তীব্র শীতের মধ্যে গাজা উপত্যকায় ত্রাণ ও আশ্রয়-সামগ্রী প্রবেশে ইসরায়েলের বাধা অব্যাহত থাকায় এক ফিলিস্তিনি নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাত্র দুই সপ্তাহ বয়সী শিশু মোহাম্মদ খলিল আবু আল-খাইর মারাত্মক হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারায়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার প্রচণ্ড ঠান্ডাজনিত জটিলতা নিয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। প্রয়োজনীয় উষ্ণ আশ্রয় ও শীত প্রতিরোধী সামগ্রীর অভাবে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
দীর্ঘদিনের যুদ্ধ ও অবরোধের ফলে গাজায় ন্যূনতম সুরক্ষা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। বহু পরিবার ভেজা মাটির ওপর স্থাপিত টেন্টে বসবাস করছে, যেখানে নেই গরমের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ কিংবা পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র। শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই পরিস্থিতি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রায় দুই বছর ধরে চলা সংঘাতে গাজার ৮০ শতাংশেরও বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এর ফলে শত শত হাজার পরিবার অস্থায়ী টেন্ট বা গাদাগাদি করে বানানো আশ্রয়ে ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়েছে। সম্প্রতি প্রবল ঝড়, ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় বহু টেন্ট পানিতে ডুবে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ধসে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়।
গাজা সিটি থেকে বাস্তুচ্যুত উম্মে মোহাম্মদ আসসালিয়া জানান, শীতের রাতে আগুন জ্বালিয়ে শিশুদের ভেজা কাপড় শুকানোর চেষ্টা করতে হয়। তিনি বলেন, অতিরিক্ত কাপড় বা কম্বল নেই, আর যে টেন্ট দেওয়া হয়েছে তা শীত সহ্য করার মতো নয়। পরিবারগুলোর জরুরি ভিত্তিতে কম্বল ও উষ্ণ পোশাক প্রয়োজন।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় নির্বিঘ্নে ত্রাণ প্রবেশের আহ্বান জানালেও বাস্তবে বাধা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সরাসরি গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, ঠান্ডা ও ধসে পড়া ভবনের কারণে শিশুদের মৃত্যুর খবর বাড়ছে।
ইউএনআরডব্লিউএ জোর দিয়ে বলেছে, এই অবস্থা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং বৃহৎ পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। সংস্থার মতে, দেরি হলে শীত, অনাহার ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে আরও প্রাণহানি অনিবার্য হয়ে উঠবে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
এনএইচ/