পবিত্র রবিউল আউয়াল উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজন করেছে পক্ষকালব্যাপী ওয়াজ মাহফিলসহ নানা অনুষ্ঠানের। ওয়াজ মাহফিলে প্রতিবার কওমি ও আলিয়া উভয় ঘরানার বক্তাদের একটা ভারসাম্য থাকলেও এবারের আয়োজনে অনেকটা উপেক্ষিত কওমি মাদরাসা।
বক্তাদের তালিকায় ২৫ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে আটটি আলিয়া মাদরাসা, চারটি দরবারের নাম রয়েছে। দুই-চারজন বাদে বাকিরাও আলিয়া মাদরাসারই। অথচ সেখানে নেই কোনো কওমি মাদরাসার নাম। কওমি ব্যাকগ্রাউন্ডের কয়েকজন আলেমের নাম থাকলেও সেটা এসেছে অন্য পরিচয়ে। ফলে এই তালিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
গতকাল বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এই তালিকাটি সামনে আসার পর থেকে অনলাইনে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অনেকে এর জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্তৃত্ব এখন জামায়াতের লোকদের হাতে। এজন্য তারা নিজেদের পছন্দের লোকদেরই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
কেউ কেউ ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনকেও দায়ী করছেন। তারা বলছেন, কওমিপন্থীদের সমর্থনে তিনি উপদেষ্টা হয়েছে। অথচ কওমিপন্থীরাই এখানে উপেক্ষিত। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে এটা প্রত্যাশিত না।
আবার কেউ কেউ যুক্তি দেখাচ্ছেন, এখানে যাদের সরকারি সার্টিফিকেট আছে তাদেরই রাখা হয়েছে। কওমি মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের যেহেতু সার্টিফিকেট নেই এজন্য তাদের রাখা হয়নি। যদিও তাদের এই যুক্তি ঠুনকো বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন নেটিজেনরা। তারা বলছেন, এখানে সার্টিফিকেটের কোনো বিষয় নেই। সাধারণ জনগণের উদ্দেশে বয়ান করার জন্য সার্টিফিকেটের কোনো দরকার পড়ে না। বহু বছর ধরে কওমি ধারার স্বীকৃত আলেমরা এই আয়োজনে অতিথি হয়ে আসছেন। তখনও তাদের সার্টিফিকেট ছিল না। তাছাড়া কওমি মাদরাসার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে চাইলে সার্টিফিকেট আছে এমন বহু আলেমও আছেন। এখানে অনেকটা ইচ্ছা করে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
অনেকে বলছেন, এদেশের ধর্মীয় অঙ্গনে আলিয়া মাদরাসার চেয়ে কওমির অবদান অনেক বেশি। এমনকি আলিয়া মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা পর্যন্ত এটার স্বীকৃতি দেন। আলিয়া মাদরাসাপড়ুয়ারা যখন নিজেদের শিকড় ভুলে সাধারণ ধারায় মিশে যাচ্ছে তখন কওমি মাদরাসাপড়ুয়ারা নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে দীনের ঝান্ডা ধরে রেখেছেন। এদেশের মানুষকে দীনের আলোয় আলোকিত করারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই আয়োজনটিতে বরাবরই কওমি ও আলিয়া দুই ধারার আলেমদেরই প্রতিনিধিত্ব থাকে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় সেটা প্রায় সমান সমান ছিল। এমনকি আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালেও এই আয়োজনে কওমি ধারার আলেমদের সরব উপস্থিতি ছিল। তখন অবশ্য কিছু মাজারপন্থী আলেমের উপস্থিতি ছিল। এবারের আয়োজনে যেভাবে কওমিপন্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে এর কোনো উদাহরণ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বৈষম্যহীন বাংলাদেশে এটাকে চরম দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন আলেমরা।
ইফার তালিকায় কাদের নাম এসেছে দেখে নিন একনজরে-
ড. মুফতী আবুল কালাম আজাদ বাশার
মুহাদ্দিস, মদীনাতুল উলূম কামিল মাদ্রাসা, ঢাকা
আলহাজ্ব মাওলানা রুহুল আমিন আফসারী
প্রিন্সিপাল, ছারসিনা দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসা, পিরোজপুর
প্রফেসর ড. মাওলানা আতাউর রহমান মিয়াজী
অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান
অধ্যক্ষ, তামিরূল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদরাসা, ডেমরা, ঢাকা
হাফেয মাওলানা লুৎফুর রহমান
খতীব, নিউমার্কেট সেন্ট্রাল সিটি জামে মসজিদ, ঢাকা
ড. মুফতি কামরুল হাসান শাহিন
খতিব, আল বাছীর জামে মসজিদ, আশকোনা, ঢাকা
মুফতি শায়েখ উসমান গনি সালেহী
মুহাদ্দিস, দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা, ঢাকা
মাওলানা মুফতি মাহবুবুর রহমান
মুহাদ্দিস, মহাখালী হোসাইনিয়া কামিল মাদ্রাসা
মুফতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন আল-আজহারী
অধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদ্রাসা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা প্রফেসর মাওলানা মুখতার আহমদ
প্রফেসর, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
ড. মোরশেদ আলম সালেহী
খতিব, শ্যামলী শাহী জামে মসজিদ, ঢাকা
মুফতি মাওলানা মোঃ মুজির উদ্দিন
অধ্যক্ষ, মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট মহিলা কামিল মাদ্রাসা, ঢাকা মুফতি মাওলানা সিরাজুল হক
খতিব, সড়ক ও জনপথ স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদ, শ্যামলী, ঢাকা মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক
খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা মু
মুফতি নুরুজ্জামান নোমানী
চেয়ারম্যান, ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার, ঢাকা
ড. মাওলানা শহীদুল হক
সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য, যাকাত বোর্ড
মাওলানা মুফতি মাহমুদুর রহমান
অধ্যক্ষ, সোনাকান্দা বহুমুখী আলিয়া কামিল মাদ্রাসা ও পীর সাহেব
মাওলানা মোশতাক ফয়েজী,
পীর সাহেব, নাগাইশ দরবার শরীফ, কুমিল্লা
মুফতি নজরুল ইসলাম কাসেমী
শাহজাদা লেন জামে মসজিদ, ঢাকা
শাহ্ সূফী আল্লামা আবদুল মোমিন নাসেরী পীর সাহেব,
মীর সরাই দরবার শরীফ, চট্টগ্রাম
মুফতী মাওলানা মিজানুর রহমান
সিনিয়র পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন
মাননীয় উপদেষ্টা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মুফতী মাওলানা মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী
পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা
মাওলানা মোঃ কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী
পীর সাহেব, টেকেরহাট, মাদারীপুর
মুফতি ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী
গদ্দিনীশীন পীর, আব্বাসী মঞ্জিল, জৌনপুর দরবাদ শরীফ, নারায়ণগঞ্জ
এসএকে/