হজ শ্রমসাধ্য ইবাদত। তাই যুবক বয়সে হজ করাই উত্তম। আর এই বয়সে আল্লাহর জন্য শ্রমদানের বিশেষ আনন্দও। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরাকে নিজেদের সেই আনন্দের কথা জানিয়েছেন চার যুবক হাজি।
আলজাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ভাষান্তর করেছেন আবরার আবদুল্লাহ।
রায়া মাহদি
রায়া মাহদি একজন ইরাকি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। তাঁর পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকেই তিনি হজের স্বপ্ন দেখেন। তিনি ২০২৪ সালে ফরজ হজ পালন করেন।
তিনি বলেন, অনেকেই আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল যে সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে যেন আমি এই ফরজ আদায় করি। কেননা হজের সফরে শিশুদের নিয়ে এলে তাদের যত্ন নেওয়া ও খেয়াল রাখা কঠিন। যদিও তা অসম্ভব নয়। আর যদি তাদেরকে পরিবার-পরিজনের কাছে রেখ আসা হয়, তবে হজ আদায়ের সময় তাদের চিন্তা মাথায় চলে আসবে।
সন্তানের চিন্তা মায়েদের বিচলিত করে তুলবে।
রায়ার স্বামী ফাদি মাহদি ও শাশুড়িও তাঁকে সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে হজ করতে উৎসাহিত করেন। রায়া মাহদির বিয়ের মহর ছিল হজ করানো। তাঁর স্বামী চাচ্ছিলেন দ্রুততম সময়ে মহর আদায় করতে। হজের সফরে রায়া মাহদির মূল চিন্তা ছিল হজ কবুল হওয়া।
অনেক মানুষের চিন্তা থাকে হজের বিধানগুলো সঠিকভাবে পালন করা। কিন্তু রায়ার বিশ্বাস, আল্লাহ চাইলে বান্দার আমলের ত্রুটি মার্জনা করে ইবাদত কবুল করতে পারেন। রায়ার যেসব দোয়া করতে চাইতেন তা সব সময় অন্তরে উপস্থিত থাকত। কেননা হজের সফরে দোয়া কবুল হয় এবং মানুষের পাপ মার্জনা করা হয়। হজ কবুল হলে ব্যক্তি নবজাতকের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফেরে।
রায়া মাহদি
জিবরাইল আলাউ
ব্রিটিশ নাগরিক জিবরাইল আলাউয়ের আদি নিবাস নাইজেরিয়া। তিনি সদ্য বিয়ে করেছেন। তাঁর স্ত্রীর নাম নাদিয়া জেইন আলাউ। নাদিয়া মরক্কোর বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক। বিয়ের পর জিবরাইল সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন তিনি বিয়ের ওলিমা করবেন নাকি প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে পবিত্র ভূমিতে সফর করবেন। অবশেষে তাঁরা হজ করার সিদ্ধান্ত নেন। জিবরাইল আলাউয়ের অনুভূতি হলো, ‘পবিত্র ভূমিতে হজ পালন করা মূলত ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর কাছেই প্রত্যাবর্তন করব) বাক্যের প্রায়োগিক রূপ। আমরা অর্থ ও সময় ব্যয় করি যেন এই পবিত্র ভূখণ্ডে পৌঁছাতে পারি। আমাদের প্রত্যাশা আমরা যেন আল্লাহর প্রকৃত মেহমান হতে পারি। ‘দুয়ুফুর রহমান’ (আল্লাহর মেহমান) অভাবনীয় সম্মান, পুরস্কার ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের কবুল করে নেন।
রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলামও একজন অল্প বয়সী যুবক। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি লেখাপড়া শেষ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তা না করে তিনি ফরজ হজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হজের মাধ্যমে তিনি চান তাঁর অতীতের পাপগুলো মুছে যাক এবং আগামীর দিনগুলো হোক পবিত্রতর। যখন তাঁকে জানানো হলো তিনি হজের ভিসা পেয়েছেন। তখন তিনি সীমাহীন খুশি হন। তিনি মনে করেন, দেশে থাকলে তিনি এত অল্প বয়সে হজ করার সুবর্ণ সুযোগ পেতেন না।
ইসমাইল সিলাভি
জর্দানের যুবক ইসমাইল সিলাভি ২০২৪ সালে হজ করেন। তিনি শরিয়াহ কলেজে পড়ার সময় হজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি মানত করেছিলেন যে পবিত্র মক্কা নগরী ছাড়া তিনি চুল কাটবেন না। মহান আল্লাহ তাঁর শপথ রক্ষা করেছেন এবং মানত পূরণ হয়েছে। তবু মক্কায় আগমনের আগে তাঁর চুল বেশ লম্বা হয়ে গিয়েছিল।
অবশ্য ইসমাইল সিলাভি কখনো ভাবেননি এত তাড়াতাড়ি তাঁর স্বপ্ন পূরণ হবে। তিনি বলেন, জর্দানের মানুষ খুব সহজে হজের সুযোগ পায় না। অতিশয় বৃদ্ধ হওয়ার পরই তাঁদের সামনে এই সুযোগ আসে। সাধারণত তাঁদের বয়স ৬৫ বছর হওয়ার পর হজের সুযোগ আসে। অথচ এতটা জীবনকাল পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
আল্লাহর অসংখ্য অগণিত কৃতজ্ঞতা যে তিনি আমাকে অল্প বয়সে হজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আল হামদুল্লািহ!
এনএইচ/