সৈয়ব আহমেদ সিয়াম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামি শিক্ষা সংযুক্ত করার দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর ২০২৫) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি সংগঠন মাসউদুর রহমান ফাহাদের সঞ্চালনায় এই কর্মসূচির আয়োজন করেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আ. ন. ম আবদুল মাবুদ, ইসলামিক স্টাডিজের প্রফেসর ড. এনামুল হক মুজাদ্দেদী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. শহিদুল হক ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
আয়োজনে সংহতি জানিয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন চাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক মোনায়েম শরিফ, চাকসুর সহ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক জিহাদ আহনাফ, চবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ওবায়দুল্লাহ, চবিয়ান দ্বীনি পরিবারের নায়েবে জিম্মাদার মোঃ ফারুক হাসান, কওমী স্টুডেন্টস নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন, অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের আহবায়ক ফরহাদুল ইসলাম, বিআরএফ ইয়ুথ ক্লাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়ব আহমেদ সিয়াম, আপ বাংলাদেশ চবি শাখার সদস্য সচিব মঈন উদ্দীন চিশতী সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবিতে বলা হয়:
১. স্বতন্ত্র ধর্মীয় শিক্ষক পদ সৃষ্টি: দেশের ৬৬ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২ কোটি শিক্ষার্থীর জন্য দ্রুত 'ধর্মীয় শিক্ষক' নামে একটি স্বতন্ত্র পদ সৃষ্টি করে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অন্য ধর্মের শিক্ষক কর্তৃক ইসলাম শিক্ষা পাঠ অতিদ্রুত বন্ধ করতে হবে।
২. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম ও ২য় শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের পাশাপাশি নূরানী পদ্ধতিতে আরবি বর্ণমালা ও সহীহ কুরআন তেলাওয়াতের প্রাথমিক জ্ঞান বাধ্যতামুলকভাবে অন্তর্ভক্ত করতে হবে। বর্তমানে ইসলাম শিক্ষা ৩য় শ্রেণি থেকে দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের করআন শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা জীবনের প্রারম্ভেই সঠিক উচ্চারণে কুরআন পাঠের মৌলিক পাঠে পারদর্শী করা হলেও, ইসলাম শিক্ষা বইয়ে কুরআন শিক্ষা একটি ক্ষুদ্র অধ্যায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই শিক্ষার্থীদের বাস্তব দক্ষতা গড়ে তুলতে প্রমাণিত ও গ্রহণযোগ্য নূরানী পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র কুরআন শিক্ষা বিষয় প্রবর্তন করতে হবে।
৩. ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণীতে ইসলাম শিক্ষা থাকলেও এসএসসি ও এইচএসসিতে আর্টস, কমার্স ও সাইন্সের অন্তর্ভুক্ত নেই। সুতরাং বিভাগীয় সাবজেক্টেগুলো সাথে ইসলাম শিক্ষা সাবজেক্ট যুক্ত করতে হবে।
৪. আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বর্তমান সমাজে খুন, মারামারি, ধর্ষণ, ঘুষ ও চাঁদাবাজির মতো নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম মূল কারণ হলো মানুষের মধ্যে ইসলামী জ্ঞানের অভাব। অতএব, দেশের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সার্বিক অগ্রগতির স্বার্থে শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর মাধ্যমে নৈতিক, মানবিক ও আলোকিত সমাজ গঠন সম্ভব হবে।
৫. বর্তমানে দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম শিক্ষা কেবল ইসলামী স্টাডিজ বা আরবি বিভাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের পর্যাপ্ত সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের পাশাপাশি নৈতিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। তাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ স্টাডিস কোর্সের মত স্বতন্ত্র ইসলাম শিক্ষা কোর্স অপশনাল (ঐচ্ছিক) হিসেবে সংযোজন করতে হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ধর্ম চর্চার পথ সুগম করতে হবে।
৬. আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এক বছরের "Diploma in Islamic Studies" কোর্স চালু করতে হবে। এ ধরনের কোর্স বিশ্বের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান যেমন University of Oxford 3 International Islamic University Malaysia (IIUM)-এ সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ইসলাম সম্পর্কে জানার পথ সুগম হবে।
এলএইস/