আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের রমজানের আগে নির্বাচনের আয়োজন করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠানো হবে।
গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, “আজ থেকে আমরা একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করছি।” তিনি জানান, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর হয়, সে জন্য সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
ভাষণে ভোটের পরিবেশ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, “এবারের নির্বাচন যেন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আনন্দঘন ও অংশগ্রহণমূলক হয়, সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।” তিনি প্রবাসী ও নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, “ভোটের দিনকে ঈদের মতো আনন্দময় করতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে অনেক নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো যারা ভোট দেবেন, তাদের জন্য এই দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে চান তিনি।
ভাষণে অতীতের সহিংসতা ও সংঘাতের পেছনে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান দেখিয়ে দিয়েছে গায়ের জোরে ক্ষমতায় আসার পরিণতি কী হতে পারে।” তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, “একটি গোষ্ঠী নির্বাচন ব্যাহত করার অপচেষ্টা করছে, কিন্তু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই তাদের পরাজিত করবে।”
জনগণের মতামত, আশঙ্কা ও পরামর্শ গ্রহণের জন্য একটি অ্যাপ চালুর ঘোষণা দিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে সবাই যেন সরাসরি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, সেই ব্যবস্থাই করা হচ্ছে।
ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ইশতেহারে যেন তরুণ ও নারীরা প্রাধান্য পায়। তারাই বাংলাদেশ ও বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।” ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যারা ভোট দিতে পারেননি এতদিন, এবার তাদের জন্য মহা আনন্দের দিন আসছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্ব ছিল—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। তিনি জানান, “জুলাই সনদ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে বহু সংস্কার ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”
জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, “এই বিচার হবেই। শুনানি শুরু হয়েছে এবং পুরো প্রক্রিয়া জনসমক্ষে স্বচ্ছভাবে প্রকাশিত হবে।”
ভাষণের একদম শেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ফেব্রুয়ারি বেশি দূরে নয়। সবাই যেন ভোট দিতে পারে, কেউ যেন বাদ না পড়ে, আমরা সবাই যেন বলতে পারি—নতুন বাংলাদেশ গড়ার যাত্রায় আমি আমার ভোট দিয়েছি।”
এসএকে/