শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জমিয়তের জাতীয় কাউন্সিলের ৭ নতুন প্রস্তাবনা ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ব্যতিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংহতি বজায় রাখা সম্ভব নয়’ গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেপ্তার এবার যে ২০ ভাষায় অনুবাদ করা হবে হজের খুতবা সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছরের পক্ষেই জামায়াত স্বামীর টাকায় হজ করলে ফরজ আদায় হবে? ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ ৩০ ফিলিস্তিনি, নেই উদ্ধারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পেহেলগামে হামলার স্বচ্ছ তদন্তের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত: শাহবাজ শরীফ জমিয়তের সভাপতি আল্লামা ওবায়দুল্লাহ ফারুক মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি খেলাফত আন্দোলনের নতুন মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী

রোদন করে হাদিসের কিতাব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ মারুফ ।।

হঠাৎ তিনি কেঁদে ওঠলেন বিকট শব্দে, 'আল্লাহ'...! আমার ভেতরটা চুপসে গেলো! কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম, কি হলো, কিছু হয়ে গেলো না তো আবার হুজুরেরㅡ এভাবে কেঁদে ওঠলেন যে!

দুহাত প্রসারিত অবনমিত মস্তকখানা উপরে উঠাই, কৌতূহলে চেয়ে দেখিㅡ নাহ, তিনি ঠিকই আছেন। কেবল 'রাব্বানা যালাম-না-আন-ফুসানা' নিজের উপর জুলুম করেছি আল্লাহㅡ কথাটি বলে লজ্জিত হয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন শিশুর মতো! যেনো তিনি দু-পায়ে জড়িয়ে ধরে আল্লাহকে বলছেন, অপরাধ করেছি, ক্ষমা করবা না! বলোㅡ।

আমি তাকে দেখে তার এভাবে 'আল্লাহ' বলে কেঁদে উঠতে দেখে নিজেও কেঁদে ফেলি, চোখ বেয়ে গড়াতে থাকে অশ্রু; টপটপ করে। এই ঘটনা জামেয়া রাহমানিয়ার খতমে বুখারীর সময় দুআর মাঝে, এই প্রথম আমি হুজুরের দুআ দেখি আর বিস্মিত হইㅡ তাদের দুআ কতোটা জীবন্ত! কতোটা নিবিষ্টমনে তারা আল্লাহকে ডাকেন!

এরপর তিনি মালিবাগ জামিয়ার মুহতামিম পদে অনুরুদ্ধ হন, আসেন মালিবাগে। তখন কাছ থেকে দেখি। বারবার তাকাই। তার দুআয় শামেল হই। তার কান্নাকাটি দেখে আমার ছোট্ট বুকের জমিনও ভিজে ওঠে, আমি এক অপার্থিব মোহে আচ্ছন্ন হই।

দুই.

আমি যেতাম, কথা বলে এটা-ওটা এগিয়ে দিয়ে চলে আসতাম, কখনও খেদমতের সুযোগ হয় নি। সেদিন বৃহস্পতিবার ছিলো। দুহাজার সতেরোর হবে, মালিবাগ জামিয়ার দস্তারবন্দীরুমের পাশে হুজুরের বাসায় যাই ইশার ক্ষানিকটা পর। তখন নিয়মিত যারা হুজুরের গা-মালিশ করে দিতেন তাদের একজন অনুপস্থিত। আমি তখন বলি আজকে তাহলে আমি থাকি তার স্থলে। হুজুর বলেন, আইচ্ছা, তুমি তাহলে পায়ের গোড়ায় যাও! আমি যাই।

তিন-চারজন মিলে ঘুমানোর আগে গায়ে সরিষার তেল মালিশ করে দেয়া লাগত। একজন মাথায়, হাতে আরেকজন, আর দুই পায়ে অপর দুইজন। মাথায় যিনি বসতেন তার সদা তটস্থ থাকতে হতো, এবং যিনি নিয়মিত বসতেন তার হাত ছাড়া হুজুরের আরাম হতো না, তাই শিয়রে বসতে হতো অভিজ্ঞ কারোর।

আমি তো প্রথম বসেছি এই আজকে, তেমন সুবিধা করে উঠতে পারছি না তাই। ব্যাপারটা ধরে ফেলে হুজুর শিখিয়ে দিলেন হাতে বোতল থেকে তেল ঢেলে এভাবে, গুড়ালিতে মালতে থাকো! আমি তাই করতে সচেষ্ট হলাম।

তখন দেখলাম, তিনি ঘুমের দুআ পড়ে কিছুক্ষণ নিরব থেকে হঠাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লার জিকিরে মগ্ন হয়ে গেলেন। জিকির করতে করতে মুখে মিঠে কোনো চোষ্য-বস্তুর মতো 'আল্লাহ' নামটা খেতে লাগলেন! কী তৃপ্তিভরে জপতে লাগলেন মালিকের নাম! এ-নাম মুখে রেখেই টুপ করে ঘুমিয়ে পড়লেন হঠাৎ, আমরা বুঝতে পারলাম হুজুর নিদ্রায় গিয়েছেন, আম্তে-আস্তে সরে আসলাম সবাই। বেডরুম ছেড়ে। আল্লাহর অলি ঘুমোতে লাগলেন।

তিন. 

সেই ঘুম থেকে তিনি তো জাগ্রত হয়েছিলেন সে-দিন। কিন্তু আজকের এই ঘুমে! তিনি কি আর জাগবেন না?

আহা!

হাদিসের কিতাবের প্রতিটি পৃষ্ঠা রোদন করছে, কেঁদে কেঁদে বলছে, আল্লাহ তোমার এই বান্দাকে মাফ করে দাও! তিনি যেমন আমাদেরকে যত্ন নিয়েছিলেন, তুমিও তাকে যত্ন নিয়োㅡ জান্নাতে, তোমার মেহমানখানায়...

(লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া)

আরএম/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ