শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৮ কার্তিক ১৪৩২ ।। ৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
চান্দিনায় কওমি মাদ্রাসা সংগঠনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন পিআর পদ্ধতি ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় : মাওলানা বোরহান উদ্দিন   বিশ্বের ৪৫০ প্রভাবশালী ইহুদির ইসরায়েলের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার আহ্বান মহেশখালীতে মহানবী (সাঃ)-কে অবমাননার অভিযোগে উত্তম কুমার গ্রেফতার ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে সাভারে ইত্তিহাদুল উলামার বিক্ষোভ বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হয়ে ছেলের সাথে প্রাণ গেলো বাবার ইসকন নিষিদ্ধসহ সাত দফা দাবীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ২, আহত ১০ বিভাগীয় শহরে জামায়াতসহ ৮ দলের বিক্ষোভ শনিবার ইসকন বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত: ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ

স্বীকৃতি নিয়ে সরকার-আলেম মুখোমুখি: উত্তরণ কোন পথে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

঳ আমিন ইকবাল

বর্তমান সময়ে আলোচিত একটি বিষয় ‘কওমি শিক্ষাসনদের সরকারি স্বীকৃতি’। কওমি মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় ও কওমি মাদরাসা শিক্ষাসনদের সরকারি স্বীকৃতির লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। ৯ সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক- জামিয়া ইকরার মহাপরিচালক মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসউদ, সদস্য সচিব- গহরডাঙ্গার মাওলানা রুহুল আমীন। তবে কমিটি ঘোষণার মাত্র দুই দিনের মধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকসহ দেশের শীর্ষ আলেমরা।

কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে যেখানে স্বীকৃতি বিষয়ে সম্ভাবনার সূর্য উদয় হলো, সেখানে অন্ধকার নেমে এসেছে এই প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে। ফলে বাহ্যত সরকার ও শীর্ষ আলেমগণ স্বীকৃতি নিয়ে অনেকটা মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গঠনমূলক মতামত জানিয়েছেন তরুণ আলেম ও লেখকগণ। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য ১ম পর্ব প্রকাশের পর এবার ২য় পর্ব।

ali-hasanব্যক্তি স্বার্থ ও রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে
আলী হাসান তৈয়ব
সহ-সম্পাদক, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ

কওমি সনদের স্বীকৃতি- দাবি নয় অধিকার। দাবি শুধু এটাই- উলামায়ে কেরামের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ও কুশলী পরিকল্পনার ভিত্তিতেই যেন তা বাস্তবায়িত হয়। এর অন্যথা হলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না। লাখ লাখ তরুণ এর চূডান্ত বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায়। এ নিয়ে কোনো রাজনীতি বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব অভিপ্রেত নয়। সব মহলের নেতৃবৃন্দকে ব্যক্তি স্বার্থ ও রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে।

tasnimতাল গাছ আমার বলে ঐক্য চাইলে হবে না
মুফতি মুহাম্মদ তাসনিম
তথ্য সচিব,কওমী সনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ

আল্লামা শাহ আহমাদ শফি কওমি ও কওমির বাইরের সবার অভিভাবক। এই আস্থার স্থানটা নষ্ট করা যাবে না। যে কোন মূল্যে স্বীকৃতি হতে হবে। এখন বেফাক অন্য বোর্ডগুলোর সাথে যে লিয়াজো করার জন্য কমিটি করল- এর কোন দরকার নাই। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি গ্রহণ করে মিটিংয়ে অংশ গ্রহণ করলে ঐক্য হয়ে যাবে। তাল গাছ আমার বলে ঐক্য চাইলে হবে না। সবার প্রতি সম্মানবোধ সবাইকে এক কাতারে দাড় করাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আজ বেফাক যে দাবী দাওয়া করছে ইতিপূর্বে এগুল সব বাস্তবায়ন হয়েছে। শিক্ষা কমিশন ২০১২ তে তাদের সভাপতি সহসভাপতি মহাসচিব যুগ্ম মহাসচিবসহ সাতজন কমিটির সদস্য ছিল এছাড়া বেফাকভুক্ত মাদরাসার আরো সদস্য ছিল। তারা সেখানে তাদের মতামত তুলে ধরলে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হত না। আল্লামা শাহ আহমাদ শফি এদেশের অভিভাবক তাকে চেয়ারম্যান দিতে হবে এ দাবি করে তাকে একটি পক্ষে নেয়া যুক্তিসংগত নয়। তিনি সবার তাকে সবার থাকতে দিতে হবে। আর ঐক্যবদ্ধ থাকলে কঠিন শর্তের সাথে স্বীকৃতি আদায় করা যাবে।

ehsanul-haqueবেফাকের নামেই স্বীকৃতি দিতে হবে- এই দাবি থেকে সরে আসা উচিত
মুহাম্মদ এহসানুল হক
সহকারী সম্পাদক, মাসিক রাহমানী পয়গাম

কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে বর্তমান সময়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য আমার মনে হয় সবাইকেই সমঝোতায় আসতে হবে। সমঝোতার দুটি পথ হতে পারে- এক. বেফাকের দায়িত্বশীলদের মধ্যে বিরোধীদলীয় রাজনীতির সাথে যারা জড়িত তাদের বাদ দিয়ে নতুন একটি কমিটি করা। দুই. তৃতীয় কোন একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা। যাকে বেফাক মানবে, ফরীদ উদ্দীন মাসুদ সাহেবরাও মানবে। বেফাকের নামেই স্বীকৃতি দিতে হবে এই দাবি থেকে এখন বেফাকের সরে আসা উচিত।

তবে আমাদের মনে রাখতে হবে কওমি সনদের স্বীকৃতির ধারণা কিন্তু বেফাকই দিয়েছে। এবং স্বীকৃতির পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য বেফাকই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। সেই নব্বই দশক থেকে বেফাক স্বীকৃতির দাবিতে কাজ করছে। তাই সরকার যদি বেফাককে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে স্বীকৃতির পথে এগিয়ে যায় তাহলে সেটা কারো জন্যই কল্যাণকর হবে বলে আমার মনে হয় না।

সকল বোর্ডের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব
মুহাম্মদ জামীলুল হক
শিক্ষক, জামেয়া কাসিমুল উলূম দরগাহ শাহজালাল রহ., সিলেট

পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থাকা জরুরি। বলা যায় নিজেদের প্রয়োজনেই স্বীকৃতি আবশ্যক। ভারত পাকিস্তানের কওমি মাদরাসা সরকার স্বীকৃত। সেখানকার মাদরাসাগুলো যুগযুগ ধরে স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলোও নিজেদের স্বকীয়তা বহাল থাকবে, এমন নিশ্চয়তা পেলে সরকারি স্বীকৃতি নিতে পারে।

আমার মনে হয়- বেফাক-আঞ্চলিকসহ সকল বোর্ডের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এক্ষেত্রে আল্লামা আহমদ শফী আহুত আজকের বৈঠকে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করছেন অনেকেই। আমরা আশা করব শীর্ষআলেমগণ কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা ঐতিহ্য বহাল থাকবে- এমন নিশ্চয়তা পেলেই স্বীকৃতি নেবেন অন্যথায় নয়। জাতির আমানত হেফাজতের দায়িত্ব আলেমদের হাতেই।

আরো পড়ুন: কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিই কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির পথে অন্তরায়: মুসলেহ উদ্দীন রাজু

আরআর


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ