সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ।। ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১২ জিলকদ ১৪৪৫


দেশেই বিশ্বমানের ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন মাওলানা মানফুজুর রহমান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: আওয়ার ইসলাম

|| কাউসার লাবীব ||

কওমি শিক্ষার্থীদের ইংলিশ স্পোকেন শিখিয়ে দেশব্যাপী বেশ সুনাম অর্জন করেছেন অধ্যাপক মাওলানা মানফুজুর রহমান। বর্তমানে ঢাকার পাশে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ‘গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট’ নামে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করে শিশুদের মাঝে ইংলিশ ও দ্বীনি শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ইতোমধ্যেই দেশের বাইরেও প্রতিষ্ঠানটির শাখা ছড়িয়ে পড়েছে।

কীভাবে তিনি শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন? স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট’ নিয়ে তার স্বপ্ন কী? এসবসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছি গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সিইও অধ্যাপক মাওলানা মানফুজুর রহমানের সঙ্গে–

আওয়ার ইসলাম: একটা সময় আপনি দেশজুড়ে বেশ সুনামের সঙ্গে মানফুজুর'স স্পোকেন ইংলিশ কোর্স করাতেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে আপনার। এখন শুধু শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এর কারণ কী?

মাওলানা মানফুজুর রহমান: আমি একবার আমার বাচ্চাদের ভর্তির জন্য মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুঁজছিলাম। দেখলাম, যদি মাদরাসায় দিই তাহলে তারা জাগতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। আবার যখন ইংলিশ মিডিয়ামগুলোতে গেলাম দেখলাম সেখানের বাচ্চারা তাদের প্রভু কে? নবী কে? কিছুই জানেনা। এই অবস্থায় তাদেরকে যদি সেখানে দিই তাহলে দ্বীন থেকে বঞ্চিত হবে। তখন থেকেই আমার ভাবনা ছিল দেশে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা; যেখান থেকে বাচ্চা যেভাবে বিশ্ব মানের আলেম-হাফেজ হবে, চাইলে দ্বীন শেখার পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষাও অর্জন করতে পারবে।

এছাড়া বড়দের নিয়ে তো অনেক কাজ করলাম। এক পর্যায়ে মনে হলো, এই চেষ্টাটা যদি আমি শিশুদের মাঝে করি তাহলে কাজগুলো আরো ফলপ্রসু হবে। তখন আমি গবেষণা শুরু করি। এরপর গড়ে তুলি ‘গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট’।

আওয়ার ইসলাম:গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউটকীভাবে শিশু শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে যদি একটু বিস্তারিত বলতেন...

মাওলানা মানফুজুর রহমান: আপনি শুনলে অবাক হবেন, আমাদের এখানে  মাত্র ৪ বছরের শিশু ভর্তি হয়ে ৩ বছরেই কোরআনের হাফেজ হচ্ছে! আলহামদুলিল্লাহ! এর পুরোটাই সম্ভব হয়েছে আমাদের সুবিন্যস্ত কারিকুলাম এবং দীর্ঘ গবেষণার পর সেই অনুযায়ী কাজের কারণে।

Global Education Instituteকে বলা যায় বাংলাদেশের প্রথম হিফজুল কোরআনের পাশাপাশি ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা। আমার এই প্রতিষ্ঠানটি করার উদ্দেশ্য হলো, একটা বাচ্চা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোরআনের হাফেজ হবে। এবং ইংরেজি ভাষাকে বাংলা ভাষার মতো শিখবে। এবং সারা বিশ্বে কোরআন হাদিসের প্রচার-প্রসার করবে।

আমাদের এখানে যেসব টিচাররা আছেন তারা ইংরেজি ও আরবিতে সমান পারদর্শী। এবং হাফেজ মাওলানা মুফতি। আল আজহারী ইউনিভার্সিটিতে ১০-১২ বছর পড়াশোনা করে এসেছে এমন টিচার দিয়ে আমরা কিতাব বিভাগ পরিচালনা করি। টিচারদের মানোন্নয়নে দক্ষ টিচার্স ট্রেইনারদের দিয়ে ট্রেনিং করাই। বিশেষ ইসলাহি মজলিসের আয়োজন করি।

আওয়ার ইসলাম: বলছিলেন, মাত্র ৪ বছরের বাচ্চাদেরকেও আপনারা আবাসিক ভর্তি নিয়ে থাকেন। এতো ছোট শিশুদেরকে কীভাবে পড়াশোনা করানো হয়? খাওয়া-দাওয়াসহ তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তা কীভাবে রক্ষা করা হয়?

মাওলানা মানফুজুর রহমান: আমরা ফজরের পর থেকে নিয়ে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যে সমস্ত প্রয়োজনের বাক্যালাপ করি বাংলা ভাষায়, প্রত্যেকজন টিচার এবং শিক্ষার্থীকে বলে রেখেছি তারা যেন এগুলো চেষ্টা করে ইংরেজি এবং আরবি ভাষায় বলার জন্য। যদি কোন জায়গায় গিয়ে আটকে যায় তাহলে ছোট একটি নোটবুকে সেটি নোট করে পরবর্তীতে জেনে নেয়ার জন্য। এভাবে হাঁটতে-চলতে তারা আরবি এবং ইংরেজি ভাষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ভাষাগুলো শিখে যাচ্ছে।

ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি ইংলিশ মিডিয়ামের English, Bengali, Math, Computer science, General knowledge, Geography, Bangla- English Handwriting, Islamic Entertainment, English Phonics, Phonetic, Spoken Skills, listening Skills, Writing Skills -এ দক্ষ করে গড়ে তুলি শিশুদেরকে।

জেনারেল ও দ্বীনি শিক্ষার সুষম সমন্বয়ে পুরুষ ও মহিলা শাখায় অভিজ্ঞ বিষয়ভিত্তিক  শিক্ষকমণ্ডলীর মাধ্যমে আরবি ও  ইংলিশ মিডিয়ামের সিলেবাস একই সাথে পাঠদান আমরা করিয়ে থাকি।

আমরা সম্পুর্ণ শাসন বিহীন, কাউন্সিলের মাধ্যমে কোমলমতি শিশুদেরকে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করিয়ে থাকি। আমার গবেষণায় দেখেছি, প্রহার ও ধমক শিশুদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি তাদের মেধা বিকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আদর সোহাগের মাধ্যমে আমাদের নিজস্ব কৌশলে শিশুদেরকে পড়াশোনা করিয়ে থাকি।

আমাদের এখানে রয়েছে সুশৃংখল উন্মুক্ত এসি ক্লাসরুম, স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্ন ডাইনিং ব্যবস্থাপনা।

আবাসিক ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সিকিউরিটি গার্ড,  প্রতিটি রুমে নাইট ভিশন সিসি ক্যামেরা, এসি রুম, সিঙ্গেল বেড, দোতলা বেড, প্রতিটি রুমে ১০/২০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের দেখাশোনা; যেমন ঘুম পারিয়ে দেয়া,কাপড় ধৌত করে দেয়া,বিছানা বিছিয়ে দেয়া, মশারী টানিয়ে দেয়া, গোছল করিয়ে দেয়া, নখ-চুল কেটে দেয়া। তাছাড়া তিন বেলা খানা-চার বেলা নাস্তা পরিবেশনার জন্য আলাদা আলাদা খাদেম নিযুক্ত রয়েছে। শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার সাথে সাথে আলাদা মেডিকেল রুম রয়েছে; যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া উন্নতি চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাইভেট হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একজন ডাক্তারী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক সবসময় নিযুক্ত রয়েছে। অতএব গার্ডিয়ানের অতিরিক্ত ঝামেলা পোয়াতে হয় না।

আওয়ার ইসলাম: দেশের বাইরেওগ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউটর শাখা উদ্বোধন হলো। বিষয়টি নিয়ে কিছু জানতে চাই

মাওলানা মানফুজুর রহমান: আসলে আন্তর্জাতিক শিক্ষা মিশন গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট শুরু থেকেই দেশ-বিদেশে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এগুচ্ছে। সেই পরিকল্পনা থেকে গত ২১ ডিসেম্বর গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউটের নতুন এই শাখাটি কলকাতার হাওড়ায় উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে আমি উপস্থিত ছিলাম।

দেখুন, বিশ্বায়নের এই যুগ এখন ইসলাম প্রসারের উর্বর সময়। ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন আধুনিক শিক্ষার সমন্বিত ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা। এজন্য গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট বিশ্বময় ইসলামের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে যোগ্য ও দক্ষ করে তুলতে চায় শিক্ষার্থীদের। ইসলাম ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে একজন শিক্ষার্থী বিশ্বময় ছড়িয়ে যাবে ইসলামের আলো বিলাতে।

আওয়ার ইসলাম: কোন কোন বিভাগে বর্তমানে গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম চলছে?

মাওলানা মানফুজুর রহমান: বর্তমানে আমাদের চলমান বিভাগগুলো হলো- এক. কায়দা,আমপারা (মেয়াদ- ৩মাস)। দুই. নাযেরা বিভাগেই ৭০% মুখস্থের মত তেলওয়াত শিক্ষা দান ও ৫ পারা মুখস্থ ( মেয়াদ -১বছর)। তিন. হিফয (মেয়াদ ১বছর)। তামসী (শুনানি) মেয়াদ ৬মাস/১বছর। পাঁচ. মুসাবাক্বাহ( প্রতিযোগিতা) বিভাগ। ছয়. জেনারেল (প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণি A-Level,OLevel পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যম) এবং সাত. মাদানী নেসাব (১ম,২য় ও ৩য় বর্ষ)

আওয়ার ইসলাম: ভর্তিসহ সার্বিক বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম বা সিস্টেম কী?

মাওলানা মানফুজুর রহমান: আমাদের এখানে আসার লোকেশন একেবারেই সহজ।ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যাত্রাবাড়ি হয়ে চিটাগাং রোড নেমে সিদ্ধিরগঞ্জপুল বটতলা ১০০ গজ পূর্বে, আইয়ুব নগর,নারায়ণগঞ্জ।  এখানে এসে গ্লোবাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট’র নাম বললে যেকেউ দেখিয়ে দিবে। তাছাড়া মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে পারবেন +8801842-476160  (imo/WhatsApp) নাম্বারে।

আওয়ার ইসলাম: দেশবাসীর কাছে আপনার কোনো আহ্বান থাকবে কী না?

মাওলানা মানফুজুর রহমান: বাংলাদেশে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপযোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপনারা খুঁজে থাকেন; যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মানসম্মত শিক্ষাকারিকুলাম, বিনোদনের জায়গা, বন্ধুসুলভ পড়াশোনার পরিবেশ। আপনার আদরের টুকরো সন্তানকে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার পূর্বে একবারের জন্য হলেও আমাদের প্রতিষ্ঠান ভিজিট করার আমন্ত্রণ রইল।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ