সুদানের উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী এল-ফাশার এখন এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) শহরটি দখল করার পর সেখানে শুরু হয়েছে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, শহরে শত শত নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। নারীরা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন, ঘরবাড়ি ও শরণার্থী ক্যাম্পে আগুন দেওয়া হয়েছে।
একসময় প্রাণবন্ত এল-ফাশার এখন এক ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপ। স্থানীয় হাসপাতাল, স্কুল, এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রও আরএসএফের হামলা থেকে রেহাই পায়নি। শুধু একটি হাসপাতালেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০০ মানুষ, জানিয়েছে আলজাজিরা ও আনাদোলু।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আরএসএফ গত মাসে এল-ফাশার দখল করার পর থেকে ‘নৃশংস হামলা’ আরও বেড়েছে।
সুদানে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি লি ফাং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন,
“এল-ফাশার এখন শোকের শহর। ১৮ মাস ধরে যুদ্ধ ও অবরোধে টিকে থাকা বেসামরিক নাগরিকরা অকল্পনীয় নৃশংসতার শিকার হচ্ছে।”
সহায়তাকারী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, এল-ফাশার থেকে পালিয়ে আসা হাজারো মানুষ এখন তাওয়িলা শহরে আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, গত সপ্তাহে এল-ফাশার থেকে আরও ৭,০০০ বেসামরিক নাগরিক পালিয়ে গেছে।
২৬ অক্টোবর শহরটি আরএসএফের দখলে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৯ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
আইওএমের তথ্যমতে, ৫ থেকে ৮ নভেম্বরের মধ্যে ৭,০৭৫ জন নতুন করে স্থানচ্যুত হয়েছে, যারা উত্তর দারফুরের তাওয়িলা, মেলিট ও সারাফ ওমরার মতো এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। দখলের আগে এল-ফাশারের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক গবেষণাগার তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানায়, স্যাটেলাইট চিত্রে এল-ফাশারে ‘গণহত্যার প্রমাণ’ পাওয়া গেছে। সেখানে রক্তের দাগ, পোড়া ঘরবাড়ি ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো দৃশ্যমান।
“এল-ফাশারে আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের শহর ছাড়তে বাধা দেওয়া হচ্ছে। হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও জাতিগত সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।”
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানে সেনাবাহিনী (এসএএফ) ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ-এর মধ্যে ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে সংঘাত শুরু হয়। তা এখন পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, আর দেড় কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
এনএইচ/