জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরবের নির্বাহী পরিচালক মাওলানা বদরুজ্জামানের ছয় মাস বয়সী শিশুপুত্র ওমর মুহাম্মদ তাযিম রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২১ জুন) মারা যায়। ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করে।
নিজের প্রিয় ছেলেকে হারানোর একদিন পর রোববার (২২ জুন) ভুল চিকিৎসায় কীভাবে শিশুটির করুণ মৃত্যু হয় তা তুলে ধরেছেন মাওলানা বদরুজ্জামান। চিকিৎসদের খামখেয়ালি ও অবহেলায় কীভাবে একটি শিশুকে হত্যা করা হলো সেই বিবরণ জানিয়েছেন তিনি।
সন্ধ্যায় বদরুজ্জামান তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে লিখেন- হাসিখুশি সুস্থ ছেলে, মুখে ছোট্ট একটা সার্জারির জন্য হসপিটাল নেওয়া হয়েছিল। ডাক্তার বলেছিল, সার্জারি শেষে হসপিটালে অবস্থান করতে হবে না। তাই অল্প সময়ে সার্জারি শেষে বাসায় চলে আসবে এমনটা ধরেই যাওয়া হয়েছে।
তিনি লিখেন- সার্জারির পূর্বে যত পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার প্রয়োজন সব করা হয়েছিল, রিপোর্ট সবগুলোই পজিটিভ এবং ভালো। ছেলেও সুস্থ ও অ্যাকটিভ।
বদরুজ্জামান লিখেন- ১৬ জুন সার্জারির নির্ধারিত তারিখ। সকাল ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত না খাইয়ে রাখা হয়। এরপর ওটিতে নেওয়া হয়। দেড় ঘণ্টা পর আমার ওয়াইফকে খবর দেয় জরুরি কথা বলবে বলে। উপস্থিত ডাক্তাররা কথা বলার আগে সুন্দর সুন্দর কথা বলে তাকে সান্ত্বনা দেন। এরপর তারা জানান, সার্জারি হয়নি আজ। কারণ বাবুর অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছে, অক্সিজেন নেওয়ার টিউব সরে গেছিল। এ অবস্থায় সার্জারি করা যাবে না। এখন তাকে এনআইসিউতে নিয়ে যাবো। সেখানে দুই তিন ঘণ্টা থাকলে ঠিক হয়ে যাবে। তারপর সার্জারিটা আরেকদিন করবো।
তিনি লিখেন- সার্জারি করতে এনেস্থিসিয়া দিয়ে অবশ করা হয়, এ সময় স্বাভাবিক অক্সিজেন নেওয়া যায় না। তাই টিউব দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হয়। এনেস্থিসিয়া ডাক্তারের ভাষ্য (রেকর্ডেট) অনুযায়ী বেখেয়াল বশত ৩-৪ মিনিট আমার ছেলে অক্সিজেন পায়নি। একজন বড় মানুষের যদি ১ মিনিট অক্সিজেন বন্ধ হয় এতে তার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যায়। সেখানে একটা ৬ মাসের শিশু যদি ৩-৪ মিনিট অক্সিজেন ছাড়া থাকে বাঁচবে কীভাবে।
তিনি আরও লিখেন- এনআইসিউতে নেওয়ার পর বলা হয়, অক্সিজেনের অভাবে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, যার জন্য সিপিআর দেয় তারা। সাথে প্রচণ্ড খিচুনি। এতে ব্রেন ডেমেজ হতে থাকে। একেরপর এক শরীরের মূল অর্গানগুলো কিডনি, লিভার সব বিকল হতে থাকে। প্রতিদিনই সমস্যা বাড়ছে। শরীর শক্ত হয়ে ফুলে যাচ্ছে। আমাদের বাবু ৩-৪ মিনিট সময় যে অক্সিজেন পায়নি, ওই সময়ে তার শরীরের মূল অর্গানগুলো ফেইল করে। যা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ পায়।
শরীর ফাংশন করার অর্গানগুলো অকার্যকর হলে বেঁচে থাকার সুযোগ নাই। এভাবে ৬ দিন এনআইসিউতে থেকে আমাদের বাবুটার কষ্টকর মৃত্যু হয়।
মাওলানা বদরুজ্জামান লিখেন- ডাক্তারকে বলে ছিলাম, ছোট্ট একটা সার্জারি, যার সাথে কোনো রকমের লাইফ রিস্কের কোনো সম্ভাবনা নাই, এমন অবস্থায়ও আপনাদের বেখেয়ালে আমার সুস্থ অ্যাকটিভ ছেলেটাকে এভাবে মেরে ফেললেন। তাদের উত্তর, বাবা আমরাতো ইচ্ছা করে করিনি। ধরে নেন, এটা আপনার ভাগ্যে ছিল। তার হায়াত এসময় পর্যন্ত ছিল। তাদের উত্তর শুনে, আমাদের নিশ্চুপ থাকা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।
তিনি লিখেন- এই পোস্ট লিখছি কাউকে দোষী প্রমাণ করার জন্য নয়।
লিখছি যেন কোনো মা-বাবার জীবন আর এমনভাবে থমকে না যায়।
সন্তানের জন্য হাসপাতালে গেলে, চোখ বুজে ভরসা না করে সবকিছু যাচাই করুন।
এমএইচ/