সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ।। ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭


ভাসানী-ওসমানী স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে পালিত হয়েছে মাওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ নভেম্বর সোমবার ভাসানী-ওসমানী স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে তাঁর কর্মময় জীবনের উপর আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাসানী-ওসমানী স্মৃতি সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান জুলাইযোদ্ধা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বকুল আবদুল হামিদ খান ভাসানী অধিকারবঞ্চিত, অবহেলিত ও মেহনতি মানুষের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় আজীবন নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় সংকটে জনগণের পাশে থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। ভাসানী ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন। ক্ষমতার কাছে থাকলেও তাঁকে কখনো ক্ষমতার মোহ আবিষ্ট করেনি। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন নির্মোহ, অনাড়ম্বর ও অত্যন্ত সাদাসিধা। তাঁর সাধারণ জীবনযাপন দেশ ও জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন। শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য ভাসানী আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী ও বঙ্গবীর জেনালের এম.এ.জি ওসমানী এর জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী রাষ্ট্রীয় ভাবে পালন এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিস আদালতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁদের ছবি টাঙ্গানো এবং মাওলানা ভাসানীকে জাতির পিতা ঘোষণার দাবীতে জানিয়েছেন।

আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মোঃ জহির আলী। বক্তব্য রাখেন, ফারুক মোহাম্মদ ওসমানী, নির্বাহী সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটি, মোহাম্মদ জাহিদ নূর, চান মিয়া, রফিক আলী, বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী সহ সমাজের সর্বস্তরের ছাত্র জনতা।

বক্তারা বলেন, ভাসানী-ওসমানী স্মৃতি সংসদ বাংলাদেশের উদ্যোগে মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী ও বঙ্গবীর জেনালের এম.এ.জি ওসমানী এর জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী রাষ্ট্রীয় ভাবে পালন এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিস আদালতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁদের ছবি টাঙ্গানো এবং মাওলানা ভাসানীকে জাতির পিতা ঘোষণার দাবীতে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার আলম এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে- মাওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক জীবন ছিলো অত্যান্ত বর্ণাঢ্য ও দীর্ঘস্থায়ী (১৮৮০ সনের ১২ই ডিসেম্বর ১৯৭৬ সনের ১৭ই নভেম্বর)। তিনি ব্রিটিশ ভারত ও পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশ তিনটি অধ্যায়ী সক্রিয় রাজনীতি করেছেন। সবসময় তিনি শোষিত, বঞ্চিত মানুষের দাবি আদায়ের সংগ্রাম করেছেন। ব্রিটিশ আমল প্রাথমিক রাজনীতি (১৯১৭-১৯৩০) তিনি ১৯১৭ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এরপর ১৯২৩ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত স্বরাজ পার্টিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯৩০ সাল হইতে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৩৭ সালে আসাম প্রাদেশিক পরিষদের সভায় সর্বপ্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব পেশ করেন।

১৯৫৭ সালে ৭/৮ ফেব্রুয়ারী তারিখে টাঙ্গাইলের কাগমারিতে অনুষ্টিত ঐতিহাসিক সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের উপস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

১৯৭১ সালের ৯ মার্চ ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষণা করেন। উক্ত সভায় জনতার পক্ষ থেকে মাওঃ ভাসানীকে জাতীর পিতা হিসাবে ঘোষিত করা হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য বঙ্গবীর জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীকে (মরণোত্তর) রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে ভূষিত করা হোক। ১৯৫১ সালে বঙ্গবীর জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট’ নামের সংগে বঙ্গবীর জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর নাম সংযোজন করে “চট্টগ্রাম বঙ্গবীর জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী ক্যান্টমেন্ট” নামকরণ করা হোক। মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় আবদানের জন্য দেশবাসী কর্তৃক প্রদত্ত উপাধী ‘বঙ্গবীর একান্তই ওসমানীর বীর মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম' নামের পূর্বে ব্যবহৃত 'বঙ্গবীর' উপাধী বাতিল করা হোক ।

১৯৭১ সনের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীকে উপস্থিত যাতে না থাকতে পারেন এবং তাহাকে ও তার সহযোগীদেরকে হত্যার উদ্দেশ্য তাদেরকে বহন করা হেলিকাপ্টারে বোমা ও গুলি বর্ষণ করা হয়। উক্ত কাপুরুষিত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ঘটন করে জাতীর সামনে প্রকাশ করার জন্য বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট জোড় দাবি জানান ।

পৃথিবীর বুকে এবং ইতিহাস খ্যাত সমরবিদ তিন তিনটি যুদ্ধে যিনি বিজয় অর্জন করেছেন যথা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পাকভারত যুদ্ধ, ১৯৭১ সালে যিনি সর্বাধিনায়ক দায়িত্ব পালন করেছে যিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর প্রতিষ্টাতা পৃথিবীর বুকে যাকে পাপা টাইগার হিসাবে পরিচতি লাভ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রবাসী সরকারের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ঘাত-প্রতিঘাত অর্ন্তনিহিত কোন্দল ভারতের কু-দৃষ্টি থেকে দেশ মাতৃকার প্রয়োজনে ৯ মাস তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনালের এম.এ.জি ওসমানী জন্ম ১৯১৮ সনের ১লা সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে শহরস্থ তাঁহার পিতা এস.ডি.ও খাঁন বাহাদুর মফিজ আলীর কর্মস্থলে ও তাঁহার মৃত্যু ১৯৮৪ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী তাঁহাকে কবরস্থ করা হয় হযরত শাহজালাল ইয়েমিনি রঃ মাজার প্রাঙ্গনে।

সেই ক্ষণজন্মা বীর পুরুষ বঙ্গবীর জেনালের এম.এ.জি ওসমানী ও মাওলানা ভাসানীর জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ভাবে পালন এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিস আদালতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁদের ছবি টানানো টাঙ্গানো এবং মাওলানা ভাসানীকে জাতির পিতা ঘোষণার জন্য বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের নিকট জোড় দাবি জানান ভাসানী ওসমানী স্মৃতি সংসদ সিলেটের নেতৃবৃন্দ। 

এলএইস/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ