শায়খ আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ
কেনিয়ার মুম্বাসায় একটি ইয়াতিমখানা মাদরাসায় গিয়েছিলাম। ছাত্র সংখ্যা মাত্র ৬৪ জন। জানতে পারলাম, তাদের মাসিক খাবারের পুরো খরচই আমাদের দেশের মুদ্রায় আনুমানিক ৬০ হাজার টাকা। শুনে যেন বুকটা ধক করে উঠলো।
দুপুরের খাবার দুই-তিন স্লাইস পাউরুটি আর পানি। রাতের খাবারে কখনো ভুট্টার আটার ঘাটি, কখনো বা শুকনো পাউরুটি আর চিনির পানি কিংবা রঙ চা। অনেক দিনই আবার সেসবও জোটে না। যা পাওয়া যায় তাই খেয়ে তারা আল্লাহর শোকর আদায় করে।
রাতে ইশার সালাত আদায় করতে থেমেছিলাম মুম্বাসার আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘মারকাজে ইমাম শাফেয়ী রহ.’। সেখানে ছাত্রদের রাতের খাবার খাওয়ার দৃশ্য দেখে চোখ ভিজে গেল। আমাদের দেশের সবচেয়ে অভাবী মানুষের খাবারও তাদের কাছে যেন বিলাসিতার মতো। তিলাওয়াত শুনতে চাওয়াতে একজনের তিলাওয়াত দাঁড়িয়ে শুনে মনে হলো আল্লাহর কসম অন্তরটা ছিঁড়ে ফুড়ে যাচ্ছে। ছবি তুলতে চাইলে বিনয়ের সাথে জানালো- উস্তাদের নিষেধ ছবি এবং ভিডিও করা ছাত্র এবং প্রতিষ্ঠানের। এটা তাদের গায়রত!
হাজারো স্মার্টফোন, দামি জামাকাপড়, বিলাসী খাবারের ভিড়ে আমরা যারা সামর্থ্যবান, তাদের সন্তানরা খাবার বেছে খায়, অনেক সময় অপচয় করে ফেলে। অথচ মুম্বাসার এই কিশোর হাফেজরা দিনশেষে শুকনো এক টুকরো রুটির জন্যও আনন্দে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানায়।
আমাদের শিশুদের জন্য আমরা কত আয়োজন করি চকোলেট, পিৎজা, বিরিয়ানি, দামি স্কুল। অথচ দীনি শিক্ষার মানে শৈথিল্য। তারা আরবি শব্দকে কঠিন মনে করে, কোরআন পড়াকে বোঝার চেষ্টা করে না।
কিন্তু আফ্রিকার অজপাড়াগাঁয়ের এই ক্ষুধার্ত ছেলেরা বুক ভরে আরবি তিলাওয়াত করে, দ্বীনি বিদ্যার উম্মুল লুগাহ জানে, আর তাদের চোখে ভাসে দুনিয়ার নির্লিপ্ততা আর মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি!
এই সফরে আমি বুঝলাম আমাদের ‘অভাব’ আসলে অভাব নয়, বরং কৃতজ্ঞতার ঘাটতি।
আমরা আরামের অভ্যাসে চোখ ঢেকে ফেলেছি। খাবার নষ্ট করি, দেখানোতে খরচ করি, অথচ পৃথিবীর অন্য প্রান্তে কেউ এক টুকরো রুটিকে স্বপ্নের মতো আগলে রাখে।
জীবন আমাকে মুম্বাসা থেকে এক বড় শিক্ষা দিল-‘আরাম নয়, কৃতজ্ঞতাই প্রকৃত সুখ। দেখানো নয়, সংযম আর দানই আসল মহত্ত্ব।’
লেখক: বিশিষ্ট দাঈ, খতিব ও চিন্তক
এমএইচ/