শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বিদেশি সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টা করবেন না: মুফতি ফয়জুল করিম জমিয়তের জাতীয় কাউন্সিলের ৭ নতুন প্রস্তাবনা ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ব্যতিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংহতি বজায় রাখা সম্ভব নয়’ গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেপ্তার এবার যে ২০ ভাষায় অনুবাদ করা হবে হজের খুতবা সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছরের পক্ষেই জামায়াত স্বামীর টাকায় হজ করলে ফরজ আদায় হবে? ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ ৩০ ফিলিস্তিনি, নেই উদ্ধারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পেহেলগামে হামলার স্বচ্ছ তদন্তের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত: শাহবাজ শরীফ জমিয়তের সভাপতি আল্লামা ওবায়দুল্লাহ ফারুক মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি

দাওয়াতের কাজে জেলখানায় তিন দিন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জিল্লুর রহমান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর মওলানা ভাসানী হল থেকে দাওয়াত ও তাবলীগের যে জামাতটি চুয়াডাঙ্গায় গিয়েছিল, আমিও তাদের সাথে ছিলাম। রোযা, ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ৪৫ দিনের বন্ধের পূর্বে আমাদের সর্বশেষ ক্লাশ হয়েছিল ২৫ মে। এর পরদিন আমরা টঙ্গী ইজতেমা ময়দান থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে যাওয়ার নির্দেশনা পাই এবং সন্ধ্যার বাসে গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা ত্যাগ করি।

৩ দিন করে ১ম দুটি মসজিদ এর পর ৩য় মসজিদটি ছিল চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার মসজিদ।

২ জুন, সকাল ১০ টায় আমরা মসজিদে প্রবেশ করি। এদিন ছিল ৬ রমযান এবং পবিত্র রমযান মাসের প্রথম শুক্রবার। মসজিদটি ছিল কারাগারের সীমানা প্রাচীরের অভ্যন্তরে কারারক্ষী এবং কারা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামাযের জন্য। তবে স্থানীয়রাও সেখানে নামায পড়তে পারত। যেহেতু সীমানা প্রাচীরের ভিতরে মসজিদ এবং বাহিরে গেলে কারারক্ষীদের অনুমতির বিষয়টি ছিল, সেহেতু আমরা ৩ দিন লাল দালানের ভিতরেই ছিলাম বলে মনে হয়েছে।

মসজিদে যাওয়ার ১ ঘণ্টা পর আমাদের সাথে দেখা করতে আসেন জেলা কারাগার এর জেল সুপার মহোদয়। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর দর্শনের ছাত্র ছিলেন এবং প্রায় ১ বছর যাবৎ চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে কর্মরত আছেন। আমাদের জামাতের আমীর ছিলেন ২৬ তম বিসিএস এর শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর দর্শনের ছাত্র। তাই আমাদের মাঝে আলোচনা জমে উঠল খুব শিগগির। যদিও জেল সুপার মহোদয়ই বলেছেন বেশি আর আমরা শুনেছি। দেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়, তাবলিগ জামাত এবং দর্শন বিষয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা আলোচনা হয় আমাদের। এরপর জুম্মার নামাযের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য তিনি আমাদের থেকে বিদায় নেন।

চুয়াডাঙ্গায় প্রথম জুম্মার নামায পড়ি আমরা জেলা কারাগার মসজিদে। জেল সুপার, জেলারসহ অন্যান্য কারা অফিসার ও কারারক্ষীরা নামাযে অংশগ্রহণ করেন। এদিন বিকেলে আমরা কয়েকজন কারাগারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া 'মাথাভাঙ্গা' নদীর তীরে হাঁটতে যাই। এই রমজানে প্রথম খতমে তারাবি পড়ার সৌভাগ্য আল্লাহ তা'য়ালা এই মসজিদে দান করেছেন। আগের ২ মসজিদে সূরা তারাবি ছিল।

কারারক্ষীদের থেকে জানতে পেরেছিলাম, এখানে ৫ শতাধিক বন্দি রয়েছেন। আমাদের প্রার্থনা এটাই ছিল, আল্লাহ যেন জামাতের সাথীদের, স্থানীয়দের, কারারক্ষীদের এবং সকল বন্দিদেরকে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় স্থান দেন

২য় দিন রাতে পুরো তারাবির একটু সময়ও বিদ্যুৎ ছিল না। বিকল্প বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থাও আমাদের চোখে পড়েনি। কারাগারের মত এলাকায় দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকা আমাদের আশ্চর্যান্বিত করেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় আমীর সাহেবের অনুমতি নিয়ে আমরা কয়েক জন একটু ঘুড়তে বের হয়েছিলাম। এসময় আইআইটির শাওন ভাইয়ের হঠাৎ সিদ্ধান্তে ঘণ্টা চুক্তিতে অটোরিকশা ভাড়া করে রাতের চুয়াডাঙ্গা দেখতে বেড়িয়ে পরি আমরা। শহরের কোর্ট মোড় থেকে সরকারি কলেজ, কবরস্থান এর পাশ দিয়ে রেল স্টেশনে যাই। বাংলাদেশের প্রথম রেললাইন চুয়াডাঙ্গা শহরের পাশ দিয়ে গিয়েছে যা দর্শনা থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছিল। রেল স্টেশন থেকে বের হয়ে আমরা শহরের প্রধান রাস্তা দিয়ে বড়বাজার পর্যন্ত গিয়ে মসজিদে ফিরে আসি।

৪ জুন ছিল জেলা কারাগার মসজিদে আমাদের শেষ দিন। ধারাবাহিক কাজের পাশাপাশি এদিন আছরের নামাযের পর স্থানীয় দুজনের সাথে আমরা কয়েকজন কারাগারের ওয়াচ টাওয়ারে প্রকৃতি দেখতে গিয়েছিলাম। প্রায় ৪ তলা বিল্ডিং এর সমান উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ারে উঠে গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মাথাভাঙ্গা নদী এবং নদী তীরবর্তী প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম সবাই।

কারাগার মসজিদে প্রথম দিন প্রবেশের সময়ই গাছে গাছে পেকে থাকা আমগুলো আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেহেতু এগুলো সরকারি সম্পদ এবং আমরাও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র, সেহেতু আমগুলোর প্রতি আমাদের হক রয়েছে বলে মন্তব্য করেন কয়েকজন। কিন্তু তিন দিন পর দেখা গেলো, আমরা কেউই এই গাছগুলো থেকে কোন আমই পারি নি।

রোযার মাস হওয়ায় খাওয়া-দাওয়া এবং রান্নার জন্য খুব বেশি সময় খরচ করতে হতো না। সারাদিনই আমরা চেষ্টা করতাম ব্যক্তিগতভাবে এবং ইজতেমায়ীভাবে দাওয়াত অব্যাহত রাখার জন্য। যেহেতু এটা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জামাত, তাই কারারক্ষীরাও আমাদের সময় দেয়ার চেষ্টা করেছে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'য়ালার জন্যই তারা আমাদের কথা শুনেছে। আমলে অংশগ্রহণ করেছে। কারাগারের জেলার এবং অন্যান্য কারারক্ষীরাও তাদের অবসর সময়টুকু মসজিদে কাটানোর চেষ্টা করেছে।

আমরা লক্ষ করেছি, পূর্বের ২ টি মসজিদের অনেক ছাত্র-যুবক এই মসজিদে এসে আমাদের সাথে সময় কাটিয়েছে। বিভিন্ন দ্বীনি আলোচনায় সবসময় মুখরিত ছিল মসজিদ। তাছাড়া মসজিদের ইমাম সাহেব তাবলীগের ১ সালের (টানা ১ বছর) সাথী হওয়ায় দাওয়াতের কাজে আমাদেরকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।

৫ জুন, ফজরের নামায পড়ার পর আমীর সাহেবের নির্দেশে আমরা আমাদের পরবর্তী মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। কারাগার মসজিদে থাকলেও কয়েদীদের সাথে আমাদের কোন কথা বলা বা দেখা করার সুযোগ ছিল না। তারা আরও একটি প্রাচীরঘেরা স্থানে অবস্থান করছিলেন। কারারক্ষীদের থেকে জানতে পেরেছিলাম, এখানে ৫ শতাধিক বন্দি রয়েছেন। আমাদের প্রার্থনা এটাই ছিল, আল্লাহ যেন জামাতের সাথীদের, স্থানীয়দের, কারারক্ষীদের এবং সকল বন্দিদের আল্লাহর রহমতের ছায়ায় স্থান দেন এবং আমাদের হেদায়াত দান করেন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ১ম বর্ষ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

আলিয়ায় আলো ছড়াচ্ছে তামিরুল মিল্লাত


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ