বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ।। ২ পৌষ ১৪৩২ ।। ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
বিজয় দিবসে খুলনা নগরীতে ইসলামী আন্দোলনের বিজয় র‍্যালি ও সমাবেশ বিজয় দিবসে বিভিন্ন উপজেলায় ইসলামী আন্দোলনের আলোচনা সভা ও র‍্যালি শান্তিতে নোবেল: মনোনয়ন পেলেন জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও গাজার চিকিৎসকেরা বাংলাদেশ চলবে নতুন ব্যবস্থার রাজনীতিতে: জামায়াত আমির শীতে গাজায় নবজাতকের মৃত্যু, ত্রাণ বাধায় মানবিক সংকট আরও গভীর শীতে এক কাপ তুলসি চা আপনার যেসব উপকার করবে একাত্তরে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, তবে তা অর্থবহ হয়নি: চরমোনাই পীর ফিলিস্তিনিসহ ৭ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ফরিদপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশর এক বিশাল বিজয় র‍্যালি অনুষ্ঠিত  বিজয় দিবসে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দীপ্ত শপথ নেওয়ার আহ্বান হেফাজতের

বসনিয়ার মুসলিম গণহত্যা: তিন দশক পরও অমলিন স্মৃতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন দশক পার হলেও জাতিগত নির্মূলের ক্ষত আজও নাগরিকদের তাড়া করে ফিরছে। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলা ওই যুদ্ধে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হয় এবং দুই কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশ বসনিয়ার মুসলিম ছিলেন।

সাবেক যুগোস্লাভিয়ার ভাঙনের প্রেক্ষাপটে জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বী পরিকল্পনার ফলে যুদ্ধের সূচনা হয়। সংঘাত চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যায়। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃত।

১৯৯২ সালের ১ মার্চ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় অনুষ্ঠিত গণভোটে অংশগ্রহণকারী ভোটারের ৯৯ শতাংশ স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেন। তবে বসনিয়ান সার্ব জনগোষ্ঠী ভোট বর্জন করে এবং আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলে।

১৯৯২ সালের এপ্রিলে ইউরোপীয় কমিউনিটি বসনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পরপরই বসনিয়ান সার্ব বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায়। একই মাসে রাজধানী সারায়েভো অবরোধের মুখে পড়ে, যা প্রায় ৪৩ মাস স্থায়ী হয়। এই অবরোধে প্রায় ১১ হাজার মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে এক হাজারের বেশি শিশু।

যুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত সহিংসতায় প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ নিহত হন, বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশ বসনিয়ার মুসলিম ছিলেন। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় হিসাব অনুযায়ী, তৎকালীন জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি, প্রায় ২২ লাখ মানুষ শরণার্থী বা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হন। এদের বড় একটি অংশ আজও নিজ ভূমিতে ফিরে আসতে পারেননি।

১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘নিরাপদ এলাকা’ স্রেব্রেনিৎসায় বসনিয়ান সার্ব বাহিনী হামলা চালায়। কয়েক দিনের মধ্যে ৮ হাজারের বেশি বসনিয়াক পুরুষ ও কিশোরকে হত্যা করা হয় এবং মরদেহ গণকবর দেওয়া হয়। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জোরপূর্বক এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এই হত্যাকাণ্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

স্রেব্রেনিৎসা হত্যাকাণ্ডের পর ন্যাটো বিমান হামলা জোরদার করে এবং ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে ডেটন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটায়।

যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালে গঠন করে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিওয়াই)। এতে ১৬১ জন অভিযুক্ত হন এবং ৯০ জন দোষী সাব্যস্ত হন। বসনিয়ান সার্ব নেতা রাদোভান কারাদজিচ ও সেনাপ্রধান রাতকো ম্লাদিচ দুজনই গণহত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।

বসনিয়া-হার্জেগোভিনার এই ইতিহাস আজও স্মরণ করিয়ে দেয় জাতিগত বিভাজন ও মানবিক দুর্যোগের ভয়াবহতা, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে রয়ে গেছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ