মেক্সিকো ভারতীয় পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে দেশটির ব্যবসায়ীদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার পণ্যগুলো বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কারণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের সঙ্গে মেক্সিকোর কোনো বাণিজ্য চুক্তি নেই।
মেক্সিকোর নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে। দেশটির সরকার দাবি করেছে যে, তাদের শিল্প ও উৎপাদকদের সুরক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে অটোপার্টস, লাইট কার, পোশাক, প্লাস্টিক, ইস্পাত, গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি, খেলনা, টেক্সটাইল, আসবাব, জুতা, চামড়াজাত পণ্য, কাগজ, কার্ডবোর্ড, মোটরসাইকেল, অ্যালুমিনিয়াম, ট্রেলার, কাচ, সাবান, সুগন্ধি এবং কসমেটিকসহ অন্যান্য পণ্য।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, এই নতুন শুল্ক ভারতের প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিতে ব্যাপক ক্ষতি হবে। বিশেষ করে ভারতের জনপ্রিয় গাড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো—ফক্সওয়াগন, হুন্ডাই, নিসান এবং মারুতি সুজুকি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
শুল্ক বৃদ্ধির ফলে লাইট কার ও অন্যান্য যানবাহনে প্রভাব পড়বে। ভারতের অটোমোবাইল শিল্প সংগঠন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে, “শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতের গাড়ি রপ্তানি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা চাই ভারত সরকার মেক্সিকোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করুক।”
বর্তমানে, মেক্সিকো ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি রপ্তানি বাজার, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সৌদি আরবের পর এটি তৃতীয়। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এসব শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।
শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় বাজারে স্বর্ণের দাম কমেছে এবং রুপার বাজারে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এসব শুল্ক পরিবর্তনের ফলে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি এবং রপ্তানির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে।
বাণিজ্য বিশ্লেষকরা মনে করেন, মেক্সিকোর এই পদক্ষেপ ভারতের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে অটোমোবাইল ও বৈদ্যুতিন পণ্যের ক্ষেত্রে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ভারত মেক্সিকোর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কিন্তু আলোচনার ফলাফল কী হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।
শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ তাদের জন্য পণ্যের খরচ বাড়তে পারে।
মেক্সিকোর এই পদক্ষেপের আগে যুক্তরাষ্ট্রও ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছিল, যা নিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন যে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, ভারতীয়দের জন্য বাণিজ্যিক কূটনীতি এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এ ধরনের শুল্ক বৃদ্ধি ভারতের রপ্তানির প্রবাহকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করতে পারে।
এনএইচ/