নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সচেতনতার জন্য গঠিত সংগঠন ইনসাফ-এর আত্মপ্রকাশমূলক অনুষ্ঠান শনিবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মালেক।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আজকের এই সেমিনারটি নারীর অধিকার, মর্যাদা বিষয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অবশ্যই নারীদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যত্নবান হতে হবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। আমাদের সমাজে এখন অধিকারের আলোচনা হয় একপাক্ষিক। এর ফলে অধিকার প্রদানের যে ভারসাম্য তা রক্ষা হয় না।এটা কাম্য নয়।
বায়তুল মোকাররমের খতিব বলেন, ইসলামের শিক্ষা হলো, সকল পক্ষকেই তাদের অধিকার বুঝিয়ে দেওয়া। কেবল শ্রমিক নয় মালিকও অধিকার পাবে, কেবল নারী নয় পুরুষও তার অধিকার পাবে। এছাড়াও ইনসাফ একটি শতভাগ ইসলামি সংস্থা। তাই অমুসলিমরাও তাদের শতভাগ অধিকার এখান থেকে বুঝে পাবে।
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ইনসাফ-এর সভাপতি বিশিষ্ট আলেম, সিনিয়র মুহাদ্দিস ও খতিব মুফতি মাহমুদুল হাসান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, কেবল ওলামায়ে কেরাম নয় সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিবর্গকে নিয়েই আমরা নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, গণমানুষকে সচেতন করতে চাই।
ইনসাফ-এর পরিচিতিমূলক বক্তব্য দেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, সিনিয়র মুহাদ্দিস ও খতিব মাওলানা আব্দুল গাফফার। তিনি বলেন, নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সচেতনতার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি গঠিত হয়েছে। নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যা যা করা দরকার এই সংগঠনের মাধ্যমে তা করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সেমিনারে ‘নারীর অধিকার ও মর্যাদা,বাস্তবতা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন ইনসাফ-এর সাধারণ সম্পাদক শাইখুল হাদীস, লেখক ও গবেষক মাওলানা আবুল বাশার । প্রবন্ধে তিনি বলেন, আজকের সমাজে বাবা কর্তৃক মেয়েকে আর্থিকভাবে বঞ্চিত করার ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। যেই মা নিজ উদরে বহন করেছেন, বুকের অমৃত পান করিয়ে নির্ঘুম প্রতিপালন করেছেন, তিনিও পর্যন্ত সম্পত্তির বেলায় অনেকক্ষেত্রে পুত্রঘেষা। আর বোনের ন্যায্য অধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার বেলায় তার প্রিয় সহোদরদের আমরা কেমন জায়গায় দেখছি? রইলো শারীরিক সহিংসতার কথা। আজ এটা এক লোমহর্ষক বাস্তবতা! এ অবস্থা থেকে বের হতে হবে, সমাজকে বের করতে হবে। ইসলামের শিক্ষাগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে। নারীর অধিকার ও মর্যাদার বিষয়ে এবং দাম্পত্য জীবনের সৌহার্দ্য ও সৌন্দর্যের যে শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে, এগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ড. এবিএম হিজবুল্লাহ। তিনি বলেন, বিবাহকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে। তালাক ও পরকীয়ার মতো বিষয়গুলোতে গণসচেতনতা তৈরিও ইনসাফের কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। বিয়ের পূর্বে পাত্র-পাত্রী উভয়ের জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ করানো উচিত।
অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলেন, নারীবাদ সূক্ষ্ম গোলক ধাঁধা তৈরি করে পুরুষের বিপক্ষে নারীকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এর ফলে যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে তার মধ্যে দিয়ে নারীর প্রতি জুলুমের ক্ষেত্রেই সম্প্রসারিত হয়েছে। নারীবাদের নামে পশ্চিমা ব্যবস্থা আসার পরে পৃথিবীতে সর্বোচ্চ পরিমাণ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এত নারী-নির্যাতন কখনোই ঘটেনি।
আরো বক্তব্য দেন এডিআইজি নাজিবুর রহমান (অব.)। তিনি বলেছেন, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করতে পারবে পুলিশ প্রশাসন। তাই পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা সবাইকে এই কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।
বুয়েট-এর বরেণ্য প্রফেসর ড. লুতফুল কবীর বলেন, শুধু সচেতনতামূলক কার্যক্রম নয়, বিপদ ঘটে যাওয়ার আগে চলমান ঘটনাগুলোকেও গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিত। উপযুক্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে দম্পতিদের সাথে সেশন করা, তাদের কাউন্সিলিং করাকে গুরুত্বের সাথে ইনসাফের কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
মাকতাবাতুল আশরাফের স্বত্বাধিকারী মাওলানা হাবিবুর রহমান খান সাহেব বলেন, বিবাহযোগ্য ছেলেমেয়েদের বিবাহে সহযোগিতার কাজটাও যেন ইনসাফ করে।
এমএইচ/