শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৫


বিশ্ব-ইজতেমায় কেন যাবেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল আউওয়াল-আজ ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এবাবের বিশ্ব-ইজতেমা। আপনার কানে হয়তো সেই সংবাদ প্রতিনিয়ত যাচ্ছে। হয়তো ভাবছেন ইজতেমায় যাবেন কি যাবেন না। এই কনকনে শীতে বাড়ি-ঘরে থাকাটাই যেখানে মুশকিল সেখানে খোলামেলা ময়দানে, ওপরে চট, তেরপাল বা শামিয়ানা টানানো মাঠে কীভাবে থাকবেন। ইবাদাত-বন্দেগি তো বাড়িতে থেকেও করা যায় সেটার জন্য ইজতেমায় গিয়ে থাক-খাওয়া, ঘুম-গোসল, অজু-ইস্তিঞ্জাসহ নানা বিষয়ে কষ্ট করার কী দরকার? আরো নানান প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

সেসব দীনি ভাইদের বলব, একবার ভেবে দেখেন তো, কত মানুষ ঘর-বাড়ি ছাড়া শীত-বৃষ্টিতে ফুটপাতে পড়ে দিনাতিপাত করছে! পেটে খাবার নেই, গায়ে পর্যাপ্ত জামা নেই, কম্বল নেই, লেপ নেই, তোষক-জাজিমের কোনো ব্যবস্থা নেই , কী অসহায় অবস্থায় বাসস্ট্যান্ডে, রেলস্টেশনে বা রাস্তার ধারে শুয়ে রাত কাটাচ্ছে। ওরাও মানুষ। তারা সারাবছর কষ্ট করতে পারলে আমরা সারাবছর আরাম করে মাত্র তিন-চারদিন দীনের জন্য একটু কষ্ট করতে পারব না কেন? দয়াময় হাশরের মাঠে এসব অসহায়দের উদাহরণ টেনে দীনের ব্যাপারে আমাদের ত্যাগ-কোরবানির প্রশ্ন করলে উত্তর কী হবে।

সাহাবায়ে কেরাম দীনের জন্য বছরের পর বছর বাড়ি-ঘর, স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা, ভাই-বেরাদর, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, অর্থ-সম্পদ সব ছেড়ে কষ্ট করেছেন। অনাহারে-অর্ধহারে জীবন কাটিয়েছেন! অস্ত্র ধরে যুদ্ধ করেছেন! জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন দীনের জন্য। শ্রেষ্ঠমানব নবিকুল শিরোমণি আমাদের প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের জন্য কত কষ্ট করেছেন। কত গালি খেয়েছেন। কত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কত ঘাম ঝরিয়েছন! তায়েফের ময়দানে, উহুদের প্রান্তরে কত রক্ত দিয়েছেন! নবিজি সা. ও সাহাবায়ে কেরামদের রাযি.কষ্টের বিনিময়ে আজ আমরা ইসলাম পেয়েছি শ্রেষ্ঠ কিতাব পেয়েছি।

সুতরাং তাঁদের রেখে যাওয়া আমানত দীন-ধর্ম আজ হুমকির মুখে। ইহুদি-খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্রের কবলে। ইসলামকে ছিন্নভিন্ন করার জন্য, মুসলমানদের ছিড়ে ফেরে খাওয়ার জন্য, সারা দুনিয়ার তাগুতি শক্তি একাট্টা হয়ে কাজ করে যা”েছ। মুসলমানদের একতাকে নষ্ট করে দলছুট ছাগলের মতো করার প্রয়াসে হায়েনারা হন্যে হয়ে ফিরছে। বিশ্ব ইজতেমা সারা দুনিয়ার সকল মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক।

একতার নিদর্শন। প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমার গণজমায়েতের মাধ্যমে সারা দুনিয়ার সমস্ত তাগুতি শক্তিকে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়া হ”েছ যে, দুনিয়ার সকল মুসলমান এখনো ঐক্যবদ্ধ। ধর্মীয় ইস্যুতে তাঁরা অনড়-অবিচল। ধর্মকে তাঁরা জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। তাঁদের নবির রেখে যাওয়া দীন ও কোরআনের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। এখনো তাঁরা ধর্মগুরুদের ডাকে পাখির মতো জমায়েত হয়। আলেম-উলামাদের ব্যাপক শ্রদ্ধা করে। তাঁদের ইমানের পাওয়ারের সামনে কী শীত, কী গরম সব তু”ছ! তাঁরা আয়েসের জিন্দেগি চায় না। তাঁরা বাহাদুরির জীবন কামনা করে না। তাঁরা চায় আল্লাহর সš‘ষ্টি। রাসুলের সা. ভালোবাসা। দীন-ধর্মের উন্নতি। সুতরাং তাঁদের দমিয়ে রাখা যাবে না।

ধর্ম নিয়ে, কোরআন নিয়ে, নবিকে নিয়ে এখনো তাঁরা বহু সতর্ক। এই বার্তা বিশ্ব-ইজতেমা থেকে প্রতিবছর বিধর্মী শক্তির কাছে পৌঁছায়। সুতরাং ইজতেমা থেকে দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাছাড়া প্রতি বছর এখানে আসে পৃখিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় ওলি-আওলিয়ারা। তাঁদের কথা শুনা, সংস্রব গ্রহণ করা, তাঁদের মুখ থেকে দীনের দরদি ও মূল্যবান নসিহত শুনা, কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে নামাজ পড়া সবই গৌরব ও নিয়ামতের বিষয়।

ইজতেমার এই মাঠে কত খোদাপ্রেমির নয়ন থেকে অশ্রু ঝরেছে, কত আশেকে রাসুলের কদম পড়েছে, কত বুজুর্গানে দীনের দৃষ্টি পড়েছে, হিসাব নেই। সেখানে লাখ লাখ দীন দরদি ভাইদের সঙ্গে একত্রে থাকা, খাওয়া, উঠাবসা, রাতযাপন করা কত খুশ-নসিবের বিষয়। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার চরম পরীক্ষা চলে সেই ময়দানে। মানবতার উজ্জ্বল রূপ ফুটে ওঠে সেখানে। বয়ানের কী নরম, দরদমাখা ভাষা, হৃদয় কেড়ে নেয়। সর্বোপরি দীনের জন্য কোরবানি দেয়ার জজবা তৈরির সেটি একটি উপযুক্ত প্রান্তর।

তাই ইজতেমা থেকে সরে থাকা ঠিক হবে না। তিন-চারদিনের জন্য কাজ-কামের আর কী ব্যাঘাত ঘটবে? জায়গা-জমির মালিক যিনি, সময়ের মালিক যিনি, ফসলের মালিক যিনি, তিনি চাই সবকিছুতেই বরকত দিতে পারেন। তাই সকল ভয়-বাঁধা উপেক্ষা করে চলুন বিশ্ব-ইজতেমার মাঠে। চলুন মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত তুরাগ পাড়ে। বাড়িয়ে তোলুন মুসলমানদের একতা ও শক্তি। উপভোগ করুন ইসলাসের সৌন্দর্য। হাসিল করুন অশেষ নেকি।

লেখক: শিক্ষক, জামিয়া সিদ্দিকিয়া কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ।

-এসআর

 

 


সম্পর্কিত খবর