সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৩০ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বৈরুতে ইসরাইলি ড্রোন হামলা, বহু হতাহতের আশঙ্কা ‘পাকিস্তানের পক্ষে ২ কোটি শিখ’, ভারতকে হুঁশিয়ারি খালিস্তানি নেতার জামায়াতের সাথে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হজসেবায় অত্যাধুনিক মোবাইল অ্যাপ ‘লাব্বাইক’ চালু হচ্ছে সোমবার  নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তসলিমা নাসরিনের দোসর : আমিরে মজলিস দাওরায়ে হাদিস পাসে চাকরি দিচ্ছে বোনাফাইড টেক্সটাইল ইসলামি দলগুলোর নির্বাহী কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা দরকার সংস্কার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না : খেলাফত আন্দোলন ‘ইসলামি দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার যে সূচনা হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে’ ‘ইসলামীবিরোধী নারী কমিশন বাতিল করতে হবে’

‘ইসলামি দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার যে সূচনা হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
যুক্তরাজ্য প্রবাসী ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ

|| ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ ||

যুক্তরাজ্য প্রবাসী ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ দীর্ঘদিন ধরে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জমিয়তের সদ্য গঠিত কমিটিতেও তিনি যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন। পাশাপাশি ইউকে জমিয়তের সভাপতি। গণমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। রাজনীতি নিয়ে তাঁর রয়েছে বিশেষ ভাবনা। আলেম-উলামা ও এদেশে ইসলামের ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি চিন্তা করেন। এসব ভাবনা-চিন্তা বিনিময় করেছেন আওয়ার ইসলামের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলাম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব।

আওয়ার ইসলাম: আপনি দীর্ঘদিন যাবত জমিয়তের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অন্যান্য ইসলামি দল থাকতে এই দলকে বেছে নেওয়ার কারণ কী?

ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ: অন্যান্য ইসলামি দল থেকে আমি জমিয়তকে বেছে নিয়েছি বেশ কয়েকটি কারণে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো- জমিয়ত এ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সংগ্রামে একমাত্র স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকারী ইসলামি দল। দ্বিতীয়ত জমিয়ত  হলো আমাদের ভারত উপমহাদেশের আকাবির ও আসলাফের গঠন করা সংগঠন। যেই আকাবিরদের রক্ত ঝরানো ত্যাগের বিনিময়ে এ দেশে ইসলাম বিস্তার, প্রচার-প্রসার লাভ করেছে তাদেরই হাত ধরে রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়ত প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তৃতীয়ত জমিয়ত প্রতিষ্ঠা হওয়া থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যুগের সব বরেণ্য আকাবিরগণ জমিয়ত করতেন, করছেন এবং সামনেও যুগের বরেণ্য আলেমগণ জমিয়ত করবেন ইনশাআল্লাহ। 

আওয়ার ইসলাম: অন্যান্য রাজনীতিতে দৃশ্যমান প্রাপ্তি থাকে। ইসলামি রাজনীতি আপনারা যারা করেন আপনাদের প্রাপ্তি কী?

ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ: আসলে আমাদের দেশে ইসলামি রাজনীতির অন্যান্য প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মতো দৃশ্যমান তেমন কোনো প্রাপ্তি নেই। এটা যে কেউ স্বীকার করবে। তবে আমি মনে করি এ দেশের ইসলামি রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সাধারণত যেই লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তাতে তারা অনেকাংশেই সফল। সেই লক্ষ্য উদ্দেশ্যের সাথে সাথে দৃশ্যমান যে প্রাপ্তি রয়েছে সেটাও কোনো অংশে কম দেখার মতো নয়৷ এ দেশের আলেম উলামাগণ এ দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সভা তথা সংসদে গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, এমপি হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। এবং বর্তমানেও একজন আলেম এ দেশের মন্ত্রণালয় অত্যন্ত চমৎকারভাবে চালাচ্ছেন।

আওয়ার ইসলাম: যতদূর জেনেছি আপনি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আপনার প্রস্তুতি কেমন এবং কতটুকু আশাবাদী?

ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ: আমি বিগত প্রায় ৩০ বছর যাবত আমার সংসদীয় আসনে বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। জনগণের দুর্যোগে, দুর্ভোগে সব সময় পাশে থেকে নিজ সাধ্যের সবটুকু করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি জনগণ আমার এই সকল কাজের মূল্যায়ন করবেন। আপনার জেনে থাকবেন, ইতোমধ্যেই আমি আমার সংসদীয় আসনের উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছি৷ আশা করছি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যদি ফেয়ার ইলেকশন হয় তাহলে সুনামগঞ্জ-২ (শাল্লা-দিরাই) এলাকার জনগণ আমাকেই তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে। আমি স্বৈরাচার পতনের পর বিগত দিনে যতগুলো সমাবেশ করেছি সব জায়গায় সাধারণ মানুষের এখন কথা একটাই এবার আর তারা কোনো ভুল করবে না। তারা বিগত সময় থেকে শিক্ষা নিয়েছে। এবার একজন নীতিবান মানুষকেই তারা নির্বাচিত করবে। এই যে একটা জোয়ার উঠেছে, এই জোয়ার ইনশাআল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বাস্তবায়িত হবে।

আওয়ার ইসলাম: শেষ পর্যন্ত ইসলামি দলগুলো একটি বাক্সে তাদের ভোট জমা করতে পারবে বলে মনে করেন কি? এ ক্ষেত্রে কী কী বাধা দেখছেন?

ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ: আপনারা দেখেছেন, গত দুই দিন আগে সকল ইসলামি দল সম্মিলিত মিটিং করেছে। এতে আমরা অনেকটাই আশাবাদী। আশা করছি এবার সকল ইসলামি দল একত্রে একবাক্সে ভোট জমা করতে পারবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা আমার কাছে মনে হচ্ছে সেটা হচ্ছে, আমাদের পরস্পর বোঝাপড়া খুবই কম। যদি নিজেদের মধ্যে পরস্পর বোঝাপড়াটা বাড়ানো যায় তাহলে যেকোনো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এখন কথা হচ্ছে, পরস্পর বোঝাপড়ার যেই সূচনা হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে।

আওয়ার ইসলাম: আপনি দীর্ঘদিন যাবত যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। অনেকে সেখানকার স্থানীয় রাজনীতি করছেন। আপনি সেই রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়াননি কেন?

ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ: অনেকে অনেক বিবেচনায় সেখানের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বাকি আমি সবসময় আমার জন্মভূমি আমার প্রিয় মাতৃভূমি এবং মাতৃভূমির মানুষের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখি। আমি স্বপ্ন দেখি আমার মাতৃভূমির মানুষ নিজেদের দুঃখ-দুর্দশা গুছিয়ে শান্তিতে দিনাতিপাত করবে। আর আমার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন নিজ দেশে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। যদি বিদেশের রাজনীতিতে জড়িত হই, তাহলে আমার কাছে মনে হয়েছে আমার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধক। তাই বিদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হইনি।

আওয়ার ইসলাম: পশ্চিমা কালচারে বসবাস করতে গিয়ে আপনাদের কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়?

ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ: এটা সকলের জানা যে, পৃথিবী আপন ধ্বংসের দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই জায়গা থেকে পশ্চিমা বিশ্বসহ আধুনিক বিশ্বে সবাই নিজ আগ্রহে দীন নিয়ে চলতে পারলেও নিজের আগামী প্রজন্মকে কতটুকু দীন ধর্মের ওপরে রেখে যেতে পারবে সেটা সবার জন্যই চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এছাড়া কোনো কিছু আমার কাছে তেমন চ্যালেঞ্জিং মনে হয়নি।

আওয়ার ইসলাম: আপনি মাওলানা মহিউদ্দীন খান রহ.-এর ঘনিষ্ঠভাজন ছিলেন। তাঁর অনেক কাজের সহযোগী ছিলেন। তাঁকে নিয়ে সংক্ষেপে স্মৃতিচারণ করুন। 

ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ: মাওরানা মহিউদ্দীন খান সাহেবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ, এটা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ব্যাপারে। তবে মোটাদাগে যেই কথাটা বলা যায় সেটা হচ্ছে, তিনি ছিলেন স্বচ্ছ হৃদয়ের অধিকারী এক মহান ব্যক্তিত্ব। তাঁর হৃদয়ে অন্য মানুষকে নিয়ে কোনো কপটতা ছিল না। দ্বিতীয়ত তিনি তরুণদের কাজের ময়দানে এগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন, যেটা বর্তমান অনেক মুরব্বির ক্ষেত্রে বিরল। 

আওয়ার ইসলাম: শিল্প-সাহিত্য ও গণমাধ্যম বিষয়ে আপনার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। এই অঙ্গনে কোনো খেদমতের পরিকল্পনা আছে কি?

ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ: যদি আমি নির্বাচিত হই তাহলে ইনশাআল্লাহ শিল্প-সাহিত্যের আধুনিকায়ন এবং গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতার ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবো এবং সামনে যেন অন্ততপক্ষে গণমাধ্যম দলীয় না হয়ে স্বাধীনভাবে দেশ ও জনগণের পক্ষে কাজ করতে পারে সে ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করব ইনশাআল্লাহ। 

আওয়ার ইসলাম: সামগ্রিকভাবে নতুন বাংলাদেশে এদেশের দীনদার মুসলমানদের সামনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ: বিভিন্ন সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্টগুলো দেখলেই আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারবো, আমাদের দেশের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ কী? সেটার জন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে, সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। এদেশে যেন কেউ কোনোভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে পশ্চিমাদের বস্তাপচা সভ্যতা-সংস্কৃতি আমদানি করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকে হতে হবে চৌকস।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ