শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বিদেশি সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টা করবেন না: মুফতি ফয়জুল করিম জমিয়তের জাতীয় কাউন্সিলের ৭ নতুন প্রস্তাবনা ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ব্যতিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংহতি বজায় রাখা সম্ভব নয়’ গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেপ্তার এবার যে ২০ ভাষায় অনুবাদ করা হবে হজের খুতবা সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছরের পক্ষেই জামায়াত স্বামীর টাকায় হজ করলে ফরজ আদায় হবে? ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ ৩০ ফিলিস্তিনি, নেই উদ্ধারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পেহেলগামে হামলার স্বচ্ছ তদন্তের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত: শাহবাজ শরীফ জমিয়তের সভাপতি আল্লামা ওবায়দুল্লাহ ফারুক মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি

'পর্দা আর বোরকা কি শুধু মাদরাসা মেয়েদের জন্য?'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তামান্না তাসনিম
পাঠক

অন্য দিনগুলোর চেয়ে সেদিনটা ছিলো আমার জীবনে একটু আলাদা। প্রথম হাত-পা মোজাসহ বোরকা পরে কলেজগেটে পা বাড়ালাম। তখনই দারোয়ান মামা চেঁচিয়ে বললো—‘এই, আপনি কে?’ কলেজকার্ড দেখিয়ে সেদিনের মতো রক্ষে পেলাম। তারপর সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম নিজের মতো করেই।

হঠাৎ আশপাশে তাকিয়ে দেখলাম, পুরো কলেজের মেয়েরা ‘এলিয়েন' দেখার মতো আমায় দেখছে। কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে ‘এলিয়েন' মনে হলেও তড়িঘড়ি সামলে নিলাম। শ্রেণিকক্ষে প্রবেশে তেমন একটা বাঁধা না এলেও আমায় ঘিরে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গেলো—‘এটা আবার কোন জঙ্গি?’

পরিচিত কয়েকটা মেয়ে তো মুখের ওপর বলে বসলো—‘কীরে! হুজুর হয়েছিস কবে থেকে? তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে মাদরাসার কোনো আন্টি এসেছে।’ কথাটা মনে সামান্য আঘাত হানলেও কাউকে বুঝতে দিইনি। জবাবে এতোটুকুই বললাম—‘পর্দা আর বোরকা কি শুধু মাদরাসা মেয়েদের জন্য?’

ওরা একজন আরেকজনের দিকে তাকাতাকি করে একটু মুখ বাঁকালো। এরপর উপহাসের ছলে বললো—‘না, তা হবে কেনো! কিন্তু কলেজপড়ুয়া মেয়ে এমন হবে, এটা কেনো যেনো মানতে পারি না।’ সেদিনের মতো ক্লাস করে বাসায় ফিরলাম। এরপর থেকে তেমন একটা ক্লাসে যেতে ভালো লাগতো না।

দুই
এই ঘটনার কিছুদিন পরেই শুরু হলো অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। প্রথম পরীক্ষার দিন স্যার সবাইকে বললো—‘এই মেয়েরা! সবাই কানসহ মুখের নিকাব খুলে বসো।’ আমি তার কথা কানে না নিয়েই নিজের মতো করে লিখতে শুরু করলাম। হঠাৎ এক স্যার এসে বললেন—‘কী ব্যাপার! কথা কী কানে যাচ্ছে না? মুখ খুলো।’ আমি তখনও চুপ করে রইলাম। মনে মনে আল্লাহর সাহায্য চাইতে থাকলাম।

তবে শেষ পর্যন্ত কেউ আমার নিকাব খুলতে পারেনি, আলহামদুলিল্লাহ! এভাবে রোজকার পরীক্ষায়ই একই কাহিনি ঘটলো৷ আর আমিও আমার মতো করে চলতে থাকলাম। আমার পরীক্ষার সময়টায় প্রচণ্ড গরম ছিলো। এক মেয়ে বললো—‘এই মেয়ে! তোমার গরম-টরম লাগে না নাকি? ভূতের মতো কী একটা পরে আছো। তোমাকে দেখলেই গরম লাগে আমাদের। যত্তোসব!'

শেষ পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হলে একজন ম্যাম এলেন। এসেই প্রথমে আমায় ধরলেন—‘এই মেয়ে! পরীক্ষার নিয়ম জানো না? নিকাব খুলে বসো। তোমাদের মতো মেয়েরাই নকল করে বেশি। দেখি! দেখি, নকল এনেছো কিনা!’ ম্যাম চেক করলেন। কিন্তু কিছুই মিললো না। এরপর পুরো চারটে ঘণ্টা আমার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন।

তিন 
কিছুদিন আগে এক আন্টির বাসায় দাওয়াত ছিলো আমাদের সবার। সেখানে গিয়েও পড়লাম ঝামেলায়৷ আন্টির নজর পড়লো আমার বোরকার ওপর। একগাদা বক্ওয়াস শোনালেন তিনি৷  বললেন—‘এই বয়সেই এতো হুজুর হতে বলেছে কে তোমারে?' একদিন আসরের নামাজ শেষ করে মাত্র জায়নামাজ গুটাবো, ঠিক তখন বাড়িওয়ালীএলেন একজন অচেনা পুরুষ নিয়ে।

আন্টি ঢুকেই বললেন—‘একটু এদিকে এসো তো, আমার সঙ্গে এক ভদ্রলোক এসেছেন। তোমাকে একটু দেখবেন তিনি।'  আমি কিছুটা বেঁকে বসলাম৷  আন্টি বললেন—‘তাড়াতাড়ি এসো তো!' বললাম—‘আমি যাবো না উনার সামনে। আপনি বলে দিন।' আন্টি তখন আমায় বোঝাতে লাগলেন—‘আরে মা, শোনো! তুমি সামনে গেলে তো তোমার গোনাহ হবে না। ওই লোকের গোনাহ হবে তোমার দিকে তাকালে।’

আন্টির কথা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম৷ রীতিমতো তাকে বোঝানোর ভাষা হারিয়ে ফেললাম। তার এমন হাস্যকর কথা শুনে অনেক কষ্টে সেদিন মাগরিব পর্যন্ত লুকিয়ে থাকলাম ছাদে। তারপর তারা বাধ্য হয়ে চলে গেলেন৷

পর্দা-বোরকা নিয়ে আমাদের সমাজের মানুষের এমন ভুল ধারণা দেখে আমি বারবার অবাক হলাম। তারা কি আদৌও জানতে পারবে পর্দা কী ও কেন? একটু কি জানার চেষ্টা করবে - 'পর্দা আর বোরকা কী শুধু মাদরাসা মেয়েদের জন্য নয়’

লেখক : শিক্ষার্থী : রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, শেখ ফজিলাতুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, গোপালগঞ্জ


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ