার ভেতরে কোনো ফেরকাবাজি ছিল না।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আকাবির আসলাফের সঠিক মূল্যায়ন করার তৌফিক দান করুন। তারা ইন্তেকাল করলেই শুধু তাদের নিয়ে আলোচনা হয়। জীবদ্দশায় তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে। এতে তারা আপ্লুত হন, তাদের কাজ উৎসাহ পায়, জাতি তাদের দ্বারা আরও বেশি খেদমত লাভ করে এবং মানুষ তাদের চেনেন।

কেউ পুথিবী ছেড়ে গেলে আমরা তার প্রশংসা করি, মূল্যায়ন করি, আবার যতদিন বেঁচে থাকেন তার সমালোচনা করি, এই সংকীর্ণতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসা উচিত।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ