শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭


দ্রুত বিকাশমান বিশ্ববাজারে যৌথভাবে হালাল পণ্য উৎপাদন করতে পারে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ: ড. ইউনূস


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

দ্রুত বর্ধনশীল বৈশ্বিক হালাল পণ্যের বাজারে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া যৌথভাবে কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, হালাল পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ ও সুবিধা কাজে লাগাতে।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বারনামা বার্তাসংস্থাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন,
"আমাদের সম্পদ একত্র করতে পারলে হালাল খাত হবে ঢাকা ও পুত্রজায়ার মধ্যে অংশীদারত্ব বৃদ্ধির সবচেয়ে স্বাভাবিক ক্ষেত্র।"

১১ থেকে ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে দেশটিতে অবস্থান করেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, হালাল সার্টিফিকেশন ও ব্র্যান্ডিংয়ে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের জমি, শ্রমশক্তি ও অবকাঠামোর সমন্বয় হালাল শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই সহযোগিতা দুই দেশকেই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবে।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বারনামার প্রধান সম্পাদক অরুল রাজু দুরার রাজ, সঙ্গে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সার্ভিসের সম্পাদক ভুন মিয়াও পিং এবং বারনামা ইকোনমিক সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক কিশো কুমারি সুসেদারাম।

ড. ইউনূস বলেন, "হালাল বাজার কেবল বাংলাদেশ বা মালয়েশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি বৈশ্বিক বাজার—যেখানে প্রায় ২০০ কোটি মুসলমান ভোক্তা রয়েছেন।"

বাজার বিশ্লেষক সংস্থাগুলোর মতে, স্বচ্ছ লেবেল, নৈতিকভাবে উৎপাদিত এবং স্বাস্থ্যসম্মত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি হালাল বাজারের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।

বাংলাদেশ সফরে আসছে মালয়েশীয় প্রতিনিধি দল

ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করে বলেন, মালয়েশীয় বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই সম্ভাব্য যৌথ উদ্যোগগুলো যাচাই করতে বাংলাদেশ সফর করবে। তিনি বলেন,
"আমরা প্রয়োজনীয় জনশক্তি সরবরাহে প্রস্তুত। হালাল পণ্য উৎপাদনে মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সহজে কারখানা স্থাপন করতে পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।"

তিনি আরও বলেন, "হালাল শিল্প একটি দ্রুত বর্ধনশীল খাত। আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। আপনারা আসুন, আমরা শ্রমিক দেব, জমি দেব, সহায়তা করব।"

যৌথ উদ্যোগে লাভবান হবে উভয় দেশ

ড. ইউনূস মনে করেন, বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত তরুণ শ্রমশক্তি মালয়েশিয়ার শ্রমিকসংকট মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে। তিনি বলেন,
"আপনাদের যেসব পণ্য উৎপাদন করতে শ্রমিক দরকার, তা বাংলাদেশে উৎপাদন করা সম্ভব। এখানেই রয়েছে ১৭ কোটির বেশি মানুষের বড় বাজার, যা পণ্যের স্থায়ী ক্রেতা হিসেবে কাজ করবে।"

হালাল খাত ছাড়াও গার্মেন্টস, সেমিকন্ডাক্টর, সামুদ্রিক অর্থনীতি, ডিজিটাল সেবা ও আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যসহ আরও বিভিন্ন খাতে দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ

মালয়েশিয়া সফরে ড. ইউনূস দেশটির ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, হালাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনসহ প্রোটন হোল্ডিংস, সানওয়ে গ্রুপ, অজিয়াটা গ্রুপ বিহাড এবং খাজানাহ ন্যাশনাল বিহাড-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এ ছাড়া সফরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও ড. ইউনূস বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শ্রমশক্তি, শিক্ষা, পর্যটন, প্রতিরক্ষা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও পরিসংখ্যান

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এখন মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ও রপ্তানির গন্তব্য।
২০২৪ সালে দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য ৫.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৩৫ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (প্রায় ২.৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

মালয়েশিয়ার রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে: পাম তেল, রাসায়নিক পণ্য, 

বাংলাদেশ রপ্তানি করে: তৈরি পোশাক, জুতা, পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যসহ অন্যান্য উৎপাদিত পণ্য

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ