মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১৯ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭


স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অপরিহার্য: ধর্ম উপদেষ্টা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অপরিহার্য বলে মনে করেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে অনুষ্ঠিত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কল্পজাহাজ ভাসনা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলেন, কোনো দুষ্টচক্র যাতে আমাদের ভালোবাসা, সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে—এ জন্য আমাদের সজাগ ও প্রতিরোধী হতে হবে। সম্প্রীতিই শান্তি, যার দেশে সম্প্রীতি নেই, সেখানে উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা আসে না।

এই উৎসবের স্লোগান ছিল—‘সম্প্রীতির জাহাজে, ফানুসের আলোয় দূর হোক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার।’

বাঁকখালী নদীতে অপূর্ব কারুকাজে সাজানো সাতটি কল্পজাহাজ নৌকায় বসিয়ে একসঙ্গে ভাসানো হয়, যেগুলো দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হন। বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙিন কাগজ দ্বারা তৈরি প্রতিটি জাহাজে বিহার, জাদি, হাতি, ঘোড়া, ময়ূর, হাঁস, ড্রাগনসহ নানা প্রাণির ভাস্কর্য ও নকশা ফুটে ওঠে। জাহাজগুলোতে চলে বৌদ্ধ কীর্তন, গান-বাজনা ও ঢোল-ফানুস ও আলোয় সন্ধ্যার নদীবৃত্তি রঙিন হয়ে ওঠে। বিকেলে হাজারো দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে উৎসবটি সাম্প্রদায়িক মিলনের এক প্রাণবন্ত ছবি হয়ে ওঠে।

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও কল্পজাহাজ ভাসা উৎসব উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক উচ্ছাস বড়ুয়া বলেন, এবার চারটি ইউনিয়ন ও আশপাশের বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রাম থেকে সাতটি কল্পজাহাজ অংশগ্রহণ করে। উৎসবটি প্রতি বছর প্রবারণা পূর্ণিমার পর দিন বাঁকখালী নদীতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষ পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু উৎসবটির ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, এই প্রথা প্রথম শুরু হয়েছিল প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের মুরহনঘা অঞ্চলে। প্রায় দুইশত বছর আগে মংরাজ ম্রাজংব্রান নামক এক ব্যক্তি নদীতে জাহাজ ভাসানোর মাধ্যমে উৎসবটি চালু করেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের প্রাসঙ্গিক কাহিনী স্মরণ করিয়ে দেন। বৈশালীর দুর্ভিক্ষ ও প্রলয়ের প্রসঙ্গে বুদ্ধের উপস্থিতি ও উপদ্রব নিরসনের ঘটনাকে স্মরণ রেখে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়। সেই স্মৃতিচারণ থেকে উদ্ভূতই কল্পজাহাজ ভাসানো ঐতিহ্য।

উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী রিজন বড়ুয়া বলেন, এটি আমাদের প্রাণের উৎসব। যদিও উৎসবটি বৌদ্ধধর্মীয়, তবুও প্রতি বছর এটি অসাম্প্রদায়িক এক মিলনমেলায় রূপ নেয়।

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক মিথুন বড়ুয়া বোথাম বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমা আত্মশুদ্ধি ও আদর্শ জীবন পরিচালনার বার্তা দান করে। তাই এই উৎসব কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সমাজে ন্যায়, সমবেদন ও ঐক্যের প্রতীক।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ