‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে এক ভিডিওবার্তায় ভাষণ দিয়েছেন। তিনি এই দিনকে স্মরণ করেছেন জাতির পুনর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে এবং শপথ নিয়েছেন একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়ার।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট শুধু একটি দিন নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা, একটি গণজাগরণের প্রতিচ্ছবি। এদিনই ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে জাতি নতুন সম্ভাবনার পথে যাত্রা শুরু করে।”
তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং বলেন, “স্বাধীনতা অর্জনের পাঁচ দশক পরও এ দেশের মানুষ যখন সুবিচার, সমতা ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত ছিল, তখন ২০২৪ সালের জুলাই ছিল ষোল বছরের ক্ষোভের বিস্ফোরণ।”
ভাষণে তিনি তুলে ধরেন কিভাবে চাকরির ক্ষেত্রে দুর্নীতি, ঘুষ, স্বজনপ্রীতি ও কোটা বৈষম্যের কারণে তরুণ প্রজন্ম হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছিল। বলেন, “যে তরুণ ঘুষ দিতে পারেনি, মাফিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে পারেনি, তার চাকরি হয়নি। এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বছরের পর বছর প্রতিবাদ হলেও, সেদিনকার সরকার কর্ণপাত করেনি।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল। হাজারো তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়, গুম করা হয়, আহতদের চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়।”
তিনি গভীর শ্রদ্ধা জানান ‘জুলাই শহীদদের’ প্রতি এবং তাঁদের আত্মত্যাগকে ‘জাতির পাথেয়’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য সরকারী সহায়তা:
প্রধান উপদেষ্টা জানান, গত ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে শহীদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ পর্যন্ত—
৮৩৬টি শহীদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫টি পরিবারকে ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা বাবদ ব্যাংক চেক হস্তান্তর করা হয়েছে।
১৩,৮০০ জন আহত জুলাই যোদ্ধাকে তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে ১৫৩ কোটি ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
৭৮ জন গুরুতর আহত যোদ্ধাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে; এ পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয়েছে ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
তিনি জানান, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতালে আহতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্তও কার্যকর হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আজ আমরা শুধু অতীত স্মরণ করছি না—আমরা শপথ নিচ্ছি কোনো নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াব না। আমরা প্রতিষ্ঠা করব একটি মানবিক, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা—যা সব সময় জনগণের কল্যাণে কাজ করবে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। তাঁদের স্বপ্নই হবে আমাদের আগামী বাংলাদেশের ভিত্তি।”
ভাষণের শেষাংশে তিনি মহান আল্লাহর রহমত কামনা করেন এবং দেশের ভবিষ্যতের জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
এসএকে/