মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫ ।। ৪ ভাদ্র ১৪৩২ ।। ২৫ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
শেখ হাসিনার মামলায় ট্রাইব্যুনালে ১২ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন অধ্যাদেশ কিংবা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে : বুলবুল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা আর অর্জনের মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে: জমিয়ত মহাসচিব দেশকে এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : ধর্ম উপদেষ্টা গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘নতুন প্রস্তাব’ পেল হামাস ‘ইসলামী ব্যাংকিংয়ের অগ্রযাত্রা টেকসই করতে শরিয়াহ অডিটর তৈরি করা জরুরি’ ভারতের ছয়টি বিমান ভূপাতিত করার ভিডিও আছে: পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘আলেমদের মধ্যে মূল উৎস থেকে গবেষণার আগ্রহ কম’ আ. লীগ আমলের প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: রিজভী ঢাকা-৮ আসন নিয়ে পরিকল্পনা জানালেন রিকশা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা ফয়সাল

একজন কৃতজ্ঞ শাগরেদ


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

|| রমযান রব্বানী ||

মসজিদের আঙিনার সামনের দিকটায় ইট-দেয়ালে ঘেরা একটি ছোট্ট বাউন্ডারি। ভেতরে শান্ত, নীরব ঘুমিয়ে আছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম, অগণিত ছাত্রের ওস্তাদ-আল্লামা ইসহাক ফরিদী রহ.। চারপাশ নিস্তব্ধ, যেন বাতাসও মৃদু ভক্তির আবেশে স্তব্ধ হয়ে আছে। তিনি ছিলেন দীর্ঘ সময়ের জন্য ঢাকার চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত শেখ জনুরুদ্দীন দারুল কুরআন মাদরাসার মুহতামিম। তাঁর নেতৃত্বে এ মাদরাসা শিক্ষা ও খেদমতে খ্যাতি অর্জন করে। অসংখ্য ছাত্র তাঁর হাতে ইলমের দীপশিখা প্রজ্জ্বলিত করেছে। সরল জীবনযাপন, দৃঢ় সুন্নাহনিষ্ঠতা এবং নিরলস পরিশ্রম তাঁকে ছাত্র-শিক্ষক মহলে এক অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিল। 

তাঁরই অন্যতম গুণী ছাত্র হলেন বর্তমান সময়ের খ্যাতিমান আলেম শায়খ মুফতী হাফীজুদ্দীন সাহেব দা.বা.। যিনি বর্তমানে রাজধানীর প্রখ্যাত দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের নায়েবে মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শায়খের ইলমি প্রতিভা, নেতৃত্বগুণ ও দাওয়াতি খেদমত নিঃসন্দেহে তাঁর ওস্তাদ ইসহাক ফরিদী রহ.-এরই ছায়াস্বরূপ উত্তরাধিকার। 

শায়খ মুফতী হাফীজুদ্দীন সাহেব (দা.বা.) ধীরপদে এসে দাঁড়ালেন তাঁর ওস্তাদের কবরের ঠিক পাশে। দীর্ঘশ্বাসের মতো ভারী নীরবতা নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন সমাধিফলকের দিকে। যেন স্মৃতির পর্দা খুলে যাচ্ছে, আর তার ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে উঠছে যৌবনের দিনগুলো- যখন তিনি ওস্তাদের পায়ের ধুলায় বসে হাদিস শুনতেন, ইলমের আলোয় হৃদয় ভিজিয়ে নিতেন।

শায়খ আস্তে আস্তে কবরের মাটির পাশে দাঁড়ালেন। তাঁর ঠোঁটে গুণগুণ করে ভেসে উঠল দরুদ, ইস্তেগফার আর দোয়ার শব্দ। মনে হচ্ছিল, প্রতিটি দোয়া যেন কবরের মাটিতে মিশে গিয়ে ওস্তাদের রুহের কাছে ছাত্রের অনুগত কৃতজ্ঞতা পৌঁছে দিচ্ছে। 
হঠাৎ তিনি লক্ষ করলেন, কবরের চারপাশে ছোট ছোট আগাছা গজিয়ে উঠেছে। শায়খের হাত এগিয়ে গেল। তিনি নিজ হাতে আগাছাগুলো টেনে তুলতে লাগলেন, মাটি ঝেড়ে পরিষ্কার করলেন। এ দৃশ্য দেখে পাশে দাঁড়ানো এক ছাত্র অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। শায়খ তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘মাঝে মাঝে এসে হুজুরের কবরটা পরিষ্কার করে দিও।’ 

এরপর তিনি কবরের নামফলকের দিকে আঙুল তুলে বললেন, ‘দেখছো? নেমপ্লেটে শ্যাওলা জমেছে। টিস্যু দিয়ে সুন্দর করে মুছে দাও তো!’ কবরের মাটি তখন সিক্ত হলো শায়খের দোয়ায়। ছাত্রের হাতে তোলা আগাছার মুঠো যেন সাক্ষ্য দিল-একজন শাগরেদ তাঁর ওস্তাদের প্রতি কতটা অনুগত, কতটা কৃতজ্ঞ হতে পারে। সেই নিস্তব্ধ কবরস্থানে দাঁড়িয়ে মনে হলো-জীবন হয়তো ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু ওস্তাদ ও শাগরেদের সম্পর্ক অমর। ইলমের নূর আর স্নেহের বন্ধন মাটির নিচে গিয়েও মুছে যায় না।

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ