দক্ষিণ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তীব্র তাপদাহ ও ভয়াবহ দাবানলে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আগুনে বহু মানুষ গৃহহীন হয়েছেন, হাজার হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হয়েছে।
ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল ও বলকান অঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকির সতর্কতা হিসেবে জারি করা হয়েছে ‘রেড হিট অ্যালার্ট’। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বুধবার (১৩ আগস্ট) এ তথ্য জানানো হয়।
স্পেনের সেভিয়া ও কর্ডোভায় তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি ছুঁতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ অ্যামেত। দক্ষিণ পর্তুগালেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মাদ্রিদের কাছে ত্রেস কান্তোস এলাকায় প্রবল বাতাসে ছড়িয়ে পড়া আগুন শত শত মানুষকে সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে। সেখানেই একটি অশ্বকেন্দ্রের কর্মী আগুনে পুড়ে প্রাণ হারান।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ জানান, দমকল ও উদ্ধারকর্মীরা নিরলসভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল কাস্তিয়া ও লিওনে প্রায় চার হাজার মানুষকে সরানো হয়েছে এবং ৩০টির বেশি স্থানে দাবানল দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে একটি আগুন ইউনেসকো ঘোষিত ঐতিহাসিক স্থান লাস মেদুলাসের কাছে পৌঁছেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় আন্দালুসিয়ার তারিফা শহরে পর্যটন এলাকা থেকে আরও দুই হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে প্রায় এক হাজার সেনা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
পর্তুগালে তিনটি বড় দাবানলের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহটি ছিল মধ্যাঞ্চল ত্রানকোসোর কাছে, যা মঙ্গলবার নিয়ন্ত্রণে আসে। সেখানে ১৩০০-এর বেশি দমকলকর্মী, ১৪টি বিমান এবং মরক্কোর পাঠানো দুটি বিমান আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে এবং রাতেও ২৫ ডিগ্রির নিচে নামবে না বলে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ।
ইতালিতে সোমবার হিটস্ট্রোকে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোম, মিলান ও ফ্লোরেন্সসহ অন্তত ১০টি শহরে ‘রেড হিট অ্যালার্ট’ জারি রয়েছে। সার্ডিনিয়ায় গাড়িতে অচেতন অবস্থায় পাওয়া চার বছরের এক রোমানিয়ান শিশুকে হেলিকপ্টারে হাসপাতালে নেওয়া হলেও তার মৃত্যু হয়।
ফ্রান্সের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকায় হিট অ্যালার্ট জারি হয়েছে। প্যারিসে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি এবং রোন উপত্যকায় ৪০ ডিগ্রি ছাড়াতে পারে। গ্রিসে প্রবল বাতাসে ১৫০টিরও বেশি দাবানল জ্বলছে। প্রায় পাঁচ হাজার দমকলকর্মী ও ডজনখানেক বিমান আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। পর্যটন দ্বীপ জাকিনথস ও পশ্চিম আচাইয়ায় বহু মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তুরস্কে চানাক্কালে ও ইজমিরের কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আসলেও শত শত মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। মন্টেনেগ্রোতে আগুন নেভানোর সময় পানিবাহী ট্যাঙ্কার উল্টে এক সেনার মৃত্যু হয়েছে। আলবেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়াতেও দাবানল মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছে।
যুক্তরাজ্যেও তাপদাহে তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে, অ্যাম্বার ও ইয়েলো হিট হেলথ অ্যালার্ট জারি রয়েছে। লন্ডনে দুটি স্থানে ঘাসে আগুন লেগে ১৭ একরের বেশি এলাকা পুড়ে গেছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম আরও গরম ও শুষ্ক হয়ে পড়ছে, যা দীর্ঘ ও তীব্র দাবানলের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এসএকে/