ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনি বলেছেন, পুঁজিবাদ যেখানে নারীর মর্যাদাকে পদদলিত করে, সেখানে ইসলাম ধর্ম নারীর প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান প্রদর্শনের ওপর গুরুত্ব দেয়। ইসলামে নারীর মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ ও সম্মানজনক। নারীর পরিচয় ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কুরআনের বক্তব্যই সর্বোচ্চতম।
আজ বুধবার সকালে তেহরানে নারী ও কন্যা সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি ঘরে ও সমাজে নারীর মর্যাদা এবং অধিকার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্ত্রী ও নারীর প্রতি স্বামী তথা পুরুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ, সে বিষয়েও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
খামেনি হজরত ফাতিমা জাহরা (রা.)-এর গুণাবলির কথা উল্লেখ করেন: ইবাদত ও বিনয়, মানুষের জন্য ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গ, দুর্দশা ও বিপদে ধৈর্যধারণ, নির্যাতিতের অধিকার রক্ষায় সাহসী অবস্থান, সমাজকে সত্যের পথে আলোকিত করা, রাজনৈতিক বোধ ও কর্মকাণ্ড, ঘর সামলানো, দাম্পত্য জীবন পরিচালনা, সন্তান লালন-পালন এবং ইসলামি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোতে সক্রিয় উপস্থিতি।
তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, মানবজীবন ও ইতিহাসে নারী-পুরুষের সমান ভূমিকা এবং আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ ও সর্বোচ্চ মর্যাদা অর্জনে সমান সক্ষমতার বিষয়গুলো ঐসব মানুষের উপলব্ধির সরাসরি বিপরীত - যারা ধর্ম মানে কিন্তু ধর্মকে ঠিকমতো বোঝে না এবং যারা ধর্মকেই স্বীকার করে না।
সমাজে নারীর অধিকার নিয়ে কুরআনের যুক্তি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ইসলামে সামাজিক কর্মকাণ্ড, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনৈতিক কার্যক্রম, অধিকাংশ সরকারি পদ অর্জনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অধিকার রাখে। এছাড়া আধ্যাত্মিক পথচলা এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রচেষ্টায় তাদের অগ্রগতির পথ উন্মুক্ত।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, পশ্চিমের অধঃপতিত সংস্কৃতি ও পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যাত। নারীর মর্যাদা রক্ষা এবং বিপজ্জনক ও অতি যৌনাকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইসলাম নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, নারী ও পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদ, নারীর হিজাব এবং বিবাহে উৎসাহ—এসব বিষয়ে বিধান দিয়েছে ও সীমাবন্ধতা রেখেছে। এগুলো নারীর প্রকৃতি, সমাজের প্রকৃত চাহিদা এবং কল্যাণের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অথচ পশ্চিমা সংস্কৃতিতে এই সীমাহীন এবং বিধ্বংসী যৌন আকর্ষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি মোটেই গুরুত্ব পায় না।
ইসলামী বিপ্লবের নেতা বলেন, বহু মিল থাকা সত্ত্বেও দেহ-প্রকৃতি ও স্বভাবগত বিষয়ে ইসলাম নারী ও পুরুষকে কিছু পার্থক্যসহ দুটি ভারসাম্যপূর্ণ উপাদান হিসেবে দেখে। এই দুটি পরিপূরক উপাদানই মানবসমাজ পরিচালনা, মানবজাতির ধারাবাহিকতা, সভ্যতার অগ্রগতি, সামাজিক চাহিদা পূরণ ও জীবন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই গুরুত্বপূর্ণ সব ভূমিকা পালনের ধারাবাহিকতায় পরিবার গঠনকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি হিসেবে উল্লেখ করেন খামেনি। তিনি বলেন, পশ্চিমের ভ্রান্ত সংস্কৃতিতে পরিবার-প্রতিষ্ঠান প্রায় ভুলে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু ইসলামে পরিবার নির্মাণের প্রধান উপাদান অর্থাৎ নারী, পুরুষ ও সন্তানকে পারস্পরিক ও নির্দিষ্ট অধিকার প্রদান করা হয়েছে।
তিনি সামাজিক ও পারিবারিক আচরণে ন্যায়বিচারকে নারীদের প্রথম অধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির দায়িত্ব এই অধিকার নিশ্চিত করা—এ কথা জোর দিয়ে বলেন তিনি। আরও বলেন, নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করা নারীর মৌলিক অধিকার। পশ্চিমা পুঁজিবাদ যেখানে নারীর মর্যাদাকে পদদলিত করে সেখানে ইসলাম ধর্ম নারীর প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান প্রদর্শনের ওপর গুরুত্ব দেয়।
খামেনি কুরআনে দুই ঈমানদার নারী হজরত মরিয়ম ও হজরত আসিয়া (ফেরাউনের স্ত্রী)-কে সব মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য এক মানদণ্ড হিসেবে তুলে ধরার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, কুরআনের পক্ষ থেকে এমন দৃষ্টান্তই নারীর চিন্তা ও কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব প্রমাণ করে।
তিনি বলেন, নারীর সামাজিক অধিকার—যেমন একই কাজের জন্য পুরুষের সমান মজুরি, কর্মজীবী বা পরিবারের একক অভিভাবক নারীর বীমা, নারীর বিশেষ ছুটি এবং আরও বহু অধিকার রক্ষা করতে হবে, কোনো বৈষম্য করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, ঘরে নারীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হলো স্বামীর ভালোবাসা। আর নারীর ঘরোয়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক অধিকার হলো তার বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের সহিংসতা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকা এবং পশ্চিমে প্রচলিত নারীদের হত্যা বা প্রহার করার মতো বিপথগামী আচরণ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা।
তথ্যসূত্র: পার্স টুডে
এলএইস/