ঢাকায় প্রথমবারের মতো দেশের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম–খতিবদের নিয়ে বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্মিলিত ইমাম–খতিব জাতীয় সম্মেলন ২০২৫। ইমাম–খতিবদের দ্বীনি দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং সামগ্রিকভাবে খতিব সমাজের ৭ দফা দাবি তুলে ধরার লক্ষ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
রোববার (২৩ নভেম্বর) দুপুর ২টায় রাজধানীর আগারগাঁওস্থ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাকী। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মুফতী আজহারুল ইসলাম ও মুফতী শরিফুল্লাহ।
সম্মেলনে বক্তব্য দেন হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, জমিয়তের সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক প্রমুখ।
সম্মেলনে দেশের বরেণ্য আলেমসমূহ উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম মুফতী খলিল আহমাদ কুরাইশী, মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ, জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের খতিব মুফতী আবদুল মালেক, হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, মাওলানা মাহফুজুল হক, পটিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবু তাহের নদভী, শায়েখ আহমদুল্লাহ, মুফতী জসীম উদ্দিন রাহমানী, মুফতী দেলোয়ার হোসাইন ও মুফতী হারুন ইজহার।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এবং জাতীয় পার্টি (পার্থ)-এর চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ।
রাজনৈতিক উলামা নেতৃত্বের সারিতে ছিলেন মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা সারোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা আব্দুল কাদের, মাওলানা আবদুর রহিম ইসলামাবাদী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা আব্দুল আওয়াল, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবাহানী, মুফতী আব্দুল কাইয়ুম কাসেমী ও মুফতী রেজাউল করিম আবরারসহ অন্যান্য শীর্ষ আলেম–উলামা।
সম্মেলনে উপস্থাপিত ৭ দফা দাবিনামা
১. রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামী শরিয়াহের সর্বোচ্চ গুরুত্ব
রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সব ধর্মের অধিকার সংরক্ষণ করে ইসলামী শরিয়াহকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
২. রাষ্ট্রীয় জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে ইমাম–খতিবদের সম্পৃক্তকরণ
রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে ইমাম–খতীবদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটি, গ্রাম আদালত, দুর্যোগ প্রতিরোধ কমিটি এবং ইউনিয়নভিত্তিক সেবা কার্যক্রমে ইমাম–খতিবদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
৩. মসজিদ–মাদরাসার বিদ্যুৎ ও পানির বিল বিষয়ে বিশেষ সুবিধা
সব মাদরাসার বিদ্যুৎ বিল মসজিদের ন্যায় ডি–ট্যারিফের আওতায় আনতে হবে এবং সব মসজিদ ও মাদরাসার পানি বিল ৫০ শতাংশ মওকুফ করতে হবে।
৪. ইমাম–খতিব, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের চাকরি বিধি প্রণয়ন
দেশের সব মসজিদের ইমাম–খতিব, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের জন্য পৃথক চাকরি বিধি প্রণয়ন করতে হবে এবং প্রতিটি মসজিদ কমিটিতে ইমাম–খতীবকে পদাধিকারবলে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের বিধান করতে হবে।
৫. অনিয়ন্ত্রিত গ্রেফতার ও হয়রানি নিষিদ্ধকরণ
উপযুক্ত প্রমাণ ও সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া কোনো ইমাম–খতিব বা আলেমকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা যাবে না।
৬. নিয়োগে যোগ্য আলেমদের অগ্রাধিকার
দাওরায়ে হাদিসসহ সরকার স্বীকৃত সনদপ্রাপ্ত আলেমদের সরকারি মসজিদের ইমাম–খতীব, স্কুল–কলেজের ধর্মীয় শিক্ষক এবং কাজি হিসেবে নিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৭. ওয়াকফ প্রশাসন ও শিক্ষানীতিতে শরিয়াহসম্মত সংস্কার ও আলেম সম্পৃক্তকরণ
ওয়াকফ সম্পত্তির আয়ের অপচয় রোধে প্রচলিত ওয়াকফ প্রশাসন আইনকে বিশেষজ্ঞ মুফতী ও ইমাম–খতীবদের সম্পৃক্ত করে শরিয়াহর আলোকে যুগোপযোগী করতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কমিটি এবং শিক্ষা কমিশনে বিশেষজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম ও ইমাম–খতিবদের সম্পৃক্তকরণ নিশ্চিত করতে হবে।
এলএইস/