বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ ।। ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৫


আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ., যাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে তাবলিগের প্রসার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| আবুল মাশহুর ||

বাংলাদেশ ইসলামের ঊর্বর ভূমি। দীনি দাওয়াত আর তালিমের এক শক্ত ঘাঁটি এই মাটি। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য আলেমের ত্যাগ ও কুরবানি। যে সব উলামায়ে কেরাম এই ঊর্বর ভূমি গঠনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তাদের অন্যতম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.। তিনি একাধারে যেমন ছিলেন লেখক, গবেষক, আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিক, এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন দাওয়াত ও তাবলিগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও। দাওয়াতি মেহনত পরিচালনা করা থেকে শুরু করে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের আমির নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত অনেক দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন। তিনিই অন্যতম পৃষ্ঠপোষক যার নিবিড় পরিচালনায় মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ. দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সুযোগ লাভ করেছিলেন। আমরা আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর বহুমুখী খেদমত সম্পর্কে জানতে পারলেও তিনি যে দাওয়াত ও তাবলিগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সে সম্পর্কে অনেকটাই অবগত নই।

শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. একবার ইলিয়াস রহ.-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। মাওলানা ইলিয়াস রহ. তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘মাওলানা! বাংলাদেশ তাবলিগ জামাতের দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে।’ সেদিন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘অবশ্যই, আমি এ কাজ করবো ইনশাআল্ল¬াহ।’ মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর সঙ্গে কথা বলার পর তিনি বাংলাদেশে এসে খুলনার উদয়পুরের পীর মাওলানা শাহ আব্দুল হালিমের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সেখানেই পরিচয় হয়  মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ.-এর সাথে। তাঁর মধ্যে দাওয়াত ও তাবলিগের প্রতি আগ্রহ দেখে তাঁকে প্রস্তাব করেন, তুমি আমার মাদরাসায় চলে এসো। সেখানে থাকলে তোমার জন্য দুটি কাজ করাই সহজ হবে। এরপর মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ. তাঁর শ্বশুরের অনুমতি নিয়ে রায়বেন্ডে আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর মাদরাসায় চলে আসেন।

মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ. ওই মাদরাসায় থাকাকালে দিল্লি থেকে একটি জামাত আসে। সে জামাত নিয়ে আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. ও মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ. উভয়ে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করেন। এ সফরের পরপরই ফরিদপুরী রহ. মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ.কে এক চিল্লার জন্য পাঠান। চিল্লা থেকে ফিরে তিনি ছদর সাহেব হুজুরকে বলেন, ‘হুজুর, তাবলিগের কাজ খুবই মহান। এ কাজের মাধ্যমে মানুষের ইহ ও পরকালীন মুক্তি সম্ভব। সুতরাং আমি আরও কিছুদিন তাবলিগ জামাতে সময় লাগাতে চাই। আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. তখন তাঁকে বললেন, ‘বাবা আজিজ! এ কাজ আমারও খুব প্রিয়। তুমি চাইলে আরও সময় লাগাতে পারো। এভাবে মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ.কে তিনি নিজ হাতে দাওয়াত ও তাবলিগের জন্য গড়ে তোলেন।

এভাবে বাংলাদেশে দাওয়াত ও তাবলিগের প্রচার-প্রসারে সর্বত্রই আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর অবদান ছিল অন্যতম। তাঁর এই পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে বাংলাদেশে দাওয়াত ও তাবলিগের এতো দ্রুত প্রসার ঘটত কি-না সন্দেহ। অথচ এই বিষয়টা আজ আমরা অনেকেই জানি না।

মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ. চিল্লা থেকে এসে উদয়পুর মাদরাসা মসজিদকে মারকাজ নির্ধারণ করেন। আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. ও শাহ আব্দুল হালিম রহ. উভয়ে মিলে মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ.কে বাংলাদেশ তাবলিগ জামাতের আমির নিযুক্ত করেন। খুলনা জেলার উদয়পুর মাদরাসা মসজিদ হলো বাংলাদেশ তাবলিগ জামাতের প্রথম মারকাজ। আর মাওলানা আব্দুল আজিজ রহ. হলেন প্রথম আমির।

কিছুদিন পর আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. ও শাহ আব্দুল হালিম রহ. উভয়ের পরামর্শে তেরোখাদা থানার বামনভাঙ্গায় মারকাজ স্থানান্তর করা হয়। মোল্লারহাটের উদয়পুরে ছোট পরিসরে তখন একটি তাবলিগি ইজতেমা হতো। একবার ইজতেমায় এসে ছদর সাহেব রহ. বলেন, বাবা আব্দুল আজিজ, গ্রামের বাড়িতে মারকাজ হয় না। খুলনা শহরে মারকাজ করা প্রয়োজন।’ এরপর খুলনা শহরের হেলাতলা তালাবওয়ালি মসজিদে মারকাজ স্থানান্তর করা হলে তাবলিগের কাজ অনেক বেড়ে যায়। অতঃপর ছদর সাহেবের পরামর্শে এলাকাভিত্তিক মারকাজ ছেড়ে লালবাগ শাহি মসজিদে নিয়ে আসা হয়। এখানেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় ছদর সাহেব রহ. সবাইকে ঢাকায় বড় মাঠের পাশে মসজিদ খুঁজতে বললেন। তাঁর পরামর্শে অনেক খোঁজাখুজির পর রমনা পার্কের পাশে মালওয়ালি নামের ছোট্ট একটি (বর্তমান কাকরাইল) মসজিদের সন্ধান পাওয়া যায়। হুজুর স্থানটি খুব পছন্দ করলেন। তখন তিনি এই মসজিদকেই তাবলিগের মারকাজ হিসেবে মনোনীত করেন।

লেখক: আলেম, লেখক 

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ