শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


একজন পুরুষ ও মহিলা যার-যার সাথে দেখা করতে পারবেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রেহানা তাবাসসুম: পর্দা ফরজ হওয়া সম্পর্কে এত বেশি কুরআন ও হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে যে এ নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবার অবকাশ নেই। আল্লাহ মুসলিম নারীর সম্মানে এবং দুষ্ট লোকের অশিষ্ট আচরণ থেকে তার মর্যাদা রক্ষায় পর্দা ফরজ করেছেন।

পর্দা যেমন পুরুষদের রক্ষা করে নারীর ফিতনা থেকে, তেমনি নারীকেও নানা কষ্ট থেকে রক্ষা করে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। আর যা সাধারণভাবে দৃশ্যমান হয় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না।

তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তাওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩১)

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘(হে নারীগণ!) তোমরা তোমাদের ঘরের (বাড়ির চতুর্সীমানার) ভেতর অবস্থান কর এবং বাইরে বের হয়োনা – যেমন ইসলামপূর্ব জাহিলী যুগের মেয়েরা বের হতো।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৪৩)

আমাদের সমাজে অনেক পুরুষকে দেখা যায় যে,তারা এটাও জানেনা যে, তাদের কার-কার সাথে দেখা করা আবার কার-কার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা যায়না।এই অজ্ঞতার ফলে তারা সর্বদা গুনাহে লিপ্ত থাকে।অনেক ভালো মানুষকেও দেখতে পাই এই অজ্ঞতার কারণে কতো গুনাহ করে থাকে।আমাদের সমাজে এ-বিষয়ক অনেক প্রচলিত বিষয় আছে যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

যেমন আমরা অনেককেই দেখতে পাই তারা তাদের চাচিকে 'বড়ো মা' বলে সম্বোধন করে।এর ফলে তারা নিশ্চিন্তে তাদের চাচিদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে। মনে করা হয় যে,এরা তো মায়েরই মতো।অথচ তারা এটাও জানেনা যে,তাদের চাচিদের সাথে দেখা করা অন্য বেগানা মহিলাদের মতো জায়েজ নাই।হুবহু এরকমভাবে অনেক মহিলাকেও দেখা যায় যে,তাদের কোন কোন পুরুষের সাথে দেখা করা জায়েজ নয় আবার কোন কোন পুরুষের সাথে দেখা করা জায়েজ। এসবগুলো হচ্ছে শুধু অজ্ঞতার কারণে।

ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অমুসলিমদের প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে আমরা নিজেদের আর্দশ ত্যাগ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। আমাদের পরিবার ও সমাজেও পশ্চিমা সমাজের ভয়াবহ উপসর্গগুলো প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে অশনিসংকেত। পশ্চিমা সভ্যতা যেসব মরণব্যাধিতে আক্রান্ত তা থেকে যদি আমরা আমাদের পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করতে চাই তার একমাত্র উপায় ইসলামের বিধান ও আদর্শের সামনে আত্মসমর্পণ। আমরা যদি আমাদের পরিবারিক শান্তি ফিরে পেতে চাই তাহলে নারী-পুরুষ সকলকে পর্দা-বিধানের অনুসারী হতে হবে।

তাই সকলের জ্ঞাতার্থে সংক্ষেপে কিছু সূত্র নিয়ে আসলাম।নিম্নোক্ত বিষয় গুলোর দ্বারা আপনি সহজেই যানতে পারবেন। আপনি কার-কার সাথে দেখা করতে পারবেন।আর আপনি যখন এটা জেনে যাবেন তাহলে তাহলে আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে যে উনারা ছাড়া বাকিদের সাথে আপনার দেখা করা জায়েজ নেই বা আপনি দেখা করতে পারবেননা।

ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক একজন পুরুষ মোট ১৪ জন নারীর সাথে দেখা করতে পারবে। তারা হলো;

মায়ের মত ৫ জন

১. নিজের মা
২. দুধ মা
৩. খালা
৪. ফুফু
৫. শাশুড়ী

বোনের মত ৫ জন

১| আপন বোন_
২| দুধ বোন_
৩| দাদী_
৪| নানী_
৫| নাতনী_

মেয়ের মত ৪ জন

১| নিজের মেয়ে_
২| ভাইয়ের মেয়ে_
৩|বোনের মেয়ে_
৪| পুত্রবধু_

এমনিভাবে একজন মহিলার জন্যেও ১৪ জন পুরুষের সাথে দেখা দেওয়া বৈধ। তারা হলেন;

বাবার মত ৫ জন

১| নিজের বাবা
২| দুধ বাবা
৩| চাচা
৪| মামা
৫| শশুর

ভাইয়ের মত ৫ জন

১| আপন ভাই
২| দুধ ভাই
৩| দাদা ভাই
৪| নানা ভাই
৫| নাতী

ছেলের মত ৪জন

১| নিজের ছেলে
২| ভাইয়ের ছেলে
৩|বোনের ছেলে
৪| মেয়ের জামাতা

তাদের ছাড়া বাকিদের সাথে দেখা করা তো দূরের কথা,অযথা কথাবার্তা বলাও কবিরা গুনাহ।যে গুনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয়না। তাই আসুন আমরা সকলে এই গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখিকা: আলেমা, প্রাবন্ধিক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ