শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


শুধু ফজর নামাজেই মিলবে ৯ পুরস্কার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম নামাজ। নামাজের অনেক ফজিলত, উপকারিতা এবং মর্যাদার কথা ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবী। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু এক ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারীর জন্য ৯টি সুসংবাদ ঘোষণা করেছেন।

যারা ফজরের ২ রাকাত সুন্নাত ও ২ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করবে হাদিসে তাদের জন্য অসামান্য সব পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এসব পুরস্কারের ঘোষণা মুমিন মুসলমানকে ফজরের নামাজের দিকে আরও বেশি ধাবিত করবে। এতে সুন্দর ও কল্যাণময় দিন লাভ করবে মুমিন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসের মাধ্যমে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য যেসব পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন, তাহলো-

১. আল্লাহর জিম্মায় থাকার সুসংবাদ। হজরত জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়ল সে মহান আল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত হলো। আর আল্লাহ তোমাদের কারো কাছে তার রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তাদানের বিনিময়ে কোনো অধিকার দাবি করেন না। যদি করেন, তাহলে তাকে এমনভাবে পাকড়াও করবেন যে, উল্টিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।’ (মুসলিম শরিফ)

২. জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুসংবাদ। হজরত আবু বকর ইবনু উমারাহ ইবনু রুআইবাহ তার পিতা রুআইবাহ থেকে বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, এমন কোনো ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগের নামাজ অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামাজ আদায় করেন। এ কথা শুনে বাসরার অধিবাসী এক লোক তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি নিজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এ কথা শুনেছ? সে বলল, হ্যাঁ। তখন লোকটি বলে উঠল, আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি নিজে এ হাদিসটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে শুনেছি। আমার দুই কান তা শুনেছে আর মন তা স্মরণ রেখেছে।’ (মুসলিম শরিফ)

৩. পরিপূর্ণ নুরের সুসংবাদ। হজরত আনাস ইবনে মালিক রা. বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের অন্ধকারে মসজিদসমুহে যাতায়াতকারীদের কেয়ামাতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও।’ (ইবনে মাজাহ শরিফ)

৪. অর্ধেক রাত ইবাদতের সাওয়াব। হজরত আবদুর রহমান ইবনু আবু আমরাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, একদিন মাগরিবের নামাজের পর হজরত উসমান ইবনু আফ্‌ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে এসে একাকি এক জায়গায় বসলেন। তখন আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বললেন-

‘ভাতিজা! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ইশার নামাজ আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল সে যেন সারারাত জেগে নামাজ আদায় করল।’ (মুসলিম শরিফ)

৫. মুনাফিকের তালিকা থেকে বাদের সুসংবাদ। হজরত আবু হুরায়রা রা. করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকদের জন্য ফজর ও ইশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী (কষ্টের) নামাজ আর নেই। এ দুই নামাজের কী ফজিলত, তা যদি তারা জানতো, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি ইচ্ছে করেছিলাম যে, মুয়াজ্জিনকে ইকামাত দিতে বলি এবং কাউকে লোকদের ইমামতি করতে বলি, আর আমি নিজে একটি আগুনের মশাল নিয়ে গিয়ে অতপর যারা নামাজে আসেনি, তাদের উপর আগুন ধরিয়ে দেই।’ (বুখারি শরিফ)

৬. দুনিয়ায় সবচেয়ে উত্তম ফজরের নামাজ। হজরত আয়েশাহ রা. বর্ণ‌না করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফজরের দুই রাকাত (সুন্নাত) নামাজ দুনিয়া ও তার সব কিছুর থেকে উত্তম।’ (মুসলিম শরিফ)

৭. নামাজি হিসেবে ফেরেশতাদের সাক্ষ্য। হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতারা পালাক্রমে তোমাদের মাঝে আগমন করেন। একদল দিনে, একদল রাতে। আসর ও ফজরের নামাজে উভয় দল একত্রিত হয়। তারপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যান। তখন তাদের প্রভু তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এসেছ? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত। উত্তরে তারা বলেন, আমরা তাদের নামাজে রেখে এসেছি। আর আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম তখনও তারা নামাজরত অবস্থায় ছিলেন।’ (বুখারি শরিফ)

৮. আল্লাহর দিদার লাভের সুসংবাদ। হজরত জারির বিন আবদুল্লাহ রা. বর্ণনা করেন, এক রাতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন, শোন! এটি (ওই চাঁদকে) তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রভুকে তোমরা দেখতে পাবে। তাকে দেখতে তোমরা কোনো ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্যোদয়ের আগে আর সূর্যাস্তের আগে অর্থাৎ ফজর ও আসর নামাজ আদায়ে সমর্থ হও, তবে তাই কর। অতপর তিনি এ আয়াত (সুরা ত্বহা: আয়াত ১৩০) তেলাওয়াত করলেন-

‘আর আপনার পালনকর্তার প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের আগে, সূর্যাস্তের আগে এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন রাতের কিছু অংশ ও দিনের ভাগে, সম্ভবত তাতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন। (বুখারি শরিফ)

৯. ফজর আদায়ে উত্তম দিনযাপন। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পিছনের অংশে তিনটি গিঠ দেয়। প্রতি গিঠে সে এ বলে চাপড়ায়, তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক। অতপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঠ খুলে যায়। তারপর ওজু করলে আরেকটি গিঠ খুলে যায়। অতপর নামাজ আদায় করলে আরেকটি গিঠ খুলে যায়। তখন তার সকাল হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে কলুষ-কালিমা ও আলস্য সহকারে সকালে উঠে।’ (বুখারি শরিফ)

মুমিন মুসলমানের উচিত উল্লেখিত ফজিলত ও মর্যাদা লাভে নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায়ের প্রতি যত্নবান হওয়া। হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলা। আর তাতে কল্যাণের সঙ্গে কাটবে সারাটি দিন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজরের নামাজের মাধ্যমে দিন শুরু করার তাওফিক দান করুন।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ