|| জুবায়ের বিন আব্দুল কুদ্দুস ||
২৬ এপ্রিল বিশ্ব মেধা সম্পদ দিবস।
মেধা হলো মানব জীবনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, যা মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে পৃথক করেছে। যদিও সমস্ত প্রাণীর মধ্যে সীমিত মেধা রয়েছে, আল্লাহ তা'আলা মানুষের মধ্যে মেধার পূর্ণতা দান করেছেন। এ জন্যই মানুষ "আশরাফুল মাখলুকাত" — সৃষ্টির সেরা জীব — হিসেবে সম্মানিত হয়েছে।
মেধা সেই যোগ্যতা, যার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা যায়, পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো যায় এবং মানুষকে আপন করে তোলা সম্ভব হয়।
এটি যেমন পড়াশোনা ও চর্চার মাধ্যমে অর্জিত হয়, তেমনি অবস্থা, পরিস্থিতি ও বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমেও বিকশিত হয়।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, "প্রত্যেক মানুষই মেধাবী। তবে তাকে তার নিজস্ব যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করতে হবে। যদি কোনো মাছকে গাছে ওঠার ক্ষমতার বিচারে বিচার করা হয়, তবে সে সারাজীবন নিজেকে ব্যর্থ মনে করবে।"
মেধাবী ব্যক্তিরা দেশ ও জাতির অমূল্য সম্পদ। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন ও কর্মক্ষেত্রে মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান অতি গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমেই একটি জাতি দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে।
তবে যারা তুলনামূলক কম মেধাসম্পন্ন, তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বারবার পড়েও যারা আত্মস্থ করতে পারে না, তাদের জন্যও এই মেধা সম্পদ দিবস বিশেষ বার্তা বহন করে।
আজকের দিনে আমি আপনাদের সামনে দুটি অনুপ্রেরণাদায়ক ঘটনা উপস্থাপন করতে চাই—
একটি: প্রখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত আল্লামা সাদ উদ্দিন তাফতাজানী রহ. এর জীবন থেকে।
অপরটি: খ্যাতনামা হিন্দু পণ্ডিত কালিদাসের জীবন থেকে।
আল্লামা সাদ উদ্দিন তাফতাজানী (রহ.):
আমরা আমাদের শিক্ষকগণের মুখে তাঁর নাম বারবার শুনেছি। শিক্ষা জীবনের শুরুতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাহীন। পড়াশোনায় ছিলেন দুর্বল, কিন্তু চেষ্টা এবং অধ্যবসায়ের দিক দিয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন।
বন্ধুরা যখন ঘোরাফেরার জন্য ডাকত, তিনি বলতেন, "আমি তো পড়া পারি না, ঘুরতে যাব কীভাবে?"
তিনি দিনরাত পড়াশোনায় মগ্ন থাকতেন, দোয়া করতেন এবং আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে সাহায্য চাইতেন।
একদিন স্বপ্নে দেখলেন, একজন তাঁকে ঘুরতে ডাকছেন। তিনবার ডাকলেও তিনি বললেন, “আমি পড়া পারি না, ঘুরবো কীভাবে?”
শেষে ঐ ব্যক্তি জানালেন, নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ডাকছেন।
সাদ রহ. তখন ছুটে নবীজির কাছে পৌঁছান। নবীজি মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি তোমাকে কয়েকবার ডাকলাম, তুমি আসলে না কেন?”
তিনি বললেন, “আপনি ডাকছেন, এটা তো আমাকে বলা হয়নি।”
নবীজি (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কী সমস্যা?”
তিনি বললেন, “আমি পড়ি, কিন্তু পড়া মুখস্থ থাকে না।”
নবীজি (সা.) তাঁর মুখ খুলতে বললেন এবং তাতে পবিত্র থুতু মোবারক লাগিয়ে দিলেন।
এর পর আল্লামা সাদ উদ্দিন তাফতাজানীর স্মরণশক্তি ও মেধা এতটা প্রখর হয়ে যায় যে, তাঁর লেখা গ্রন্থগুলো পড়াতে আজকের মেধাবী শিক্ষকরাও হিমশিম খান।
কালিদাস পণ্ডিত:
আমাদের শিক্ষকগণের মুখে শুনেছি, কালিদাস শৈশবে মেধাহীন ছিলেন। পড়াশোনায় তিনি বারবার ব্যর্থ হতেন এবং হীনম্মন্যতায় ভুগতেন।
একদিন হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করতে নদীর ঘাটে গেলেন। সেখানে দেখতে পেলেন, মাটির কলসের ঘর্ষণে শক্ত পাথর ক্ষয় হয়ে গেছে।
তিনি ভাবলেন, "যদি মাটির কলসের ঘর্ষণে পাথর ক্ষয় হয়, তবে আমি কেন পরিশ্রম করে সফল হতে পারবো না?"
এই উপলব্ধির পরে তিনি ঘরে ফিরে অক্লান্ত পরিশ্রম শুরু করেন। তাঁর অধ্যাবসায় ও সাধনা তাঁকে কালিদাস নামে বিশ্ববিখ্যাত করে তোলে।
“বিশ্ব মেধা সম্পদ দিবস” আমাদের শিক্ষা দেয়— মেধার বিকাশের জন্য নিরলস পরিশ্রম অপরিহার্য। চেষ্টা ও সাধনার সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া ও কান্নাকাটি করলে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়াও সম্ভব, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে চেষ্টা, সাধনা ও দোয়ার মাধ্যমে মেধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: শিক্ষক, লালবাগ মাদ্রাসা ঢাকা
খতিব, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ
এমএইচ/