বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ ।। ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৩ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :

মাদকাসক্ত পাপাসক্ত করে, মাদক থেকে বাঁচতে ইসলামের নির্দেশনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম

প্রতিটি সমাজের জন্য মাদকাসক্তি একটি অভিশাপ। প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান হারে হাজার হাজার মানুষ মাদকাসক্তি ও তৎপরবর্তী অপরাধকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে কুচক্রীদের জন্য মাদক পাচারও সহজ হয়ে গেছে, ফলে মাদকাসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। যা প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে হাজারো যুবকের প্রাণ।

ইসলাম সর্বাবস্থায় মাদক সেবনকে হারাম ও অবৈধ ঘোষণা করেছে। কোরআন এবং হাদিসের বহু জায়গায় মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, মাদক সকল পাপের মা (মূল)। যে ব্যক্তি এই জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়, তার জন্য অন্যান্য পাপাচার সহজ হয়ে যায়।

মাদকের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ইত্যাদি এবং লটারীর তীর, এ সব গর্হিত বিষয়, শাইতানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণ রূপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়। সূরা মায়েদা: ৯০।

অনেকে আছে, যারা সালাতও আদায় করে আবার মাদকও সেবন করে। তাদের এই সালাত তাদের কোনো কাজে আসবে না। উপরন্তু মাদক সেবনের কারণে তারা তাদের সালাত আদায়ের পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হবে।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের মধ্যে কেউ যদি মদ পান করে, আল্লাহ তায়ালা চল্লিশ দিন যাবত তার সালাত ও অন্যান্য ইবাদাত কবুল করবেন না। সুনানে নাসাঈ।

অপর হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি মদ পান করে মাতাল হয়ে যাবে তার ৪০ দিনের সালাত কবুল করা হবেনা। সে যদি এ অবস্হায় মারা যায় তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (পান করার পর যদি সে তাওবাহ করে তাহলে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করবেন।) অত:পর সে যদি পুনরায় মদ পান করে মাতাল হয়ে যায় তাহলে তার ৪০ দিনের সালাত কবুল করা হবেনা। অত:পর সে যদি এ অবস্হায় মারা যায় তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অত:পর সে যদি ৪র্থ বার মদ পান করে তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর উপরে তাকে রাদাগাতুল খাবালত্বীনাতুল খাবাল পান করানো অপরিহার্য হয়ে যায়। তারা বলল হে আল্লাহর রাসূল! রাদাগাতুল খাবালত্বীনাতুল খাবাল কি? তিনি বললেন: জাহান্নামীদের থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত নিকৃষ্ট রস। ইবনু মাযাহ: ৩৩৭৭

প্রত্যেক নেশা উদ্রেককারী বস্তুই মাদকের অন্তর্ভুক্ত। মদ্যপান করে নেশাগ্রস্ত হয়ে যদি কেউ মারা যায়, তাহলে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, সে বেইমান হয়ে মারা যায়। নবীজি সা. বলেন, যে ব্যক্তি মদ পান করে, সে নেশাগ্রস্ত না হলেও তার পাকস্থলীতে এক ফোঁটা মদ থাকা অবস্থায় তার সালাত কবুল করা হবে না। আর সে যদি এমতাবস্থায় মারা যায়, সে কাফির হয়ে মারা যায়। সুনানে নাসাঈ।

আবু হুরায়রা রা. এর সূত্রে রাসুলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কোন ব্যভিচারী ব্যভিচার করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না, যখন চোর চুরি করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় চুরি করে না, যখন কোন মদ্যপায়ী মদ পান করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় মদপান করে না, আর যখন কোন ডাকাত লোকচক্ষুর সামনে ডাকাতি করে, তখনও সে মুমিন অবস্থায় ডাকাতি করে না। নাসাঈ: ৪৮৭০।

একজন বিখ্যাত দরবেশ ফাদিল ইবনে ইয়াদ একবার তার এক মুমুর্ষ শিষ্যকে দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি তাকে তার অন্তিম মুহূর্তে কালিমা পাঠ করতে বলছিলেন; কিন্তু সেই শিষ্য কালিমা পাঠ করতে পারছিলো না। ফাদিল রহ. তার শিষ্যের জন্য বারবার কালিমা পাঠ করেছিলেন, কিন্তু একপর্যায়ে শিষ্য বললো, আমি এটা পাঠ করতে পারছি না। এতে ফাদিল ইবনে ইয়াদ রহ. কাঁদতে শুরু করলেন।

পরবর্তীতে তিনি একবার স্বপ্নে দেখলেন, তার ওই শিষ্যকে টানতে টানতে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা দেখে তিনি তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। সে উত্তর দিলো, জীবদ্দশায় একবার আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন এক ডাক্তার আমাকে আরোগ্য লাভের জন্য এক পেয়ালা মদ পান করতে বলে। তার কথা অনুযায়ী আমি মদপান করেছিলাম। এরপর যখনই আমি অসুস্থ হতাম, তখনই মদ পান করতাম। আল কাবায়ের লিয যাহাবি: ৬৮।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ