শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ফিলিস্তিন ও কাশ্মীর ইস্যুতে উম্মাহর  ঐক্য জরুরি: নেজাম ইসলাম পার্টি নবনির্বাচিত আমির ও মহাসচিবকে অভিনন্দন জানালো ছাত্র আন্দোলন বিশ্ব মেধা সম্পদ দিবস: মেধার হোক সঠিক ব্যবহার পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব ‘দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়’ প্রস্তাবে একমত জামায়াত আল্লামা শায়েখ জিয়া উদ্দীনের আবেগঘন বিদায়ী ভাষণ বিদেশি সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টা করবেন না: মুফতি ফয়জুল করিম জমিয়তের জাতীয় কাউন্সিলের ৭ নতুন প্রস্তাবনা ‘আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ব্যতিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংহতি বজায় রাখা সম্ভব নয়’ গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

ছোটগল্প: কল্পনায় হুমায়ূন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফিরোজ আল মামুন

হুমায়ূন আহমেদ স্যারকে নিবেদিত ছোটগল্প

humayun-ahmedরাস্তার ফুটপাত দিয়ে দ্রুত হাঁটার কোন না কোন উদ্দেশ্য থাকে। আমারও আছে তাই হাঁটতেছি। তেমন মহৎ কিছু না হলেও নগন্য না। মনটা খারাপ। ভীষণরকম খারাপ যাচ্ছে ইদানীং। মন খারাপের সময় অযথা হাঁটাহাঁটি করলে মন ভালো হয়ে যায়।কথাটা আমার না। হুমায়ূন স্যারের। ও তার কথাতো বলাই হয়নি। হুমায়ূন আহমেদ বাংলার কথা সাহিত্যিক। তবে আমার কাছে তিনি যাদুকর। সেদিন তার হলুদ হিমু কালো র‍্যাব বইটা যাদুর মতো কাজ করেছে আমার উপর। আজ যাদু কাজ করছে না। এন্টিযাদুর ট্যাবলেট খাইনি। তবে মানসিকভাবে কোন প্রভাব নেওয়ার মতো মস্তিষ্ক এখন নেই। কিছু কিছু সময়ই এমন, ভালো প্রত্যাশিত বস্তুও কাছে এলে খারাপ লাগে। রাস্তা থেকে দ্রুত তাই বাসায় ফিরলাম। লম্বা ঘুম দিতে হবে। মিসির আলী টাইপের ঘুম। এ ঘুমের কিছু নিয়ম আছে। রুমটা কবরের মতো ঘোর অন্ধকার থাকতে হবে। একটা বিদেশী কম্বল থাকতে হবে সাথে দুটো ফ্যান ঘুরতে হবে। ফ্যানের পাখা না ঘুরলেও হয়তো ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। কে যেন বিদেশী একটা কম্বল রেখে গেছে আমার বিছানায়ই। রুমটা সব সময় খোলাই থাকে তাই রেখে যাওয়া ব্যক্তির অসুবিধে হয়নি রাখতে।

ঘুম থেকে উঠেই মনে হলো আজ হুমায়ূন আহমেদের সাথে দেখা করতে হবে। তাকে নীলপদ্ম উপহার দিতে হবে। তিনি খুব খুশিই হবেন। এটা তার প্রিয় ফুল। না হলে তো আর বইয়ের নামে এটা উল্লেখ করেননি। পরেই মনে হলো লেখকদের চরিত্র বিচিত্র।তারা বইয়ে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করলেও বাস্তবে তার জীবন অন্যরকম। সেদিন এক লেখকের জন্য একটা কালো পাঞ্জাবি কিনে তার সাথে দেখা করতে গেলাম। সরাসরি তার বাসায় গিয়ে বললাম, স্যার আপনার প্রিয় কালারের পাঞ্জাবি এনেছি আপনার জন্য। আপনি নিশ্চয়ই খুব খুশী।

তিনি প্রচণ্ড রাগ নিয়ে বললেন, আপনাকে কি কখনো বলেছি যে,কালো আমার প্রিয় রঙ?

কিন্তু আপনিতো স্যার আপনার সব বইয়ের নায়ককে কালো পাঞ্জাবিই পড়ান। তাই ভাবলাম... কথা শেষ করতেই পারলাম না।
তিনি বলে উঠলেন, কালো আমার সব চেয়ে অপছন্দনীয় রঙ। মানুষ বেশি আলোচনা করে দুইটা জিনিস নিয়ে।হয়তো পছন্দের নয়তো অপছন্দের। আমি তাই অপছন্দটাই বেছে নিছি।

কিন্তু আমি বেছে নিলাম নীলপদ্মটাই। অবশ্যই স্যারের এটা পছন্দই হবে।এটা সদ্য তোলা তাই বেশিই ভালো লাগছে। হাঁটা শুরু করলাম সেই ফুটপাত দিয়ে। অনেক দূরের রাস্তা তাই দ্রুত হাঁটছি। খুব দ্রুত নুহাশ পল্লীতে পৌঁছে গেলাম। এখানে তিনি আছেন।জোছনা দেখার জন্য এসেছেন। কাল আবার সুপারমুন। বেশ আয়োজনও করেছেন এর জন্য। হাজার লোক একসাথে যেন জোছনা দেখতে পারেন সেজন্য বড় পাটি আজ থেকেই বিছানো আছে। পাটিতে সবাই অবশ্য বসতে পারবে না। যার হলুদ পাঞ্জাবি আছে সেই বসবে এখানে। অনেক মেয়েরাও আজই এসে গেছে। পড়নে নীলশাড়ি আর হাতে পদ্ম। স্যারকে উপহার দিচ্ছেন লাইন ধরে। আমিও দিতে নিয়ম মেনে চললাম। আর একজনের পরেই আমার পালা। আমি মনে মনে খুব আনন্দ পাচ্ছি।চোখ দিয়েও গড়াচ্ছে আনন্দ অশ্রু। চোখে হাত দিয়ে মুছতেই বুঝলাম সব কল্পনায় হলো। আমার চোখের পানি বাস্তবেই বের হচ্ছে। তার জন্মদিনে তাকে মনে করে। তিনি আর পৃথিবীতে নেই। তার স্মৃতিগুলো আছে। কবরও আছে এ ধরায়।

সেখানে যাওয়ার খুব প্রয়োজন অনুভব করলাম।আজই যেতে হবে। নিউমার্কেট থেকে হলুদ পাঞ্জাবীটা কিনে সেখানেই চেঞ্জ করে বাইক চেপে বসলাম। শাহবাগ হয়ে যাওয়ার প্লান। নীলপদ্ম নিতে হবে সেখান থেকেই। কিন্তু পেলাম না। তবে ইনফরমেশন পেলাম যে,সাভারে পাওয়া যায়। দেরী না করেই সাভারের দিকে চলছি। বিকেলের সূর্য এসে কপালে পড়ছে। হলুদ পাঞ্জাবিটা আরোও হলুদ দেখাচ্ছে। দূর থেকে দেখলে যেকেউ বলবে, ওই যে হিমু আসছে। খুব দ্রুত আমাদের দিকেই আসছে।

আরআর 


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ