সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৩ কার্তিক ১৪৩২ ।। ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
ওমরায় গেলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় গেলে এক টাকাও লুটপাট হবে না: শায়খে চরমোনাই কোরআন অবমাননার দায় স্বীকার সেই অপূর্ব পালের জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা দলগুলোর কর্মসূচি ঘোষণা তুরস্কে স্কলারশিপ পেলেন ৫ শিক্ষার্থী, এমবিএম ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা পাকিস্তানের শীর্ষ আলেম মাওলানা ফজলুর রহমান সিলেটে আসছেন ১৭ নভেম্বর জামায়াতের নির্বাচনি সভা ভণ্ডুল করে দিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা মিথ্যা মামলায় দুই মাদরাসা শিক্ষককে হয়রানি, মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন চাঁদা না পেয়ে মসজিদের ইমামকে মারধর, স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি ৫ দফা দাবিতে আন্দোলনরত দলসমূহের যৌথ সংবাদ সম্মেলন

শাহ জালালের প্রতিচ্ছবি প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমান রহ.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

- কাজী কামরুল হাসান

সত্তরের দশক। তখনকার সময়ে বাতিল বিরোধী যেকোনো আন্দোলন ও সংগ্রামের সূতিকাগার ছিল ক্বাসিমুল উলুম দরগাহে শাহ জালাল মাদ্রাসা। আর এসব আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন উক্ত মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস ও স্বনামধন্য মুফতি আব্দুল হান্নান রহ.।

সত্তর ও আশির দশকে বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধী যেকোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আগে সিলেটের আলেম সমাজ ছুটে যেতেন এই মহান নেতার কাছে। তিনি ছিলেন তৎকালীন উলামায়ে কেরামের ভরসাস্থল, আশ্রয় এবং সাহসের উৎস। তাঁর ডাকে আন্দোলন শুরু হতো, তাঁর নেতৃত্বেই তা পরিচালিত হতো।

মুফতি আব্দুল হান্নান রহ.-এর ডান হাত ছিলেন এক টগবগে তরুণ। ভবিষ্যতের আন্দোলনের বীর সিপাহসালার। শাহ জালাল মুজাররাদে ইয়ামানির জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি আর কেউ নন, তিনি আমাদের প্রিয় প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান রহ.।

তারুণ্যে নেতৃত্বের উত্থান
আমি তখনও কাজীর বাজার জামেয়ায় ভর্তি হইনি। সত্তরের দশকে সিলেটের যে কোনো আন্দোলন, সভা-সমাবেশ বা রেজিস্ট্রারি মাঠে অনুষ্ঠিত সিরাতুন নবী সা. সম্মেলনে তাঁর সাহসিক নেতৃত্ব ফুটে উঠতো। তরুণ আলেম হাবীবুর রহমান ছিলেন দক্ষ সংগঠক এবং প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন এক যুবক।

তিনি ছিলেন অনুষ্ঠানগুলোর প্রাণ। সঞ্চালনার ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুবান্ধবদের উদ্দেশে তাঁর জ্বালাময়ী বক্তৃতা উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি করতো। তাঁর প্রত্যয়ী নেতৃত্ব ও অসাধারণ দক্ষতার মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সিলেটের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের আস্থাভাজন।

উত্তরসূরীর দায়িত্বভার গ্রহণ
সত্তরের দশকের শেষদিকে হজ পালনের সময় ইন্তেকাল করেন মুফতি আব্দুল হান্নান রহ.। তাঁর মৃত্যুতে যে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা পূরণ করেছিলেন তাঁর হাতে গড়া বীর মুজাহিদ প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমান রহ.। আশির দশক থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সিলেটে বাতিল বিরোধী আন্দোলনের প্রধান সিপাহসালার ছিলেন তিনি।

তসলিমা নাসরিন বিরোধী আন্দোলন
১৯৯৪ সালে বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমান রহ.। তাঁর নেতৃত্বে সংগঠন ‘সাহাবা সৈনিক পরিষদ’র ব্যানারে সিলেটে অসংখ্য সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর আপোষহীন আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তসলিমা নাসরিন।

শুধু এই ঘটনাই নয়, দেশের নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী বহু আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ছিলেন নির্ভীক, আপোষহীন এবং দুঃসাহসিক। তাঁর হুংকারে বাতিলের শক্তি তছনছ হয়ে যেত, যেভাবে শাহ জালাল রহ. এর আওয়াজে কেঁপে উঠেছিল গৌড়গোবিন্দের রাজপ্রাসাদ।

সাহসিকতার জীবন্ত প্রতীক
প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমান রহ. ছিলেন এমন এক আলেম, যিনি কখনো কারো রক্তচক্ষুকে ভয় পেতেন না। তাঁর সাহসিকতা এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তাঁর হুংকারে কত বাতিল শক্তি পালিয়ে গিয়েছে! তাঁর সংগ্রামী নেতৃত্বে, আলেমসমাজের নেতৃত্বদানের যোগ্যতায় এবং ইসলামের শত্রুদের মোকাবিলায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন সিলেটের জিন্দা শাহ জালাল।

আজও তাঁর স্মৃতি আমাদের মাঝে জ্বলজ্বল করছে। ইসলামের এই অকুতোভয় সৈনিককে আমরা চিরকাল স্মরণ করব গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে।

চলবে...

কেএল/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ