ইসলামের মধ্যপন্থা ও উদারতার আদর্শকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া নবীজির পক্ষ থেকে আলেমদের উপর অর্পিত দায়িত্ব। আলেম সমাজ হলেন আলোকবর্তিকা; তারা সমাজে আলো বিকিরণ করেন। মানুষকে আলোর পথে আহ্বান করেন। আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে আলেম সমাজের ভূমিকা অপরিহার্য।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে গতকাল বুধবার (১১ জুন ) সমাজের প্রতি আলেমদের দ্বীনি দায়িত্ব ও কর্তব্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আলোচকরা এসব কথা বলেন। স্থানীয় তরুণ আলেমদের সামাজিক সংগঠন ‘লাজনাতুল উলামা কোম্পানীগঞ্জ’ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
এতে বক্তব্য রাখেন- ফেনী জামেয়া রশীদিয়ার মুহতামিম মুফতি শহীদুল্লাহ, মিরপুর আকবর কমপ্লেক্স মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি হানিফ কাসেমী, দ্বীনিয়াত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুফতি সালমান আহমাদ ও দৈনিক যুগান্তরের সহ-সম্পাদক মুফতি তানজিল আমির।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আলেমরা দুনিয়াতে নবীদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা নবীদের ওয়ারিশ জ্ঞানে-গুণে, আদবে-আখলাকে, ভদ্রতায়-শিষ্টাচারে, আচার-আচরণে ও ন্যায়-ইনসাফে।
নবীরা ধর্মীয়, সমাজিক, রাষ্ট্রীয়, বৈশ্বিক ক্ষেত্রে যত ধরনের কাজ করেছেন সবক্ষেত্রেই আলেমরা নবীদের ওয়ারিশ। নবীরা যত ধরনের কাজ করেছেন, তাদের অনুপস্থিতিতে আলেমরা সবগুলো পরিচালনা করবেন। সভ্য সমাজ বিনির্মাণে নবীরা যেসব ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। আলেমদেরও সেসব ক্ষেত্রে অবদান রাখতে হবে।
তারা বলেন, আলেমদের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা আছে। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদ আছে। এসব মসজিদের মুসল্লীদের সঙ্গে আলেমদের নিবিড় যোগাযোগ আছে। আলেমদের এই জনসম্পৃক্ততাকে দেশ গঠনে কাজে লাগাতে হবে।ধর্মই মানুষকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। আর ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী আলেমরা সেই শিক্ষাকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের নৈতিকতার ভিত মজবুত করেন। সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে আলেমদের সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয় হলে সেটি ফলপ্রসু হবে।
দ্বীনিয়াত বাংলাদেশের পরিচালক মুফতি সালমান আহমদ বলেন, সম্প্রীতি ও উদারতা ইসলামের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তরুণ প্রজন্মের আলেমদের এ বিষয়টি বিশেষভাবে মেনে চলতে হবে। কারণ সহমর্মিতা ও সৌহার্দে্যর পরিবেশ ছাড়া বিস্তৃতভাবে দ্বীনের কাজ করা সম্ভব হয় না। সময়ের বাস্তবতা ও যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণ আলেমদের এখন সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়তে হবে। তাই কোনো মতাদর্শকেন্দ্রিক চিন্তায় আবদ্ধ না থেকে সবার মাঝে দ্বীনি চেতনা বিস্তারে কাজ করতে হবে।
মুফতি তানজিল আমির বলেন, মানুষের অন্তরে জায়গা পেতে আগে নিজের অন্তরে সবাইকে স্থান দিতে হয়। বর্তমানে শুধু বিভক্তি আর বিভাজনে সবাইকে অতিউৎসাহী দেখা যায়। তাই উম্মতের মাঝে সহিষ্ণুতা ও ভ্রাতৃত্বের ব্যাপক চর্চা করতে হবে। তরুণ আলেমদের অন্তরে সবার জন্য বিশেষ ভালোবাসার স্থান থাকতে হবে, তা হলে সবাই আমাদের আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করবে। বৃহত্তর ঐক্যের জন্য প্রয়োজন মনস্তত্ত্বিক ঐক্য গড়ে তোলা। তা হলেই দীর্ঘস্থায়ী একটা ঐক্য গড়া সম্ভব। যেটিকে বলা যায় বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের সুর।
লাজনাতুল উলামা কোম্পানীগঞ্জের সভাপতি মুফতি আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দারুল উলূম ওলামা বাজার -এর মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ, জামিয়া কারীমিয়া আরাবিয়া, ঢাকা-র মুহাদ্দিস মুফতি নিজাম উদ্দিন, জামিয়া সাঈদিয়া কারীমিয়া, ঢাকার মুহাদ্দিস মুফতি ইমাম উদ্দিন, নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ বসুরহাট কেন্দ্রীয় মসজিদের খতীব মুফতি কামরুল হাসান বিন কাশেম, কবিরহাট বড় মসজিদের খতীব সহ-অধ্যাপক মাওলানা সানাউল্লাহ, সৌদি প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাওলানা ওমর ফারুক, কবিরহাট কাসেমুল উলূম মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আবু নাছের এবং বিশিষ্ট লেখক ও সংগঠক মাওলানা আতিক উল্লাহ আল মামুন সহ প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম।
এমএম/