শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫ ।। ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ২১ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ভোলা কওমী ছাত্র ঐক্য পরিষদের নতুন কমিটি ঘোষণা ‘জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দিলে কোনো নির্বাচন হবে না’ ‘ইসলামপন্থীরা জুলাই অভ্যুত্থানে শুধু অংশ নেননি, তারা এর চিন্তাও নির্মাণ করেছেন’ ‘কওমি তরুণরা নানা অহেতুক কাজে জীবন খোয়াচ্ছেন’ ঘোষিত সময়েই নির্বাচন হতে হবে: দুদু দুদক সংস্কারে আইন প্রণয়ন ১-২ মাসের মধ্যে: আসিফ নজরুল দেশের ১১ অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস খিদমাহ ব্লাড ব্যাংকের এক দশক উদযাপন কাল, প্রধান অতিথি ধর্ম উপদেষ্টা ভাঙ্গা পৌর শাখায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নতুন কমিটি গঠন সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আইনি ভিত্তি দিয়ে জুলাই সনদ প্রণয়ন করতে হবে: খেলাফত মজলিস

শরিয়তের মানদণ্ড উপেক্ষা করায় যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

|| মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী ||

দাবি-দফার আন্দোলন কখনোই একই তালে অনন্তকাল চলে না। এক পর্যায়ে এসে থামতেই হয়। কারণ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নিজের পক্ষে। সেই রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ঠুর দমননীতি যত দ্রুত বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করতে পারে, আন্দোলন তত সহজে সফল হয় না। দিনের পর দিন কর্মসূচি দিয়ে রাস্তায় টিকে থাকা যায় না; মানুষের ধৈর্যও একসময় ক্ষয় হয়ে যায়। তাই এক দফার আন্দোলনেও বিরতি আসে, বাধার মুখে ঘরে ফিরে আসতে হয়; শুরু হয় নতুন করে হোমওয়ার্ক।

কোন আন্দোলন কখন থামবে—তার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সৎ, যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কাজ। সময়মতো থামতে না পারলে পরে ঘুরে দাঁড়াতে অনেক সময় লাগে। দমন-পীড়ন, জেল-জুলুমের মুখে পড়ে অনেক সময় স্বৈরাচারকে তার প্রাপ্যের চেয়েও বেশি সময় ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়। আর যদি ভয় বা প্রলোভনের আঘাতে দলের ভেতরে ফাটল ধরে, বিশৃঙ্খলা ছড়ায়—তবে সেই দল প্রায়শই আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।

কিন্তু এখানেই বড় ঝুঁকি—আন্দোলন যদি হঠাৎ থেমে যায়, মাঠের কর্মীরা প্রায়ই মনে করেন, ‘নেতা বিক্রি হয়ে গেছে! নিশ্চয় আঁতাত করেছে!’ তখন ক্ষোভ জন্ম নেয়, বিশ্বাস ভেঙে যায়, এমনকি নেতাদের বিরুদ্ধেই স্লোগান ওঠে। মাঠ পর্যায়ের এই অবিশ্বাস ও ক্ষোভের যেমন বাস্তবতা আছে, তেমনি অনেক সময় তা হয়—চুন খেয়ে মুখ পুড়েছে বলে দই দেখলেই ভয় পাওয়ার মতো।

আমার মতে— কোনো কর্মসূচি দিয়ে নয়, বরং চরিত্র দিয়েই নেতৃত্ব যাচাই করা উচিত। আজকাল রাজনীতির ময়দানে বাহিরে এক রূপ, ভেতরে আরেক রূপ—এই দ্বিচারিতা ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই বাহ্যিক শপথ, গর্জে ওঠা ভাষণ কিংবা নাটকীয় কর্মসূচিতে নয়—নেতার সততা, আমানতদারি ও নৈতিকতার ওপর আস্থা রাখতে হবে।

১৩-তে আমরা কেন স্বাভাবিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারলাম না? ২১ শে কয়েকজন আলেম নেতৃত্ব গ্রেফতার হওয়ার পরে মাঠ কেন তছনছ হয়ে গেল? আন্দোলন করে নেতাদের মুক্ত করা তো দূরের কথা গতানুগতিক আন্দোলন চালানো কেন সম্ভব হচ্ছিল না? আমাদের নেতৃত্বের অক্ষমতার জায়গা কী ছিল? মাঠের প্রত্যাশা অনুযায়ী নেতারা কি অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলেন? না মাঠে চরম অবিশ্বাস কাজ করছিল? আন্দোলনের কোন অংশে নেতৃত্বের নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছিল? কর্মসূচি গ্রহণের আগেই নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কি, যে চাপ আসলে নতজানু হয়ে যাবে? কোন পর্যায়ের নেতৃত্ব কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে অনধিকার চর্চা করেছিল? সংগঠনের ওপর শীর্ষ নেতৃত্বের কতটা প্রভাব কিংবা নিয়ন্ত্রণ ছিল? ক্ষুদ্র ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া আর সর্বাত্মক আন্দোলন কি এক জিনিস? এবং আমরা কেন ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারি না?

আমাদের বড় একটা ব্যর্থতা হলো—নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা নিজেরা কিছু মানদণ্ড ঠিক করলেও শরিয়ত একজন নেতার জন্য যে গুণাবলি নির্ধারণ করেছে তা প্রায়ই উপেক্ষা করছি। ফলশ্রুতিতে আদর্শ নেতা তৈরি হচ্ছে না।

সৎ নেতৃত্ব বেছে নিতে হলে আগে নিজেদেরকে সেই নেতৃত্বের যোগ্য অনুসারী হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। কেননা যেমন যোগ্য নেতার হাতে গড়ে ওঠে যোগ্য কর্মী—তেমনি যোগ্য কর্মীরাই পারে যোগ্য নেতাকে বেছে নিতে এবং পরবর্তীতে যোগ্য কর্মী থেকেই যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
লেখক: মহাসচিব, ইসলামী ঐক্যজোট

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ