রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ।। ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ।। ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
হাফেজ্জী হুজুরের নামে রাস্তার নামকরণ করল ডিএনসিসি রোজাকে পূজার সঙ্গে তুলনা, জামায়াত প্রার্থী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে মামলা ক্ষমা চাইলেন তর্কে জড়ানো সেই চিকিৎসক বেহেশতের টিকিট দেওয়ার কথা বলে তারা শিরক করছে: তারেক রহমান বিভাগীয় সমাবেশ সফল করায় পীর সাহেব চরমোনাইয়ের কৃতজ্ঞতা খেলাফত মজলিসের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কিশোরগঞ্জে র‍্যালি মাদারীপুর-৩ আসনে হাতপাখার প্রার্থীর মোটরসাইকেল শোডাউন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ আটক আফতাবনগর মাদরাসার দুই দিনব্যাপী ইসলাহি ইজতেমা সম্পন্ন আগামী নির্বাচনে গণতন্ত্রের শক্তির বিজয় হবে: সালাহউদ্দিন আহমদ

যে ব্যক্তি পক্ষপাতিত্বের দিকে ডাকে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের স্লোগান প্রচার করবে সে ব্যক্তি জাহান্নামের নোংরা স্থানে অবস্থান করবে। জাহেলিয়াতের স্লোগান আল্লাহ বিলকুল পছন্দ করেন না। জাহেলিয়াতের স্লোগান যারা প্রচার করবে তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। খতিব বলেন, তাওহিদের স্লোগান বাদ দিয়ে যে স্লোগান মানুষের মাঝে বিভক্তি, হিংসা বিদ্বেষ এবং ঐক্যের পরিবর্তে মানুষের মাধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে সে স্লোগান জাহেলিয়াতের স্লোগান। জাহেলিয়াতের স্লোগান হারাম। নবী (সা.)-এর শিক্ষার ওপর থাকলে সমাজে বিশৃঙ্খলা অশান্তি সৃষ্টি হবে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আসারিয়াতের (অন্যায়ভাবে পক্ষপাতিত্ব করা) দিকে ডাকে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। শান্তি নিরাপত্তাদানকারী একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর বিধানের মাধ্যমেই শান্তি তালাশ করতে হবে। যারা অন্যায়ভাবে পক্ষপাতিত্বের স্লোগান প্রচার করে তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। অন্যায় বাতিল জুলুমের বিপক্ষে অবস্থান নিতে হবে। খতিব বলেন, সবচেয়ে বড় জুলুম হচ্ছে আল্লাহর হক নষ্ট করা। তথ্য সন্ত্রাসও অনেক বড় জুলুম।

খতিব বলেন, নবী (সা.) সব ধরনের আসারিয়াতকে হারাম ঘোষণা করেছেন। যারা মুসলমানদের মাঝে ফাটল ধরার স্লোগান দেয় তাদের ব্যাপারে কঠিন কথা বলা হয়েছে হাদিসে। মানুষের মাঝে ফাটল বিভক্তি সৃষ্টিকারীকে তার বাপের লজ্জাস্থানের কথা উল্লেখ করে গালি দিয়ে তাদের পরিহার করতে বলা হয়েছে। খতিব বলেন, উগ্রবাদী ইসকন মুসলিম শূন্য করতে চায়। এরা চট্টগ্রামের আদালতের সামনে একজন আইনজীবীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ওই হত্যার কোনো বিচার হয়নি। ইসকন সারা দেশে উগ্রতা বিশৃঙ্খলতা ছড়াচ্ছে। উগ্রবাদী ইসকনের সব প্রকার কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। যে ধর্মে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক আছে সে ধর্মই আসল ধর্ম। যে ধর্মের সাথে আল্লাহ সম্পর্ক নেই সে ধর্ম গোড়াবিহীন বাতিল ধর্ম। গোড়াবিহীন বাতিল ধর্মালম্বিদের নিরাপত্তা একমাত্র ইসলামই দিয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনি রসুলবাগ জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি রাহমাতুল্লাহ তাক্বী বিন আব্দুল গনী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, সমাজের দিকে নজর দিলে খুবই মর্মাহত হয়ে যাই। শান্তি কোথাও নেই; অরাজকতা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটি, ঝগড়া, ফ্যাসাদ ও লুটতরাজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সত্যকে সত্য বলা যাচ্ছে না, মিথ্যাকে মিথ্যা বলা যাচ্ছে না। অপরাধীরা দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

এ ধরনের অরাজকতার মূল কারণ হলো আমরা আল্লাহর প্রদত্ত দায়িত্ব ভুলে গেছি। আমরা মানুষদের সৎকাজের আহ্বান দেয়া এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্বে অবহেলা করছি। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেনÑ ‘তোমরাই সেই শ্রেষ্ঠ উম্মত, যাদের মানুষদের কল্যাণের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর উপর ঈমান রাখো।’ (আলে ইমরান : ১১০) ইবনু কাসীর (রহ.) বলেন, এই তিনটি গুণ সৎকাজে আহ্বান, অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা এবং আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান যাদের মধ্যে থাকবে, তারা প্রকৃত উম্মতে মুহাম্মদীর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকুক, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে তারাই সফলকাম।’(আলে ইমরান : ৩/১০৪)

ইবনু কাসীর (রহ.) বলেন, মুসলিম উম্মতের মধ্যে কিছু মানুষ থাকবে যারা আল্লাহর আদেশ প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। তারা মানুষকে ইসলাম, কুরআন ও সুন্নাহর পথে আহ্বান করবে, সৎকাজে উৎসাহ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। সাহাবায়ে কিরাম ও পরবর্তী ঈমানদাররা এই দায়িত্ব পালন করতেন। ইমাম বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আমি শপথ করি, আমার প্রাণ আল্লাহর হাতে, তোমরা অবশ্যই অমূল্য কর্মের আদেশ দেবে এবং অশ্লীল ও বেআইনি কাজ থেকে বিরত রাখবে; নইলে আল্লাহ শিগগিরই তোমাদের ওপর শাস্তি প্রেরণ করবেন, এরপর তুমি তাঁর কাছে দোয়া করবে কিন্তু তা গ্রহণ হবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৬৬)

এই হাদিসে সমাজে সুসঙ্গতি বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। যদি মুসলিমরা এ দায়িত্ব অবহেলা করে, শাস্তি আসতে পারে এবং তখন দোয়াও গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ তা‘য়ালা আরো বলেছেন: ‘আহলে কিতাব সবাই সমান নয়; তাদের মধ্যে এমন একদল ছিল যারা রাতের ইবাদতে স্থির ছিল, কুরআন তেলাওয়াত করত, নামাজে দাঁড়াত এবং সৎকাজে সক্রিয় ছিল।’ (আলে ইমরান : ১১৩) (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৯) থেকে : ‘যে কেউ কোনো অসৎ কাজ দেখলে তা হাতে পরিবর্তন করুক, যদি না পারে মুখে বলুক, যদি তাও না পারে অন্তরে ঘৃণা করুক আর এটিই দুর্বলতম ঈমান।’

আল্লাহ তা‘য়ালা আদেশ দিয়েছেন  ‘ন্যায়, উৎকৃষ্ট আচরণ ও আত্মীয়দের হক আদায় করতে হবে এবং অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ ও অন্যায় থেকে বিরত থাকতে হবে।’ (নাহল : ৯০) ইমাম আরো বলেন, সমাজের অরাজকতা কাটাতে প্রত্যেক মুসলিমকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করি, আল্লাহ তা‘য়ালা আমাদের কল্যাণ ও নিরাপত্তা দান করবেন। আমরা তো নিজেরাই আল্লাহর প্রদত্ত দায়িত্ব এবং তাঁর রাসূল (সা.)-এর দিকনির্দেশনা পালন করছি না; বরং যারা এই দায়িত্ব পালন করছে তাদের বাধা দিচ্ছি এবং প্রতিহত করার চেষ্টা করছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন মুসলমান হয়ে আমরা কীভাবে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান ভুলে গিয়ে অন্যকে প্রতিহত করতে পারি। এমন অবস্থায় সমাজ কীভাবে কল্যাণ ও শান্তির দিকে যাবে, ভাবতেও কষ্ট হয়। আমাদের এখনই জাগরণ প্রয়োজন ভ্রাতৃত্ব, দায়িত্বশীলতা ও আল্লাহর বিধানকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা শুধু কথা নয়, কর্মেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব।

ঢাকা শ্যামপুর জুরাইন বাইতুল জলীল জামে মসজিদের খতিব মুফতী মুহাম্মদ লিয়াকত হোসাইন বিন মুহাম্মদ আলী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্বে বলেন, ইসলাম আমাদের জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। প্রতিটি মুসলমানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আল্লাহর হেদায়েত অনুসরণ করা এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নসিহতের প্রতি মনোযোগী হওয়া। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমরা যে সিদ্ধান্তই নেই না কেন, তা যদি আল্লাহর বিধান ও রাসূলের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালনা করি, তাহলে আমাদের জীবন হবে সাফল্যময় ও শান্তিময়। আল্লাহ তা‘য়ালা মানুষের হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ আসমানী কিতাব হলো পবিত্র কুরআন। কুরআন আল্লাহ তা‘য়ালা দীর্ঘ ২৩ বছরের মধ্যে নাজিল করেছেন। আল্লাহ তা‘য়ালার সর্বপ্রথম আয়াতসমূহ হলো : ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি আঠার (কাদা-মাটির মিশ্রিত লাল আঠা) থেকে সৃষ্টি করেছেন। পড়ো, আর তোমার প্রভু সবচেয়ে দয়ালু। যিনি কলম দিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে তিনি সেই শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না।’ (সূরা আলাক : ১-৫, কুরআন)

আল্লাহ তা‘য়ালার সর্বশেষ বাণী হলো, ‘তোমরা ভয় করো সেই দিনের, যেদিন তোমাদেরকে আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে আনা হবে। অতঃপর প্রতিটি আত্মাকে তার অর্জিত ফল দেয়া হবে : এক বিন্দুরও অন্যায় করা হবে না।’ (সূরা বাকারা : ২৮১, কুরআন) এটি আল্লাহর সর্বশেষ বাণী; কেয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নতুন ওহী নাজিল হবে না। ঠিক একইভাবে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সর্বশেষ বাণীও নসিহত হিসেবে আমাদের জন্য দিকনির্দেশনা। উনার সর্বশেষ নসিহতের মধ্যে একটি হলো : ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং : ২৬১৮) যেমন প্রতিটি সন্তানের জন্য মা-বাবার ইন্তেকালের পূর্ববর্তী কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মুসলমান ও ঈমানদারের জন্য আল্লাহ ও রাসূলের বাণী অত্যন্ত মূল্যবান। সেই অনুযায়ী চলা আমাদের জন্য আবশ্যক; তবেই আমরা পূর্ণ ঈমানদার হতে পারব। খতিব বলেন, আসুন আমরা আল্লাহর সর্বশেষ আয়াত ও রাসূলের নসিহত নিয়ে চিন্তাভাবনা করি এবং সে অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা করি। আল্লাহ তা‘য়ালা যেন আমাদের বুঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ