কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আত্মীয়কে হলে প্রবেশ করানোর সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে বিজয়-২৪ হলের ৩০৫ নম্বর কক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাংবাদিকের হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক গ্রুপগুলোতেও সংবাদ প্রকাশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা সমালোচনা দেখা যায়।
গতকাল বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে এই হট্টগোলের ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নেই কার্যত কোনো গেস্টরুম।
ফলে পরিবারের লোকজন দেখতে এলে তাদেরকে নিয়ে প্রায়ই বিপাকে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিনেও সেই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় আত্মীয়স্বজন এলে তাদেরকে কিছু সময়ের জন্য শিক্ষার্থীদের নিজের রুমেই বিশ্রামের সুযোগ করে দিতে হয়। তবে হল প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত হলে কোনো বহিরাগতের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া রয়েছে।
গতকাল বুধবার বিজয়-২৪ হলের ৩১২ নম্বর কক্ষে বিনা অনুমতিতে তিন জন বহিরাগতকে নিজ কক্ষে প্রবেশ করানোর অভিযোগ উঠে অর্থনীতি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অন্তু দাসের বিরুদ্ধে।
অন্তু দাসের দাবি, ওই তিন জন সম্পর্কে তার আপন খালা, খালু এবং খালাতো ভাই হন। উনারা একটি কাজে এসে হঠাৎ ভার্সিটিতে আসায় যথেষ্ট সময় না পাওয়ায় হল প্রশাসনকে জানাতে পারেননি। তার দাবি, হলে কোনো প্রকার অতিথি কক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়েই কিছু সময়ের জন্য তাদের তার রুমে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সাংবাদিকরা আসার পরক্ষণেই তিনি হল প্রশাসনকে অবগত করেছেন।
এই ঘটনা নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে সংবাদ প্রকাশকে তিনি মানহানিকর এবং প্রকৃত সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থী হিসেবে দাবি করছেন।
ওই ঘটনায় অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কুমিল্লা নিউজের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি বি. এম. ফয়সাল নামের একজন সাংবাদিক সংবাদটি প্রকাশ করেন। তার দাবি, তিনি কোনো ভুল সংবাদ প্রকাশ করেননি। হলে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ, এটা হল প্রশাসনও জানে। সেখানে শিক্ষার্থীরা আবেগতাড়িত হয়ে রাতে তার ওপর মব সৃষ্টির চেষ্টা করে। তাকে হেনস্তা করেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, সেই সংবাদে বিনা অনুমতিতে ছবি তুলে প্রকাশ করা হয়েছে অভিযোগ তোলে শিক্ষার্থীরা গতরাত পৌনে ১২টার দিকে ওই সাংবাদিকের রুমে (৩০৫ নম্বর কক্ষ) যান। তখন রুমের বাকি সদস্যরা বাঁধা দিলে সেখানে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে হলের প্রাধ্যক্ষ এবং হাউজ টিউটররা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
অন্তু দাস বলেন, ‘গতকালের ইস্যু নিয়ে যে সংবাদটি করেছে সেটি আমার ও আমার পরিবারের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক, লজ্জাজনক ও মানহানিকর। প্রভোস্ট স্যার সমাধান করার পরও সাংবাদিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার খালার পরিবারের ছবি দিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যসহ নিউজ প্রকাশ করেছেন, যা আমাদের জন্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি নিউজটি দেখার পর আমি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ঘটনা তুলে ধরি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে গতরাতে হলের সিনিয়র, জুনিয়র ও আমার ব্যাচমেটরা প্রতিবাদ জানায়। তবে, প্রভোস্ট স্যার রাতে সমাধান দিতে না পারলেও আজকে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।’
সাংবাদিকের রুমে হট্টগোলের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না, পরবর্তীতে প্রভোস্ট স্যার ডাকলে সেখানে যাই।’
সংবাদ প্রকাশ করা সাংবাদিক বি. এম. ফয়সাল বলেন, ‘গতকাল বুধবার হলে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ে আমি একটি সংবাদ প্রকাশ করি, যেহেতু হলে বহিরাগত প্রবেশের নিয়ম নেই। বহিরাগতরা একজন শিক্ষার্থীর আত্মীয় ছিলেন। এই সংবাদ প্রকাশের জেরে হলে অবস্থান করা একটি দল আমাকে মারতে আসে এবং আমরা রুমে এসে আমার ওপর মব সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। একই রুমের বাসিন্দা দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি জুবায়ের রহমান ও খোলা কাগজের প্রতিনিধি হাসিবুল ইসলাম সবুজসহ আমাকে হেনস্তা করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘হেনস্তাকারীদের কয়েকজন আমাকে মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিতে থাকে। এ নিয়ে আমি নিরাপত্তা শঙ্কায় আছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিতে গতকালের ঘটনা নিয়ে লিখিত অভিযোগ করব।’
সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মাহমুদুল হাসান খাঁন বলেন, ‘হলের যে উদ্ভব পরিস্থিতি সেটা নিয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। যাদের ব্যাপারে অভিযোগ এসেছে আমার তাদের সঙ্গে বসতে হবে, তাদের কথাও শুনতে হবে। এরপর একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ফলে হলের শৃঙ্খলার স্বার্থে আমার যা যা করা লাগবে তাই করব। হলের মধ্যে একটা গেস্টরুমের প্রয়োজন, এটা আগামী মাসের মধ্যে ইনশাআল্লাহ ব্যবস্থা করা হবে। এরপরও কারো যদি সমস্যা হয় তবে আমার অনুমতি নিয়ে প্রভোস্টের রুম ব্যবহার করতে পারবে।’
এসএকে/