মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত রাষ্ট্রের দায়িত্বে কে যাবেন সেই ফয়সালা আল্লাহ করবেন : জামায়াতে আমির শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান অধ্যাপক আখতার ফারুক রহ.-এর জীবন-কর্ম আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হেফাজতের মহাসমাবেশ সফলে সাভারে উলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত 

হত্যাযজ্ঞ বন্ধে আসাদের স্ত্রীর প্রতি এক সন্তানহারা মায়ের করুন চিঠি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম

(সিরিয়ার চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধের জন্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের স্ত্রী আসমা আল আসাদের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন সিরিয়ার এক সন্তানহারা মা)

প্রিয় আসমা (বাশার আল আসাদের স্ত্রী)

ব্রিটেনের একটি ছবি বেশ কিছুদিন আলোচিত হয়েছিলো মিডিয়ায়। একটি কাঁকড়া দেয়াল বেয়ে পানিতে নামার চেষ্টা করছে আর বারবার খসে পড়ছে।

বাড়ির পেছনের বাগানে পুলের চারপাশে কয়েকটি ছোট ছেলেমেয়ে ঘোরাঘুরি করছিলো। ছোট বাচ্চারা সেই কাঁকড়াটিকে পানিতে নামতে সাহয্য করেছিলো। এ  ফটোগ্রাফটি ছিলো ১৯৮০ সালের একটি গ্রীষ্মকালের। ছোটরা এ কাজে আনন্দ ও সুখ পেয়েছে।

শৈশব হৃদয়কে কঠিনভাবে গলিয়ে দেয়। নাড়া দেয় আমাদের শৈশব। পবিত্রতম এ শৈশব আর এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে পাড় করছে আমাদের হৃদয়ের সিরিয়ার ছোট ছোট শিশুরা।

ওই বাগনের পাশেই অাজ ছোট ছোট বাচ্চাদের ছিন্ন-ভিন্ন লাশের স্তুপ পরে আছে। যেখানে তারা হাসি আনন্দ আর উচ্ছলতায় মেতে থাকার কথা সেখানে তারা অবোধ রক্তাক্ত শরীরে নিথর পড়ে আছে। হাত-পা শরীর নিশ্চিহ্ন হয়ে আছে।

যেখানে তাদের আমোদ প্রমোদে মেতে থাকার কথা সেখানে তারা রক্তের ঝড়নায় ভাসছে। আমি এ দৃশ্য দেখে কাঁদতে চেয়েছি। কাঁদতে পারিনি। অশ্রুর বিনিময়ে আমার চোখ বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।

আমি এখনো যেনো চোখের দৃষ্টিকে বিশ্বাস করতে পারি না। আমি যা দেখছি সবই কী সত্যি? চিৎকার করে কাঁদেতে চাই- কিন্তু আমার কণ্ঠ আটকে যায় স্মৃতির আয়নায়। একবার পাগলের মত হেসে ওঠি আবার কেঁদে ওঠি অজান্তেই।

আসমা! আপনিও তো একদিন এ শৈশব পাড় করে এসেছেন। যেখানে আনন্দ আর আমোদ-প্রমোদের কোনো বাধা ছিলো না। ছিলো না আজকের মত রক্তাক্ত ভাই বোনের লাশের পাশে বসে থাকার দৃশ্য। তাহলে কেনো আজ গৌতার এ দৃশ্য আমাদের দেখতে হচ্ছে।

আপনার স্বামী কোন অধিকারে আজ শিশুদের কোমল শরীরের রক্ত-মাংশ নিয়ে খেলছে। আজকে যদি আপনি সেই শিশুদের জায়গায় থাকতেন তাহলে আপনার কানে সন্তানহারা মায়ের আর মা-বাবাহারা সন্তানের বুক-ফাটা আর্তনাদ পৌঁছাতো না?

প্রিয় আসমা! আপনি এতটা নিচে কীভাবে নেমে গেলেন। আপনার শৈশব একটু মনে করে দেখুন। পশ্চিম লন্ডনের এস্টনে আপনার বাড়ির পেছনের সেই বাগানের কথা মনে পড়ে? যেখানে শৈশব কাটিয়েছিলেন।

এখন তো আপনার দিনের কথা মনে করতে পারবেন না?  কারণ ফ্যাশন ম্যাগাজিনের পৃষ্ঠা জুড়ে আপনি বড় হয়ে গেছেন সেই প্রমাণ মিলেছে ২০১১ সালে।

উজ্জ্বল কী সুন্দর দেখাচ্ছে। তারপরও একটু ভেবে দেখুন আপনার শৈশব আর আজ আমাদের সিরিয়ার ছোট ছোট কচি বাচ্চাদের শৈশবের দিকে। আপনি কিভাবে কাটিয়েছেন আর তারা কীভাবে কাটাচ্ছে তাদেরে শৈশব।

প্রিয় আসমা! সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের স্ত্রী হিসেবে এখন পেছনে ফেলে আসা আপনার নিজের শৈশব কি মিথ্যা? প্লিজ একবার ফিরে তাকান আপনার শৈশবে আর বর্তমান সিরিয়ান মজলুমদের শৈশবে।

আপনার স্বামী তার নিজ হাতে তার শাসনামলে শত শত হাজার হাজার সিরীয় নাগরিককে হত্যা করেছে। নির্দোষ বেসামরিক নাগরিক হত্যা করেছে ঠিক আছে। কিন্তু দুধে ধোয়া নিশ্পাপ কচি বাচ্চারা কী দোষ করেছে।

আজ সেই চিৎকার যদি আপনার শিশুর হতো। আপনার জন্ম দেয়া সন্তানের হতো। আপনার সামনে যদি বোমার আঘাতে ছিন্ন-ভিন্ন নিজের কচি বাচ্চাটা ছটফট করে মারা যেতো।

প্রিয় আসমা! আপনি কী ফিরিয়ে দিতে পারবেন তাদের একটি সন্তানকে। তাদের চিৎকার আর আহাজারি কি থামাতে পারবেন। তবে কেনো বা কোন অধিকারে আজ হত্যা করছেন হাজার হাজার শিশুকে? জবাব আছে কোনো প্রিয় আসমা?

প্রিয় আসমা!  আপনার বাবা লন্ডনের একজন বিশিষ্ট  হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। যিনি অন্যদের বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। আর এদিকে আপনার স্বামী মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।

দুঃখজনকভাবে আমরা জানি যে আপনি সিরিয়ায় হত্যাকাণ্ড, ধ্বংসের পক্ষে নন। ‘দ্য রোজ ইন দ্য ডেজার্ট’ই এর সাক্ষ্য দেয়। আমরা জানি, আপনি এ হত্যাকাণ্ড, ধ্বংসের বিপরীতে পার্থনাও করছেন। কিন্তু এতটুকুই কি যতেষ্ট?

প্রিয় আসমা!  পশ্চিম লন্ডনের ২০১৬ সালে রাশিয়ান স্টেট সমর্থিত চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর টিভিতে আপনার স্বামীর যুদ্ধের কারণে ‘ব্যথা ও বিষণ্নতা’ প্রকাশ করেছিলেন।

আপনি যুদ্ধের পক্ষে নন আমরা জানি। কিন্তু আপনি চুপ করে থাকলে আমরা ধরে নিবো আপনি যুদ্ধের পক্ষে। আপনার হাত আছে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও আপনার স্বামীর বাহিনী গৌতার পশ্চিম এলাকায় ভূমি ও বিমান হামলা চালায়। আমি আপনাদের কাছে এই খোলা চিঠিটি লিখছি। প্লিজ একটু ভাবুন।

প্রিয়  আসমা! গৌতায় আটকে থাকা শিশুদের কথা একটু  ভাবুন।  যদি আপনার আত্মার কোনো পাশে মানবতার এক আউন্স পরিমাণ ভালোবাসা থাকে প্রিয় আসমা, দয়া করে কথা বলুন।

একবার একটু চোখ খুলে তাকান চারদিকের লাশের সাড়ি আপনাকে একটুও ভাবায় না?

দয়া করে একটিবার নিজের দিকে তাকান আর সিরিয়ার মজলুমানের অার্তচিৎকার কান পেতে শুনুন।  আর আওয়াজ তুলুন এ নির্মম হত্যার বিরুদ্ধে।

সূত্র: মিডিলিস্ট মনিটর

সিরিয়া সম্পর্কে রাসুল সা. এর ১০ ভবিষ্যদ্বাণী (ভিডিও)


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ