মুফতি তাকি উসমানি
মুসলিম স্কলার, পাকিস্তান
একবার এক রাজনৈতিক ব্যক্তি মাদরাসা নিয়ে প্রশ্ন করে বলছিলেন, “মাদরাসা থেকে বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ব্যারিস্টার তৈরি হয় না কেন? মাদরাসা থেকে নতুন কিছু আবিস্কার কেন হয় না?” আরো অনেক ধরনের প্রশ্ন করেছিলেন।
প্রশ্নটি যদি আমাকে করতো, তবে আমি বলতাম, “মাদরাসা হলো কুরআন ও ইসলামের দূর্গ। এখান থেকে আলেম তৈরি হবে। ইসলামের সৈনিক তৈরি হবে। কুরআন হেফাজতকারীর জন্ম হবে। যদি মাদরাসা থেকে বিজ্ঞানী কিংবা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করা লাগে, তাহলে তোমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিণতি কী হবে? সব ছাত্র তো মাদরাসায়ই চলে আসবে।”
মাদরাসা শিক্ষার সূচনা হয়েছে কুরআন নিয়ে। কুরআন-হাদিসই হচ্ছে তাদের পড়ালেখার বিষয়বস্তু। দারুল উলুম দেওবন্দে ডালিম গাছের নিচে যার জন্ম। যে মাদরাসা হাজার হাজার আলেম তৈরি করেছে। আলোকিত মানুষ গঠন করেছে।
আজকাল অনেকেই বলে থাকে, আমি ইজতিহাদ করে চলি। আরে ভাই! ইজতিহাদ আবার কী জিনিস? উপমহাদেশের কোন ইদারা আছে যে, ইজতিহাদ করেছে। সবাই মুকাল্লিদ। উপমহাদেশের সবাই মুকাল্লিদ। এখানে ইজতিহাদের কোনো স্থান নেই। মাগরিবের যত আলেম আছেন সবাই মুকাল্লিদ।
তারা এমনভাবে ইজতিহাদ ইজতিহাদ বলা শুরু করেছে যেনো তাদের কাছে, 'কোনো হারামকে হালাল করে দাও, তাহলেই সেটা ইজতিহাদ হবে।' যেখানে ইজতিহাদ করার প্রশ্ন উঠতে পারে সেখানে ইজতিহাদের খবর নেই।
যেমন প্রশ্ন আসতে পারে, আগের যুগে তো সফরে অনেক কষ্ট হতো। মানুষ পায়ে হেঁটে সফর করতো। মানুষের কষ্টকে লাগব করার জন্য ইসলামি বিধান নামাজে কসর করার হুকুম আসে। কিন্তু বর্তমানে তো মানুষ এমন কষ্টের সফর করে না।
এখন মানুষ বিমানে উঠে। আর ১ ঘন্টা পর নেম যায়। উঠার আগেও বসা ছিলো। বিমানে উঠেও বসে রইল। বিমান থেকে নামার পরেও বসে আছে। তার তো কোনো কষ্ট হয়নি। তাহলে তার জন্যও কেন কসরের হুকুম?
এখানে কেউ ইজতিহাদ করে না। বরং যেখানে খাহেশাতে নাফসের আরাম আছে। সেখানে ইজতেহাদ করে। এসব থেকে বিরত থাকা জরুরি।
আপনারা মাদরাসা শিক্ষার আবিস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। নিজেদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে কখনো ভেবে দেখেছেন? আপনি তো আপনার ইদারাকে ইলম থেকে খালি করে দিয়েছেন। আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে একটি ছেলে মাস্টার্স করার পর অনেক বড় অফিসার হয়ে গেলো। কিন্তু তারপরেও তার জবান থেকে একটি সুরা শুদ্ধ করে পড়ার মতো যোগ্যতা হয় না।
আমাদের এলাকার ইংরেজি স্কুলের নমুনা হলো, সেখানে শিক্ষক ক্লাসে না থেকেও হাজিরা খাতায় হাজির । আবার ছাত্রদের না পড়িয়েও তিনি রেজিস্ট্রেশন খাতায় শিক্ষক। আর যখন পরীক্ষার সময় হয়। তখন প্রশ্ন নিয়ে শুরু হয় বাণিজ্য।
ছাত্রদের বলা হয়, আমাকে এতো টাকা দিয়ে দাও। তোমাকে প্রশ্ন দিবো। মোটকথা, পরীক্ষার আগেই প্রশ্নফাঁস করে দেয়া হয়।অথচ মাদরাসা শিক্ষার মাঝে এসবের কোনো বালাই নেই। এখানে শিক্ষকের ক্লাস করাতে হয়। নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়।সারাবছর ছাত্ররা মেহনত করে পড়ে। পরীক্ষার সময় নির্ভেজাল পরীক্ষা দেয়।
তারপরও এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে সেক্যুলাররা প্রশ্ন করবে। তাদের প্রশ্নের শেষ নেই। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্নগুলোই এসব প্রতিষ্ঠানের হার। সত্যের অলংকার। তারা হিংসায় জ্বলে পুড়ে আবোলতাবোল বকছে।
শুধু মাদরাসার নামে নয়। তারা এসব আবোলতাবোল কথা নবীদেরও বলেছিল।
“انا لنراك فى صفاهة وانا لنظنك من الكاذبين”
আরও বলা হয়েছিলো, اساطير الاولين
(তোমরা যা কিছু বলছো সেসব পুরোনো কাহিনী।)
কিন্তু নবীরা শুধু শুনেছেন। জবাব দেননি। কাজ করে গেছেন। যদি সেসময় নবীরা কাজ থেকে বিরত থাকতেন কিংবা এসব বলার দ্বারা তাদের মাঝে কোনো প্রভাব পড়তো তাহলে দাওয়াত বন্ধ হয়ে যেতো। কিন্তু দাওয়াত বন্ধ হয়নি।
তাদের কথায় কান দেওয়া যাবে না। বরং শিক্ষাদীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে। আর মনে করতে হবে যে, আমাদের দ্বারা আল্লাহতায়ালা আম্বিয়ায়ে কেরামের একটি সুন্নাতের কাজ নিয়ে নিচ্ছেন।
মোদ্দাকথা হলো, তাদের বিষয়ে যদি আসল কথা বলি তাহলে বলতে হবে 'দীনের আহকামের ব্যাপারে শত্রুতা'। দীনের বিধানের ব্যাপারে শত্রুতাই তারা মাদরাসার নামে, আলেমদের নামে কুৎসা রটাচ্ছে।
যদি তারা খুলে বলে যে, আমরা দীন চাই না। ইসলাম চাই না। তাহলে এটা বলা মুশকিল। লোকেরা একথা বলবে যে, লোকটি ইসলাম থেকে বের হয়ে মুরতাদ হয়ে গেছে। এ কারণে ইসলামকে কারণ না বানিয়ে মৌলভীদের ঢাল বানাচ্ছে। আর আল্লাহও মৌলভীদের দ্বারা ইসলামের হেফাজত করছেন।
(মূল উর্দূ বয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন -মুফতি মোস্তফা ওয়াদুদ কাসেমী)

এমএম/
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        