শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৪ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
গাজায় বোমা বিস্ফোরণে ৪ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত রাশিয়া থেকে এক হাজার সেনার মরদেহ ফেরত পেল ইউক্রেন যৌথ বাহিনীর অভিযান: সারাদেশে আটক ২৯ জন কচুয়ায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও যুব মজলিসের নতুন কমিটি ঘোষণা কেবল নেতা পরিবর্তন করতে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতা রক্ত দেয় নাই : শায়েখে চরমোনাই জুলাই চেতনার সাথে গাদ্দারি ইতিহাস ক্ষমা করবে না : নেজামে ইসলাম পার্টি  চাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্যানেল ঘোষণা হক্কানী আলেমদের পরামর্শে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জাতির জন্য কল্যাণকর: জমিয়ত আলোচনার মধ্যে কর্মসূচি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়: মির্জা ফখরুল শনিবার ঢাকায় কচুয়ার উলামায়ে কেরামের মতবিনিময় সভা

কওমি শিক্ষা নিয়ে ভুল ধারণার সত্যটা কী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
কওমি মাদরাসার ক্লাসের দৃশ্য

|| আব্দুল্লাহ আনাস ||

⛔ ‌‘পুরনো’, ‌‘কট্টর’, ‘বিচ্ছিন্ন’ — এই সব ধারণা কতটা সত্যি?

বাংলাদেশের শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থায় কওমি মাদরাসাগুলোর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং মানবিক গুণাবলি বিকাশে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অনন্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এখনো সমাজে কওমি মাদরাসা নিয়ে কিছু নেতিবাচক ও ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত অবদান ও শিক্ষার গভীরতাকে আড়াল করে রাখে।

আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা সেই ভুল ধারণাগুলো খণ্ডন করে তুলে ধরছি বাস্তব চিত্র। কারণ, সত্য জানা আমাদের সবার দায়িত্ব।

❌ ভুল ধারণা ১: কওমি মাদরাসা মানেই শুধু ধর্ম শেখানো হয়

✅ বাস্তবতা:

কওমি মাদরাসাগুলোতে কুরআন, হাদীস, ফিকহ, আরবি সাহিত্য, যুক্তিবিদ্যা, ইতিহাস, ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের গভীর পড়াশোনা হয়। এমনকি এখন অনেক প্রতিষ্ঠান মৌলিক ইংরেজি, কম্পিউটার এবং সমসাময়িক বিষয়গুলোও পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করছে।

❌ ভুল ধারণা ২: কওমি ছাত্ররা আধুনিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন

✅ বাস্তবতা:

আজকের অনেক কওমি শিক্ষার্থী অনলাইনে ইসলাম প্রচার, কনটেন্ট ক্রিয়েশন, ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ নানা সেক্টরে দক্ষতার ছাপ রাখছে। তারা ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় এবং সমাজের সঙ্গে সুসংগতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

❌ ভুল ধারণা ৩: কওমি ছাত্ররা কট্টর মনোভাবের হয়

✅ বাস্তবতা:

কওমি ছাত্রদের নৈতিকতা, বিনয় এবং মানবিক আচরণ সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তারা মসজিদে ইমামতি, দরস দেওয়া, সমাজসেবা ও দাওয়াতি কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখে, যা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবামূলক। নরম স্বভাব ও সহনশীলতা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

❌ ভুল ধারণা ৪: কওমি ডিগ্রির কোনো মূল্য নেই

✅ বাস্তবতা:

২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদীসকে সাধারণ ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে মাস্টার্সের সমতুল্য ঘোষণা করে। ফলে কওমি শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায়ও প্রবেশাধিকার পেয়েছে।

❌ ভুল ধারণা ৫: কওমি ছাত্ররা সমাজের বোঝা

✅ বাস্তবতা:

অসংখ্য কওমি ছাত্র সমাজে নিঃস্বভাবে ইমাম, খতিব, শিক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ কারো কাছে কোনো পারিশ্রমিক দাবি করছেন না, বরং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।

শেষ কথা: দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, সত্যকে চিনুন

আজকের দুনিয়ায় যখন নৈতিকতার অবক্ষয় বেড়ে চলেছে, তখন কওমি মাদরাসা একটি শক্তিশালী মূল্যবোধের দুর্গ হিসেবে কাজ করছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, বরং সমাজের জন্য এক শ্রেষ্ঠ মানবসম্পদ গড়ে তুলছে।

তাই কওমি মাদরাসাকে ভুল বোঝার আগে তাদের বাস্তব অবদানকে জানা এবং স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি। সচেতন সমাজ গঠনে কওমি শিক্ষার্থীরা আমাদের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

লেখক: আওয়ার ইসলাম-এর নিয়মিত প্রতিবেদক। ধর্ম, শিক্ষা ও সমাজ বিষয়ক লেখক। 

 


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ