সুদানে চলমান ভয়াবহ গণহত্যা, জাতিগত নিধন ও মানবতা বিরোধী অপরাধের আন্তর্জাতিক বিচারের দাবিতে আজ ঢাকা কলেজ মেইন গেট-এ 'হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স সোসাইটি, ঢাকা কলেজ'-এর উদ্যোগে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে সংগঠনের সদস্যবৃন্দসহ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং বিভিন্ন স্তরের সচেতন নাগরিকরা অংশ নেন।
রবিবার ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে সভাপতি হিসেবে সংগঠনের আহ্ববায়ক মুহাম্মদ ওমায়ের ও সংগঠনের সদস্য সচিব মারুফ রেজা মাসুম সহ অন্যান্যরা বক্তব্য দিয়েছেন।
বক্তব্যে মারুফ বলেন “সুদানের গণহত্যার বন্ধে আমরা অতিদ্রুত জাতিসংঘ সহ সমস্ত আন্তর্জাতিক মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ চাই। আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই বিশ্ব মানবতা কেন এখানে নিশ্চুপ তারা কালো বলে কি বিশ্ব মানবতা নিশ্চুপ? নাকি কালো বলে তাদের কোন অধিকার নেই? তাদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলা যাবে না। আমরা অতি দ্রুতই গণহত্যা বন্ধ চাই এবং এ গণহত্যা সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসির প্রতি উদার্ত আহ্বান জানাচ্ছি।” বক্তারা সকলেই 'র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস' (আরএসএফ) এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে 'ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা' হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
আর শেষে আহ্বায়ক মুহাম্মদ ওমায়ের' এর সভাপতির বক্তব্যে সুদানের বিশেষ করে দারফুর অঞ্চলের, ভয়াবহ পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:
১. গণহত্যা বন্ধের দাবি (Cessation of Genocide)
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সুদান সরকারের প্রতি অবিলম্বে আরএসএফ-কে ঠেকানোর জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আর একটি প্রাণও ঝরতে দেওয়া যাবে না! সুদানে চলমান জাতিগত নিধন ও মানবতা বিরোধী সকল অপরাধ এখনই বন্ধ করতে হবে।"
২. আন্তর্জাতিক বিচার ও দায়বদ্ধতা (International Justice)
গণহত্যার নির্দেশদাতা ও অপরাধীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ICC) বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়। দাবি করা হয়, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে এই গণহত্যার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করতে হবে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. মানবিক সহায়তা নিশ্চিতকরণ (Ensuring Humanitarian Aid)
যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে আটকে পড়া এবং বাস্তুচ্যুত ১ কোটিরও বেশি মানুষের জন্য দ্রুত নিরাপদ মানবিক করিডোর তৈরি করে খাদ্য, চিকিৎসা ও জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। জোর দিয়ে বলা হয়, মানবিক সাহায্যকে কোনোভাবেই যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
৪. নীরবতা ভাঙার আহ্বান (Call to Break Silence)
বিশ্বনেতা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে নিষ্ক্রিয়তা ভেঙে সুদানের পাশে দাঁড়ানোর এবং মানবতার পক্ষে কথা বলার আহ্বান জানানো হয়।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, "বিশ্ব আজ চোখ বন্ধ করে আছে কেন? আমাদের এই মানববন্ধন সেই বিশ্ব বিবেককে জাগানোর আহ্বান!"
তার বক্তব্য শেষে তিনি সংগঠনের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করেন যে, এই সম্মিলিত কণ্ঠস্বর সুদানের নির্যাতিত মানুষের কাছে পৌঁছাবে এবং আন্তর্জাতিক মহল দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
এলএইস/