রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


‘দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা নাঈম আহমদ।।

দুর্ভিক্ষ কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে এবং দুর্ভিক্ষের জন্য সরকার ও জনগণকে কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে, পবিত্র কুরআনে কারীম চৌদ্দ শত বছর আগেই জানিয়ে দিয়েছে। পবিত্র কুরআনের সূরা ইউসূফে এ সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা থেকে যথাযথ শিক্ষা নিতে পারলেই দুর্ভিক্ষ থেকে রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণকে বাঁচানো সম্ভব। কোটি কোটি মানুষ অনাহারে মৃত্যু থেকে বেঁচে যাবে। আর এজন্য রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে।

আসুন! জেনে নেই, সূরা ইউসূফে কী শিক্ষা রয়েছে। দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় কী কী পূর্ব প্রস্তুতি প্রয়োজন। তাহলে শুরু করা যাক। ইউসূফ আ.-এর যুগে মিশরের বাদশাহ একটি স্বপ্ন দেখলেন, আর সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা ইউসূফ আ. জানিয়ে দিলেন যে, মিশরে প্রথম সাত বছর প্রচুর খাদ্য-শস্য উৎপাদন করতে হবে। আর পরবর্তী সাত বছর খরা ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। এই দুর্ভিক্ষ থেকে উত্তরণ হতে প্রথম সাত বছর প্রচুর পরিমাণে খাদ্য-শস্য উৎপাদনের নির্দেশ দিতে হবে এবং অতিরিক্তটুকু মজুদ করতে হবে। আর এ দায়িত্ব সরকারকেই পালন করতে হবে। কিন্তু তৎকালীন মিশরের বিশাল সম্রাজ্যে এই দায়িত্ব পালন সহজ ছিল না। তখন হযরত ইউসূফ আ.-কে খাদ্য ও অর্থমন্ত্রী বানিয়ে তাঁকেই দায়িত্বে নিয়োগ দেন মিশরের বাদশাহ।

চলুন! জেনে নেই, কিভাবে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করেছিলেন ইউসূফ আ.। জ্ঞানী ও সৎ ব্যক্তিদেরকে খাদ্য-শস্য তাদারকির দায়িত্ব দিলেন। কৃষকদের সুবিধা ও ন্যায্য অধিকার দিলেন। আর তা এভাবে যে, দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা সরাসরি কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং জানিয়ে দেয় যে, রাষ্ট্রের কাছে এ গম বিক্রি করা হলে তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন।

কৃষকদের নাম তালিকাভুক্ত হবে এবং দূর্যোগকালীন সময়ে তাদের এর চেয়ে কম দামে শস্য দেয়া হবে। নিজেও ছন্দবেশে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ভালো মন্দ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আর এভাবেই প্রথম সাত বছরে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য-শস্য মজুদ করলেন। খাদ্য-শস্য নষ্ট না হওয়াটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি ঘোষণা দিলেন, শিষ সহ গম সংগ্রহ করা হবে। তাহলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম।

পরবর্তীতে যখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিল, তখন অর্থ দিয়েও খাদ্য-শস্য পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন, লোকেরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খাদ্য-শস্য ক্রয় করার জন্য ইউসূফ আ. এর নিকট আসতে লাগল। তখন তিনি তাদেরকে পরিবারের সদস্য অনুযায়ী অর্থের বিনিময়ে খাদ্য-শস্য দিতে লাগলেন। আর যারা গরীব-অসহায় ছিল, অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করার সামর্থ ছিল না, তাদেরকে বিনা মূল্যেই খাদ্য দিলেন। আর এভাবেই তিনি দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ কোটি কোটি মানুষদেরকে অনাহারে মৃত্যু থেকে রক্ষা করলেন।

ইউসূফ আ. এর ঘটনা থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তা হল, দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় সরকারকেই পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে। আসন্ন দুর্ভিক্ষের পূর্বেই প্রচুর পরিমাণে খাদ্য-শস্য মজুদ করা। কৃষকদের সুবিধা ও ন্যায্য অধিকার দেওয়া। দক্ষ ও সৎ-নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের মাধ্যমে তদারকি করা। "খাদ্যের অভাবে পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ হয়নি; হয়েছে সুষম বন্টনের অভাবে।"

এই ঘটনায় একটি রাষ্ট্রের দূর্যোগকালীন অর্থনীতি নিয়ে যে দিক নির্দেশনা বর্ণিত আছে তা বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতায় রাষ্ট্র ও বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য অনুস্বরণীয় হতে পারে। রাষ্ট্রের পূর্বপ্রস্তুতিই দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করতে সক্ষম।

লেখক: তরূণ আলেম। ১০ নং দেবপাড়া (ইউনিয়ন), নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ