শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫ ।। ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ২১ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
বিএনপির মধ্যে লুকিয়ে থাকা মোনাফেকদের চিহ্নিত করে রাখুন : আলতাফ হোসেন সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে: দুলু শাপলা হত্যাকাণ্ডের বিচারে আলাদা কমিশন গঠনের দাবি শেখ মুজিবকে নিয়ে নাহিদের স্ট্যাটাস কুমিল্লায় দুই মাসব্যাপী ভাষা-সাহিত্য কোর্সের উদ্বোধন  একটি পবিত্র লাইব্রেরির আলোকবর্তিকা নির্বাচন পেছানোর মতো কোনো শক্তি দেশে নেই: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব দোয়া: ইবাদতের মূল ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম দ্রুত বিকাশমান বিশ্ববাজারে যৌথভাবে হালাল পণ্য উৎপাদন করতে পারে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ: ড. ইউনূস দারুল উলুম দেওবন্দে স্বাধীনতা দিবসের জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন

একটি পবিত্র লাইব্রেরির আলোকবর্তিকা


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

|| মাওলানা ফরহাদ হুসাইন ||

জীবনের সবচেয়ে সৌভাগ্যের মুহূর্তগুলো এক এক করে স্মৃতির পাতায় গেঁথে যাচ্ছে। মদিনা মুনাওয়ারার প্রতিটি কোণ, প্রতিটি বাতাস, প্রতিটি জানালার ফাঁক দিয়ে আসা আলো সবকিছুতেই যেন মিশে আছে এক অপার্থিব প্রশান্তি।কিন্তু এই পবিত্র শহরের বুকে এমন একটি স্থান আছে, যা কেবল আবেগ নয়, মেধায়, মনন, চিন্তায় ও গবেষণায় মদিনার সৌন্দর্যক পরিপূর্ণ করে তোলে। সেই স্থানটি হলো মাকতাবাতুল মসজিদ আন-নববী।এই মাকতাবা যেন মদিনার হৃদয় লুকিয়ে থাকা এক দীপ্তমান বাতিঘর, যেখান থেকে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের চার দিকের মানুষদের হৃদয়। এই স্থানটিকে প্রথমবার দেখলে মনে হতে পারে এটা যেন শুধু একটি লাইব্রেরি নয়, বরং যুগ যুগ ইলমের কাফেলা যে পথ ধরে এগিয়েছে, তারই এক নিঃশব্দ সাক্ষী। হাজারো কিতাবের ঘ্রাণ, কাঠের তাকগুলোয় থরে থরে সাজানো কিতাব, নিঃশব্দ পড়ায় ডুবে থাকা ছাত্রদের নুয়ে পড়া চোখ সবকিছু মিলে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

এই মাকতাবার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
অসাধারণ সংগ্রহ:
এখানে রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার-এর বেশি বই ও পান্ডুলিপি। ২১টি আন্তর্জাতিক ভাষায় অনূদিত কিতাবের এই বিশাল সংগ্রহে রয়েছে কোরআন, হাদীস, ফিকহ, ইতিহাস, আকীদাহ, ভাষাতত্ত্বসহ ইসলামি জ্ঞানের প্রায় সকল শাখার বই।

মূল হস্তেলিখিত পান্ডুলিপি: এখানে সংরক্ষিত আছে প্রাচীন ও দুর্লভ অনেক মূল ম্যানুস্ক্রিপ্ট, যেগুলো শত শত বছর আগের আলিমগণ নিজ হাতে লিখে গেছেন। এই সংগ্রহগুলো শুধু গবেষকদের জন্য নয়, জ্ঞানপিপাসু প্রত্যেকের জন্য রত্ন।

প্রযুক্তি সুবিধা: পাঠাগারে রয়েছে কম্পিউটার টার্মিনাল, ডিজিটাল ক্যাটালগ, এবং অনলাইন সার্চ সুবিধা, যাতে পাঠকগণ সহজই কাঙ্ক্ষিত বই খুঁজে পেতে পারেন।

গবেষক-পর্যায় সহায়তা: আন্তর্জাতিক মানের গবেষকদের জন্য রয়েছে পৃথক বসার জায়গা, সহায়ক কর্মী, এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কিতাব স্ক্যানিং বা রেফারেন্স সেবা।

পর্যাটক ও সাধারণ দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত: আপনি যদি একজন হজযাত্রী, উমরাহযাত্রী বা সাধারণ দর্শনার্থীও হন, মাকতাবায় প্রবশ করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাঠের সুযোগ পাবেন। এক ধরনের পরম প্রশান্তির জায়গা এটি। 

ইতিহাসের ধারক: এই মাকতাবার শিকড় নববী যুগের দিকে যায়। আগে থেকেই মসজিদে নববীতে কিছু প্রাচীন কিতাব সংরক্ষিত ছিল, যা পরবর্তীতে এই পাঠাগারে স্থান পায়। মসজিদেও যে অংশে এটি অবস্থিত, তা একসময় নবী সা.-এর সাহাবিদের জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র ছিল।

قال رسول الله ﷺ إذا مات ابن آدم انقطع عمله إلا من ثلاث: صدقة جارية، أو علم ينتفع به، أو ولد صالح يدعو له.
মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ছাড়া: সদাকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যা থেকে উপকার পাওয়া যায়, এবং তার জন্য দোয়া করে এমন নেক সন্তান। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ওয়াসিয়্যাহ)

এই পাঠাগার হলো সেই জ্ঞানের ধারক, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে উপকার দিয়ে যাচ্ছে।একবার এখানে সময় কাটালে বোঝা যায় মদিনা কেবল প্রেম আর অনুভূতির শহর নয়, বরং হেদায়াত ও জ্ঞানের দীপ্ত আলাকস্তম্ভ।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও অবস্থান
১৩৫২ হিজরিতে এই লাইব্রেরির গোড়াপত্তন হয় ওয়াকাফ বিভাগের উদ্যোগে। প্রথম এটি ছিল ছোট একটি কক্ষ, আজ তা প্রযুক্তিসমৃদ্ধ, আধুনিক ও বিশ্বমানের গবেষণা কেন্দ্র।

বর্তমান অবস্থান
باب عمر ও باب الملك فهد-এর মাঝামাঝি (স্কলেটর ১০-এর ডান দিকে) ২৪ ঘণ্টা খোলা প্রায় ৮০০ স্কয়ার মিটারের বিশাল এলাকা।

বর্তমান কাঠামো ও পরিসংখ্যান
মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১,৭২,৫৪৮, শ্রেণীবিভাগ ৭১টি, ক্যাবিনেট ৫৪১টি, সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ পাঠক, বার্ষিক পাঠকসংখ্যা ৭ লক্ষের অধিক, খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা, বছরের প্রতিটি দিন, কর্মী সংখ্যা প্রায় ৩৬ জন (সৌদি নাগরিক) চারটি শিফটে কর্মরত।

উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ:
তাফসীর ও উলূমুল কুরআন।
হাদীস ও উলূমুল হাদীস।
ফিকহ ও উসূলুল ফিকহ (চার মাজহাব ভিত্তিক)।
আকীদাহ ও কালাম শাস্ত্র।
তাসাউফ ও রুহানিয়াত।
ইতিহাস ও সীরাত।
দাওয়াহ ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব।
আদব ও আরবি সাহিত্য।
ভাষা ও ব্যাকরণ (নাহু, সরফ, বালাগাহ)।
ফতোয়া ও মুকাররার প্রশ্নাত্তর।
আধুনিক গবেষণা ও থিসিস বিভাগ।
হস্তলিখিত পান্ডুলিপি (الـمخطوطات)

মসজিদে নববীর  গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত রয়েছে এক অনন্য সম্পদ দুর্লভ মাখতূতাত। এ বিভাগে রয়েছে ৭ হাজারের বেশি। প্রাচীন মাখতূতাতর ডাটাবেস কিতাবগুলোর মধ্যে আছে:
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এর প্রাচীন কপি
মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর হাতে লেখা সংস্করণ
কিতাবুল উম, আল-আহকাম আস-সুলতানিয়্যাহ
ইমাম তাহাবীর আকীদাহ গ্রন্থের প্রথম দিককার ম্যানুস্ক্রিপ্ট
আল-কাশশাফ ও তাফসীরে আত-তাবারী এর প্রাচীন নকল
এইসব মাখতূতাত গুলোর অনেকগুলো এখন ডিজিটাল আর্কাইভ স্ক্যান করে সংরক্ষিত, যেগুলো গবেষকরা লাইসেন্সের মাধ্যমে দেখতে পারেন।

প্রযুক্তিগত ও বিশেষ সেবা
প্রায় ৭১টি কম্পিউটার স্টেশন: সফট কপি পড়া ও ডাউনলোডের সুবিধা।

QR Code স্ক্যানার: বইয়ের সাথে সংযুক্ত করে দ্রত অ্যাক্সস।

অডিও লাইব্রেরি: মসজিদে নববীর খুতবা, দরস এবং কুরআন তিলাওয়াত।

تطبيق الحرمين অ্যাপ: লাইব্রেরির সার্চ, বুকিং ও লাইভ পাঠ দেখার সুবিধা।

Wi-Fi ও স্ক্যানিং সুবিধা।

নারীদের জন্য পৃথক বিভাগ
মহিলাদের জন্য রয়েছে আলাদা পাঠাগার শাখা (قسم النساء), যেখানে নারী পাঠকরা পর্দা বজায় রেখে বই পড়তে পারেন। নারী কর্মীবৃন্দ এই শাখায় দায়িত্ব পালন করেন, এবং নারীদের জন্যও রয়েছে কম্পিউটার ও ডিজিটাল সেবা।

অন্ধ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভাইবানদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
ব্রইল বই ও কুরআন।

অডিও ফরম্যাট হাদীস ও তাফসীর।

শ্রবণযন্ত্র সহায়তা ও প্রশিক্ষিত গাইড।

আমার চোখ আছে, তবুও তারা অনেক বেশি দেখে...
নববী লাইব্রেরির এক নিঃশব্দ দুপুর, বইয়ের তাক ঘেঁটে হঠাৎই হাতে পেলাম একটা অদ্ভুত কিতাব। খুলেই থমকে গেলাম না কোনা অক্ষর, না কোনা পরিচিত শব্দ, শুধু বিন্দু বিন্দু উঁচুনিচু দাগ! হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি এ তো বুঝাই যাচ্ছ না! পাশে বসা এক শিক্ষার্থী বললেন,“ভাই, এটা ব্রেইল... অন্ধদের কিতাব”। হৃদয়ের ভিতরে যেন কিছু একটা কেঁপে উঠল।ভাবতে লাগলাম যাদের চোখ নেই, তারা এই কিতাব ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়ছে, বুঝছে, শিখছে, হৃদয়ে গেঁথে নিচ্ছে আল্লাহর কালাম, হাদীসের শব্দ! আর আমি? আমি তা দেখতে পাই! তবুও কত গাফেল, কত অলস, কত অজ্ঞ... সেদিনের সেই “অজানা কিতাব” বদলে দিয়েছিলো আমার জীবনের মান।শিখিয়েছিলো আলাকিত হওয়ার জন্য চোখ নয়, দরকার হৃদয়ের আলো।আল্লাহ যাকে চান, তাকেই হিদায়াত দেনচাখ দিয়ে নয়, অনুভব দিয়ে। সেই দিন থেকে নববী লাইব্রেরিতে গেলে আমি আর আগের আমি থাকি না।এই চোখ যে একদিন জবাবদিহির জন্য ফেরত দিতে হব সেই ভাবনাটা প্রতিটি পাতার সাথে গভীর হয়। 

দেয়ালের ভাষা নেই, তবুও হৃদয়ের ভাষায় লেখা নবীপ্রেমের এক নীরব মিলনমেলা
আসরের সালাত শেষে কুল্লিয়ার লাইব্রেরির একপাশে বসছি কিতাব হাতে। নিরব, গম্ভীর, ধ্যানমগ্ন পরিবশ। কিন্তু চোখ দুটো স্থির হতে পারে না চারপাশের দৃশ্য যেন এক জীবন্ত কাব্য।এক কোণে বসে আছেন সাদা দাড়িওয়ালা এক আফ্রিকান বৃদ্ধ, কপালে চিন্তার ভাঁজ। সামনে রাখা কিতাবের প্রতিটি লাইনে হয়তো তিনি খুঁজছেন রাসূলের কোনা আদর্শ।তার ডানে তরুণ এক সুদানী, হালকা ভ্রু কুঁচক গম্ভীর চেহারায় নোট নিচ্ছেন। তার পাশে বসা এক মালয়শিয়ান সাদা ক্যাপ, চোখে চশমা, ধীরে ধীরে কি যেন পড়ছেন ।কিছু দূরে একজন সৌদি যুবক, মাথা নিচু করে হাদীস লিখছেন।পাশে বসে আছেন একজন বাংলাদেশি আলেম ঢাকা থেকে আসা, মুখে প্রশান্তির ছাপ, হাতে সহীহ বুখারী যেন প্রতিটি হাদীস তিনি জীবনের সঙ্গে মিশিয়ে নিচ্ছেন। একটু পরই একজন ইউরাপিয়ান ভাই এসে চুপচাপ এক কোণে বসে গেলেন। তার মুখে কোনা শব্দ নেই, কেবল চোখে বিস্ময়। এক লাইব্রেরিতে এত ভিন্ন মুখ, ভিন্ন ভাষা, তবু এত হৃদ্যতা? কারো সঙ্গে কারো পরিচয় নেই। কেউ এখানে চার বছরের তালিবে ইলম, কেউ এক মাসের উমরাহকারী। কেউ আরব, কেউ আজমি। কেউ ছাত্র, কেউ বৃদ্ধ। কেউ জীবন গড়তে এসেছে, কেউ জীবন পাল্টাতে। তবু সবাইকে এক করেছে একটি নাম মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِي تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ الْوَاحِدِ...
মু’মিনগণ পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়ার দিক দিয়ে একটি দেহের মতো; দেহের এক অঙ্গে কষ্ট পেলে পুরো শরীরই অসুস্থ হয়ে পড়ে। (সহীহ আল-বুখারী, সহীহ মুসলিম) 

এই লাইব্রেরিতে কারও মুখে উচ্চস্বরে কোনো শব্দ নেই। লাইব্রেরির এই নীরবতা আসলে একধরনের ইবাদত। এটা এমন এক স্থান, যেখানে হাজারো সংস্কৃতি মিলেমিশে একটাই পরিচয় গাঁথা ‘আমরা রাসূলের উম্মত।’

লাইব্রেরির কোণে জমজম আর মদিনার প্রেমে ভেজা সন্ধ্যা
মসজিদে নববীর লাইব্রেরিতে সন্ধ্যার সময়টা হয় অন্যরকম। মানুষ জনের ভিড় কমে আসে, শব্দ থেমে যায়, বাতাস ছড়িয়ে পড়ে একরকম প্রশান্তি। সেদিন আমি বসে ছিলাম একটা কোণে। বইয়ের পাশে রাখা ঠান্ডা জমজমের পানি। হারামের মতো করেই লাইব্রেরির মাঝখানে রাখা হয় একাধিক ড্রামে সবার জন্য উন্মুক্ত। এক গ্লাস জমজম হাতে নিয়ে যখন চুমুক দিলাম, তখন মনে হচ্ছিলো এই শহরটা শুধু পানি দিয়ে নয়, বরং ভালাবাসা দিয়ে সিক্ত করা।এই পানি শুধু শরীরে ঠান্ডা করে না এটা হৃদয়ের গভীরে  পৌঁছে যায়। সেই সময় মনে হলো, আল্লাহ আমাকে মদিনায় স্থান দিয়েছেন এই তো আমার সবচেয়ে বড় নিয়ামত।চারপাশের নীরবতা, মাথার ওপর বইয়ের র‌্যাক, গ্লাসে জমজমের পানি, আর অন্তের একটাই অনুভব ‘আমি মদিনায় আছি’ এ অনুভূতির জন্যই যেন হাজারো ভালাবাসা ছুটে আসে এই শহরের প্রতি।এই লাইব্ররি শুধু জ্ঞানার্জনের স্থান নয় এটা হৃদয় গঠনের স্থান, আত্মার পরিশুদ্ধির এক ময়দান।

قالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ العِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حتَّى إذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا، اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا، فَسُئِلُوا، فَأَفْتَوْا بغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وأَضَلُّوا.
আল্লাহ জ্ঞানকে মানুষের সিনা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে উঠিয়ে নেন না; বরং আলেমদের মৃত্যু দিয়ে জ্ঞান উঠিয়ে নেন। যখন কোনা আলেম অবশিষ্ট থাকবেন না, তখন মানুষ অজ্ঞ লোকদেরকে নেতা বানাবে। তারা জিজ্ঞাসা করা হলে জ্ঞান ছাড়াই ফতোয়া দেবে। ফলে নিজেরাও গোমরাহ হবে এবং অন্যদেরকেও গোমরাহ করবে। (সহীহ আল-বুখারী, সহীহ মুসলিম)

নীরব খেদমতের বাঙালি যোদ্ধারা
মসজিদ নববীর লাইব্রেরিতে কিছু বাংলাদেশি ভাই আছনে চোখে পড়ে না, কিন্তু হৃদয়ে নাড়া দেন।তাঁরা কথা বলেন কম, কাজ করেন বেশি।তাঁদের হাতে প্রতিদিন স্পর্শ পায় হাজারো কিতাব। ধুলোমাখা পৃষ্ঠাগুলো তারা নিঃশব্দে মুছে দেন, সযত্নে গুছিয়ে রাখেন সঠিক তাকের মাঝে।এদের অনেকেই কখনো দরসে বসেননি, কিন্তু তাঁদের খদমতের মাধ্যমে দরসের পরিবেশ গড়ে ওঠে।তাঁরা মুছে রাখেন সেই কিতাব, যেটি দিয়ে একজন আলেম শিখাবেন দুনিয়ার অপর প্রান্তের হাজারো শিক্ষার্থীকে। সে বলেন: ‘হুজুর, বইটা ভারী, আমি রেখে দিচ্ছি।’ অথবা, ‘আপনি পড়া শেষ করলেন? আমি এটা মুছে গুছিয়ে রাখছি।’

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ.
নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, আসমান-জমিনের সকল বাসিন্দা এমনকি পিঁপড়া তার গুহায় এবং মাছ পর্যন্ত মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয় এমন ব্যক্তির জন্য দোয়া করে।

তাঁরা জানেন, আলমগণের খেদমত মানে ইলমের খেদমত।আর ইলমের খেদমত মানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দীনকে আগলে রাখা।( সুনান আত-তিরমিযী)

যে মানুষ ইলম প্রচারের পথকে পরোক্ষভাবে পরিষ্কার রাখে, তার দো‘আও ফেরেশতা করে, মাছও করে—এটা কল্পনার বাইরের এক বরকত।

বইয়ের পাতায় যে দোয়া শিখলাম

সেদিনের পড়ার মাঝে একটা দোয়া চোখে পড়েছিল,যা আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল:
اللهم اجعلني من أهل العلم والعمل
হে আল্লাহ! আমাকে এমন একজন বানাও, যে ইলম অর্জন করে ও সে অনুযায়ী আমল করে।

সেই সন্ধ্যার লাইব্রেরি আমার কাছে শুধু একটা জায়গা ছিল না,বরং ছিল একটি জান্নাতের ছায়া, যেখানে শব্দ নয় হৃদয় কথা বলে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আল-কুরআন ও ইসলামিক স্টাডিজ (স্নাতক - অনার্স), দ্য কলেজ অফ দ্য প্রফেটস মসজিদ, মদীনা, সৌদি আরব

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ