সুফিয়ান ফারাবী
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>
দীর্ঘদিন যাবৎ মাদরাসা বন্ধ থাকায় বেতন পাচ্ছেন না কওমি মাদরাসার অধিকাংশ শিক্ষক। তাদের মাঝে কেউ কেউ মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন পেয়েছেন। আবার কারো ভাগ্যে জুটেনি তাও। প্রাতিষ্ঠানিক অর্থসংকটের কারণে বড় বড় মাদরাসাগুলো ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকরা দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এতে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে তাদের জীবন।
এদিকে বেফাক জানিয়েছে, কওমি মাদরাসার ঐতিহ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে সরকারি সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারছেন না তারা। তারা মনে করছেন, সরকারি অনুদান বা সাহায্য গ্রহণ করলে কওমি মাদরাসার মূলনীতি বা উসুলে হাশতেগানার ব্যত্যয় ঘটে। এজন্য কোনোভাবেই সরকারি অনুদান গ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়েছে বেফাক।
কওমি শিক্ষকদের সাময়িক এই অসুবিধার কথা যখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে, তখন দীর্ঘ এক মাস পর বেফাক এ বিষয়ে জরুরি বৈঠক করে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাময়িক অসুবিধাগ্রস্ত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াতে ২৬ (রোববার) এপ্রিল বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া একটি সাময়িক কল্যাণ তহবিল গঠন করে। বেফাকের সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী এই তহবিলে দান করার জন্য বিত্তবান ও দীন-দরদিদেরর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু কার্যত এখনো এর কোনো ফলাফল দৃশ্যমান হয়নি। ১৬ মার্চ সর্বসম্মতিক্রমে মাদ্রাসা বন্ধ করা হয়। এর প্রায় দুই মাস হতে চলেছে।
বেফাকের একটি নীতিনির্ধারণী সূত্র আমাদেরকে বলেছে, তারা এখনো দেশের কোথাও সহযোগিতা পাঠাতে পারেনি। সারাদেশে অসংখ্য কওমি মাদরাসা। সেসব মাদরাসার সাময়িক অসুবিধায় পড়া শিক্ষকদের তালিকা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলার তালিকা বেফাকের হাতে এসেছে। সারাদেশে তালিকা সংগ্রহের কাজ এখনো চলমান।
সূত্রের দাবি, যেহেতু বাছাই করা শিক্ষকদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হচ্ছে, তাই তালিকা তৈরির কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। সূত্রটি জানিয়েছে, ঈদের আগে শিক্ষকদের সহযোগিতা করা যাবে এমনটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কতদিন সময় লাগবে তা কারো জানা নেই। তবে তাদের চেষ্টা থাকবে ঈদের পূর্বে তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকের পাশে দাঁড়ানো।
বেফাকের তহবিলে এপর্যন্ত কী পরিমাণ অর্থ এসেছে তা পরিষ্কার করতে নারাজ বেফাকের কর্মকর্তারা। তহবিলে বেফাকের পক্ষ থেকে কী পরিমাণ অংক দেওয়া হবে এটিও জানা যায়নি। জমা পড়া অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াতে যথেষ্ট হবে কি না -এমন প্রশ্নেরও কোনো উত্তর মেলেনি।
এদিকে শিক্ষকদের মাঝে এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম অনুল্লেখের শর্তে মানিকগঞ্জের একটি মাদরাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষক আওয়ার ইসলামকে বলেন, সরকারি অনুদান ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা মুরুব্বিদের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, ঐতিহ্যের কথা চিন্তা করে যেমনিভাবে সরকারি অনুদান গ্রহণ করা হয়নি ঠিক তেমনিভাবে আমাদের নিজেদের অধিকার (বেতন) বা সহযোগিতার বিষয়টিও কর্তাব্যক্তিদের গুরুত্বসহকারে নেয়া উচিত। তাদের কাজের অগ্রগতি কতটুকু তা আমাদের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়।
একই শর্তে আরেকজন শিক্ষক বলেন, ‘মার্চ মাসের বেতন এখনো পাইনি। এপ্রিল শেষ হয়ে মে চলছে। অন্যান্য বছর রমজান মাসে তারাবি বাবদ কিছু হাদিয়া পেতাম। এবছর সেটাও হয়নি। যখন ছাত্র ছিলাম তখনো পরিবারে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করতাম, যদিও দায়িত্ব ছিল না। এখন সংসার করছি। আমার বেতনের উপর পুরো পরিবার নির্ভরশীল। তিন মাস ধরে বেতন না পাওয়া শিক্ষকের আর কী অবস্থা জানতে চান!’
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা রয়েছে। ঘোষণাটি বাস্তবায়িত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীগণ -এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এমন পরিস্থিতিতে বেফাক কতটুকু তার কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে পারবে -এই বিষয়টি জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।
-এএ
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        